ধর্ম

সুসন্তান যেভাবে বাবা-মার মুক্তির উপায়

বাবা-মার জন্য সন্তান পৃথিবীর সেরা সম্পদ। সন্তান জন্মের পর বাবা-মা যেন চোখের সামনে স্বর্গ দেখে। সন্তানের প্রতি বাবা-মার হৃদয় নিংড়ানো আদর-সোহাগ ও ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। বাবা-মার জন্য নেক সন্তান পরকালের অমূল্য পূঁজি। তারা বাবা-মার নয়ন জুড়ানো শোভা। আল্লাহ তাআলা বলেন-

Advertisement

- ‘ধন, ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের অলঙ্কার-শোভা।’ (সুরা কাহাফ : আয়াত ৪৬)

এ সন্তান-সন্তুতি যেন বাবা-মা ও মুত্তাকি বান্দাদের জন্য আদর্শ হয়, সে জন্য কুরআনুল কারিমে রয়েছে দোয়া ও প্রার্থনা। বাবা-মা সন্তানের জন্য এভাবে দোা করবেন-

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

Advertisement

উচ্চারণ : রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াঝিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আইয়ুনিও ওয়াঝআলনা লিলমুত্তাক্বিনা ইমামা।’

অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর।’ (সুরা ‍ফুরকান : আয়াত ৭৪)

দুনিয়ায় নেক সন্তানদের মধ্যে হজরত মারইয়ামও ছিলেন একজন। যাকে দেখে বৃদ্ধ বয়সে হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালামের হৃদয়ে নেক সন্তান লাভের ঝড় ওঠে। তিনি আল্লাহর কাছে কাছে নেক সন্তান লাভে দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করে তাকে পবিত্র সন্তান দান করেছিলেন। তাইতো বাবা-মা নেক সন্তান লাভে এভাবে প্রার্থনা করবেন-

رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء

Advertisement

উচ্চারণ : ’রাব্বি হাবলি মিল্লাদুংকা জুররিয়্যাতান ইন্নাকা সামিউদ দোয়া।’

অর্থ : হে আমার প্রভু! তোমার কাছ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান কর। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ৩৮)

দুনিয়ার নেক সন্তানরাই বাবা-মার জন্য পরকালের সঞ্চয়পত্র। কেননা তারা দুনিয়াতে বাবা-মার সামনে যেমন বিনয়ী তেমনি বাবা মার জন্য তাদের মৃত্যুর পর এসব সন্তানরাই আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে দোয়া করে। কুরআনুল কারিমে তা এভাবে ওঠে এসেছে-

’তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল-

رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

উচ্চারণ : ‘রাব্বিরহামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’

’হে প্রভু! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াতে সন্তান-সন্তুতিদের জান্নাতের প্রজাপতির সঙ্গে তুলনা করছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের শিশুরা জান্নাতের প্রজাপতি। (বুখারি)

সন্তান-সন্তুতি বাবা-মার জন্য শুধু পরকালের সম্বল লাভের মাধ্যমই নয়, বরং দুনিয়ায় কল্যাণ ও রিজিক লাভের উপায়ও বটে। হাদিসে এসেছে-

‘তোমরা শিশুদের ভালোবাস এবং তাদের প্রতি দয়া কর। তাদের সঙ্গে কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে পূর্ণ কর। তাদের কল্যাণে তোমরা রিজিক পেয়ে থাক।’ (বুখারি-মুসলিম)

সন্তানকে যথাযথভাবে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। তবেই সন্তান হবে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভের অন্যতম মাধ্যম। কুরআন সুন্নাহের ঘোষণা অনুযায়ী সন্তান শুধু দুনিয়ার কল্যাণ নয় বরং পরকালেরও পুঁজি।

যারা পরকালে বিশ্বাস করে, কবর, হাশর, মিজান আর হাউজে কাওসারে পেয়ালায় বিশ্বাসী তাদের কাছে সন্তান পরকালের সঞ্চয়, পুঁজি। এ সন্তান পরম মায়া-মমতা ও ভালোবাসার ডানায় ভর করেই বাবা-মা পাড়ি দেব অনন্তকালের যাত্রা।

তাইতো বুদ্ধিমান সব মানুষের উচিত নিজ সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। ইসলামের সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়া। আর তাতেই সব বাবা-মা হবে সফল। হাদিসে এসেছে-

হজরত সাদ্দান ইবনে আওস বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি যে নিজেকে চিনতে পেরেছে এবং মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য কাজ করছে। আর সেই ব্যক্তি অসহায় যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণে জীবন পার করছে। কৃষক আদর-যত্নে ফসল বুনছে, মা-বাবা পরম যত্নে গড়ে তুলছেন সন্তানের ভবিষৎ। বিশ্বাসীরা নির্মাণ করে পরকালের রাজপ্রাসাদ।’

বাবা-মা যখন সন্তানকে দেখে তখন তারা মুগ্ধ হয়। আদর-যত্নে গড়া সন্তানের দিকে বারবার তাকায়। কেননা এ সন্তানই যে, তার মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য রাজপ্রাসাদ তৈরির অনন্য কারিগর। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মানুষ যখন মারা যায়, তখন তিনটি আমল ছাড়া সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। তাহলো- সদকায়ে জারিয়াহ, উপকারী ইলম বা জ্ঞান আর সুসন্তান, যে তাদের জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম)

সন্তানের দোয়া ও নেক আমলের অংশীদার হয় বাবা-মা। সুসন্তান রেখে যাওয়ার মানেই হলো বাবা-মার জন্য পরকালের অবিরত সঞ্চয়পত্র খুলে যাওয়া। এ নেক সন্তানের উসিলায় মৃত্যুর পর বাবা-মার নেক আমল চালু থাকবে। সুসন্তানই হবে পরকালের মুক্তির সর্বোচ্চ উপলক্ষ।

সুতরাং দুনিয়ার সব বাবা-মার উচিত, নিজেদের সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষায় গড়ে তোলা। সন্তানের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করা। যে শিক্ষা পেয়ে সন্তান হবে দুনিয়ার রিজিক প্রাপ্তি ও পরকালের মুক্তি লাভের অনন্য উপায়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নেক সন্তান দান করুন। সন্তানের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। এসব সন্তান-সন্তুতিকে পরকালের নাজাতের ওসিলা হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম