বিনোদন

ভালো গল্প দিয়ে বাজিমাত করেছেন বান্নাহ

‘করোনার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। পুরো টিম নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা মেনে কাজ করেছি। করোনার মধ্যেও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করে জয়ী হয়ে যতোটা প্রশান্তি পেয়েছি তার চেয়ে বেশি ভালো লেগেছে যখন নাটকগুলো দর্শকের ভালোবাসা পেলো। দর্শকের জন্যই কাজ করি। তারা যখন ভালো বলেন সেটা তৃপ্তি দেয়। সব কষ্ট ভুলে যাই’- করোনার ঝুঁকিতেও নাটক নির্মাণ ও দর্শকের রেসপন্স জানাতে গিয়ে এভাবেই বলছিলেন সময়ের আলোচিত নাট্য পরিচালক মাবরুর রশিদ বান্নাহ।

Advertisement

বেশ কয়েক বছর ধরেই এদেশের টিভি নাটকের নির্মাণে জনপ্রিয় নাম বান্নাহ। তারুণ্য নির্ভর কাজ করলেও বৈচিত্রময় সব গল্প ও চরিত্র দেখা যায় তার নাটকগুলোতে। বিশেষ দিবসগুলোসহ বছরজুড়েই আলোচনার টেবিলে উপরের দিকে থাকে তার নাটক। গেল কোরবানি ঈদেও বেশ কিছু নাটক প্রশংসা পেয়েছে। বান্নাহ ভাষ্যে, ‘করোনার কারণে গল্পে অনেক বাধ্যবাধকতা রাখতে হয়েছে। স্বাধীনভাবে যেখানে সেখানে শুটিং করতে পারিনি, গল্পের প্লট বিস্তৃত করতে পারিনি। তারপরও কাজগুলো দর্শক পছন্দ করার পজিটিভ ফিডব্যাক দিচ্ছে এটাই পরম শান্তির।

তাহসান খান ও সাফা কবিরকে নিয়ে বানানো রোমান্টিক-কমেডি নাটক ‘এ বিটার লাভ স্টোরি’-তে হিউজ সাড়া পেয়েছি। মোশাররফ করিম ও সায়লা সাবিকে নিয়ে ‘ব্যঞ্জনবর্ণ’ টিভিতে প্রচার হতেই ফিডব্যাক আসতে শুরু করে। ৭ বছর পর অ্যালেন শুভ্রকে নিয়ে ‘আমার অপরাধ কী’ নামের একটি নাটক বানিয়েছি। সঙ্গে মারজুক রাসেল ভাই ছিলেন। এ কাজটাও মানুষ দারুণ পছন্দ করেছে। তাহসান খান ভাই, মনিরা মিঠু আপার ‘মা আই মিস ইউ’ কাজটি গেল ঈদে অন্যতম একটি নাটক হিসেবে আলোচিত হয়েছে। জোভান-সাবিলার ‘ডেট রুম’ থেকেও খুব ভালো সাড়া পেয়েছি।’

এই নির্মাতা মনে করছেন, গেল ঈদে করোনার জন্য বাক্সবন্দী হয়ে কাজ করলেও শক্তিশালী গল্পের জোরে টিকে গিয়েছেন তিনি। অল্প কাজ দিয়েও নিজেকে এবং নিজের নাটকগুলোকে আলোচনায় আনতে পেরেছেন।

Advertisement

বান্নাহর সঙ্গে আলাপ হচ্ছিলো নাটক টিভি ও ইউটিউবে প্রচার হওয়া প্রসঙ্গে। টিভিতে ভালো নাটক প্রচার হলে তেমন আলোচনা হয় না! কিন্তু ইউটিউবে এলেই হৈ-চৈ পড়ে যায়। তারমানে নাটক কী এখন সত্যি অনলাইন কেন্দ্রিক? এমন প্রশ্ন ছুঁড়তেই বান্নাহ খানিকটা ভ্রু কুঁচকে জানান, ‘মনে হয় না। এবার ঈদে কিন্তু দর্শক টিভিতেেই বেশি নাটক দেখেছে। ব্যঞ্জনবর্ণের মতো নাটক টেলিভিশন রেটিং পয়েন্টে ১ নম্বরে। এটি দারুণ আশার কথা। গেল ঈদে আপনি লক্ষ করে দেখুন, শক্তিশালী গল্প নির্ভর কাজগুলোরই জয়জয়কার। সেগুলো ৯০ শতাংশই টিভিতে প্রচার হয়ে আলোচনায় এসেছে। দর্শক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিভিউ দিয়ে সেগুলো হিট করেছেন। পরে ইউটিউবেও তার প্রভাব পড়েছে। যারা টিভিতে দেখতে পারেননি তারাও আলোচিত নাটকগুলো দেখে নিয়েছেন। এটা এই ইন্ডাস্ট্রির সকল শুভাকাঙ্খীদের ভালো লেগেছে। যতই আমরা অনলাইন অনলাইন বলি না কেন, টিভির গ্রহণযোগ্যতা অনস্বীকার্য। অনলাইনের চাইতে ম্যাস ভিউয়ার্স টিভিতেই বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এটাই সত্য। টিভি টিভিই এটা ভুললে চলবে না।’

