জাতীয়

অনলাইন জুয়া ‘শিলং তীর’ : হুন্ডির মাধ্যমে টাকা যাচ্ছে ভারতে

১৯৯০ সালে সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের শিলং ও গৌহাটি এলাকা থেকে চালু হয় ‘শিলং তীর’ নামের জুয়া খেলা, যা পরে নেত্রকোনা ও ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন এজেন্ট নিয়োগ করে পাতানো এই খেলায় সর্বস্বান্ত হচ্ছে জুয়াড়িরা। জুয়াড়িদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে চলে যাচ্ছে। শিলং তীর রাজধানীতে চালুর খবরে সক্রিয় হয় পুলিশ।

Advertisement

গত দুদিন অভিযান চালিয়ে ভারতীয় ‘শিলং তীর’ নামক এই অনলাইন জুয়া চক্রের চার বাংলাদেশি এজেন্টকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

গ্রেফতাররা হলেন- শামিম মিয়া (৩০), আব্দুল আলী (৩১), এরশাদ মিয়া (২৯) ও সোহাগ মিয়া (২৭)। তাদের কাছ থেকে ছয়টি মোবাইল, একটি রেজিস্টার খাতা, ১-৯৯ পর্যন্ত নম্বরবিশিষ্ট চারটি চার্ট সংবলিত ব্যবহৃত শিট এবং পাঁচটি অব্যবহৃত চার্ট সংবলিত শিট জব্দ করা হয়।

এ বিষয়ে গোয়েন্দা অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক বলেন, ১৯৯০ সালে সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের শিলং ও গৌহাটি এলাকা থেকে চালু হয় এই জুয়া খেলাটি। এরপর ধীরে ধীরে জুয়া খেলাটি ছড়িয়ে পড়ে সিলেটের বিভিন্ন প্রান্তে। সিলেটের অনেককে সর্বশান্ত করে জুয়াটি বিস্তার করে নেত্রকোনা জেলায়। নেত্রকোনা হয়ে শিলং তীর এবার রাজধানীতে পৌঁছে গেছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে তথ্য ও প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে গত ২৪ আগস্ট গুলশান থানার কালাচাঁদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে এজেন্ট শামিম ও আব্দুল আলীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যে গতকাল (২৫ আগস্ট) নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার থেকে অপর এজেন্ট এরশাদ ও সোহাগকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ভারতের শিলংয়ের জুয়াড়িরা বাংলাদেশে এজেন্ট নিয়োগ দেয়। বাংলাদেশি এজেন্টরা আবার বিভিন্ন এলাকায় তাদের সেলসম্যান নিয়োগ করেন। এই সেলসম্যানদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ধরণের লোভ দিয়ে ভয়ানক শিলং তীর নামক জুয়ায় আসক্ত করে সর্বশান্ত করেন। ভারতের শিলংভিত্তিক ওয়েবসাইট (WWW.TEERTODAY.COM) ব্যবহার করে। ওয়েবসাইট হতে প্রাপ্ত ১ হতে ৯৯ পর্যন্ত নম্বরগুলো বিক্রি করে।

ওয়েবসাইট হতে প্রাপ্ত নম্বরগুলো যারা কেনে, তাদের সাথে সেলসম্যানরা যোগাযোগ করেন। তখন জুয়াড়িরা সেলসম্যানের কাছে নম্বর ও বিভিন্ন অংকের টাকা দেয়। সেলসম্যানরা বিক্রিত এই নম্বরের বিপরীতে টাকা এজেন্টের কাছে দেয়। ভারতের শিলংয়ে রোববার ব্যতীত সপ্তাহের ৬ দিন বাংলাদেশ সময় সোয়া ৪টায় এই জুয়া খেলার ড্র অনুষ্ঠিত হয়। ড্রতে ১ হতে ৯৯ এর মধ্যে একটি নম্বর বিজয়ী হয়। যারা ওই নম্বরটি ক্রয় করে তারা বিজয়ী হিসেবে গণ্য হয় এবং বিজয়ীরা নম্বরের ক্রয়মূল্যের ৮০ গুণ টাকা এজেন্টের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ জুয়াড়ি বিজয়ী হতে না পেরে তাদের পুঁজি হারিয়ে ফেলে। জুয়াড়ি, সেলসম্যান ও এজেন্টের মধ্যে সমস্ত লেনদেন সম্পন্ন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

তিনি আরও জানান, সেলসম্যানরা জুয়াড়িদের কাছ থেকে সংগৃহীত টাকা থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন রেখে বাকি টাকা ঢাকার এজেন্ট শামিম ও আব্দুল আলীর কাছে পাঠায়। এরপর শামিম ও আলী তাদের কমিশন রেখে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নেত্রকোনার এজেন্ট এরশাদ ও সোহাগের কাছে পাঠায়। নেত্রকোনা থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা চলে যায় সিলেটের জাফলংয়ে। জাফলং থেকে টাকা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতের শিলংয়ে চলে যায় বলে জানা যায়। এভাবে প্রতিদিন এই চক্রটি সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে বুধবার (২৬ আগস্ট) আদালতে পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

জেইউ/এমএসএইচ/এমকেএইচ