তবে এটাও বললেন বান্নাহ, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নাটক অনলাইনকেন্দ্রিক হচ্ছে মানতে হবে। গত দুই তিন বছরে ধরে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। আগে নির্দিষ্ট সময়ে শুধু টিভিতেই নাটক দেখা যেত বলে দর্শক আগ্রহ নিয়ে টিভির সামনে বসে থাকতো। এখন ইউটিউবে পাওয়া যাবে জেনে আর টিভির জন্য অপেক্ষা করে না অনেকে। কারণ, এখন সবারই সময়ের মূল্য বেশি। নির্দিষ্ট সময় ধরে নাটক দেখার কালচারটা অনেকটাই চলে গেছে। সেজন্য এমন কাজ করতে হবে যেন দর্শক ইউটিউবের অপেক্ষায় না থেকে টিভিতেই প্রথম চান্সে দেখার আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করবে।’

ভালো নাটক, খারাপ নাটক। এর বিশ্লেষণ বান্নাহর কাছে কেমন? তরুণ নির্মাতা জানালেন, ‘নাটকে অনেক শ্রেণির দর্শক রয়েছে। নির্মাতা হিসেবে আমি ব শ্রেণির দর্শকের জন্য নাটক বানাতে চাই। সব শ্রেণির দর্শকের চাওয়াকে মূল্য দেই। যে কাজটা একজনের ভালো লাগে না, ঠিক ওই কাজটা অন্য দুজন পছন্দ করে। ঠিক উল্টোটাও হয়। এজন্য আমার কাছে সবশ্রেণির দর্শকদের কাজ থাকে। নাটকের ভালো বা মন্দ আমি দেখি না। এটা দর্শকের উপর নির্ভর করে। বিভিন্ন শ্রেণির দর্শক বিভিন্ন রকম নাটকের পরিচয় বহন করেন।’

গেল কোরবানি ঈদে ইউটিউবের বাজার তুলনামূলক ছিলো মন্দার। বেশ কিছু ভালো কাজ প্রকাশ হলেও মার্কেটে ভিউ কম। বান্নাহ মনে করছেন, মানুষ এখন অনেক চাপের মধ্যে রয়েছে। করোনার কারণে বিপর্যস্ত জীবন। অনেকে চাকরি হারিয়েছে, শহর ছেড়েছে। মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হিমশিত খেতে হচ্ছে; অনেকেই শুধু খেয়ে বেঁচে থাকতে চাইছে। এমন অবস্থায় ইন্টারনেট কিনবে কিভাবে? ভিউ আসবে কীভাবে? মানুষের পকেটে টাকা নেই, ইউটিউবেও তাই অন্যান্যবারের মতো ভিউ নেই। প্রবাসী বা মধ্যপ্রাচ্যে নাটকের অগণিত দর্শক আছে। তারাও ভালো নেই। ওই অংশের অনেক দর্শক এবার মিস করেছে দেশীয় নাটকগুলো।

Advertisement

শোনা গেছে সম্প্রতি, চলচ্চিত্র নির্মাণে আসছেন বান্নাহ। তবে সে নিয়ে খুব দ্রুত খুশি হওয়ার মতো খবর দিলেন না এই পরিচালক। বান্নাহ বললেন, সিনেমা নিয়ে তার পরিকল্পনা ও আবেগ দুটোই রয়েছে। তবে সহসাই কোনো ঘোষণা আসবে না। সিনেমা বড় পরিসরের কাজ। এরজন্য প্রস্তুতি লাগে। সময় লাগে।

করোনাকাল কেটে যাবে। আবারও নতুন আলোয় হেসে উঠবে পৃথিবী। ধীরে ধীরে অবশ্যই আশার সেই আলো ফুটছে। নতুন এক সময়ে নতুন পৃথিবীতে আবারও ব্যস্ত হয়ে উঠবে সারাবিশ্বের শোবিজ। তার আগে সবাইকেই সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে বলে অনুরোধ জানালেন মাবরুর রশিদ বান্নাহ। নিজের পরিকল্পনা জানিয়ে তিনি বললেন, দেশে করোনা হানা দেয়ার পর টানা ১১৪ দিন ঘরে থাকার পর ঈদের আগে অনেক ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। এবার পরিবারের কথা ভেবে ঈদের কাজ শেষ করে দুমাস কাজে বিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার একমাস চলে গেল। বাকী এক মাসও কাজ করবেন না। করোনা পরিস্থিতি আরও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এল শুটিংয়ে ফিরতে চান এই নির্মাতা। আর সেসব শুটিংয়ে প্রতিষ্ঠিত তারকাদের পাশাপাশি নতুনদের জন্য বরাবরের মতো সুযোগ রাখবেন মাবরুর রশিদ বান্নাহ।

এলএ/এমকেএইচ