বিনোদন

সময়কে দোষ দিয়ে নাটক সিনেমাকে খারাপ বলা ঠিক না : আসাদ

আসাদুজ্জামান মোহাম্মদ রাইসুল ইসলাম। এ নাম বললে কেউ তাকে চিনবেন না। তবে রাইসুল ইসলাম আসাদ বললেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে মায়াবী চোখের, শক্ত পেটা গড়নের এক সুপুরুষ অভিনেতার মুখ। যার অভিনয় যুগ যুগ ধরে মুগ্ধ করে রেখেছে বাংলার দর্শক।

Advertisement

মঞ্চ দিয়ে শুরু৷ তারপর বেতার, টিভি ও সিনেমায় এসেছেন, আলো ছড়িয়েছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়িয়েছেন অভিনেতা হিসেবে। পদ্মা নদীর মাঝি, লালন, ঘুড্ডি, কীত্তনখোলা, লালসালু, মনের মানুষ ইত্যাদি ছবি দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। এই মুক্তিযোদ্ধা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য চারবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন।

বর্তমানে করোনাকালীন সময়টাতে তিনি অবস্থান করছেন নিজ গৃহে। জাগো নিউজের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় জানালেন, সর্বশেষ মার্চ মাসে শুটিং করেছেন। এই মুহূর্তে শুটিং করার চিন্তা ভাবনা করছেন না। বিস্তারিত লিখেছেন অরণ্য শোয়েব-

জাগো নিউজ : কেমন আছেন ?রাইসুল ইসলাম আসাদ : এখন পর্যন্ত ভালো আছি। বাসার বাইরে যাচ্ছি না। তাই হয়তো বেঁচে আছি এতটুকু বলতে পারি।

Advertisement

জাগো নিউজ : ঘরে সময় কাটছে কি করে ?রাইসুল ইসলাম আসাদ : বাসায় আছি। আর বাসায় থাকতে আমার তেমন কোনো সমস্যা হয় না। অনেককিছুই পেয়ে যাই করার মতো। মাঝে তিন বছর খুব অসুস্থ ছিলাম। তারপর থেকেই তো নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছি এবং কাজ ছাড়া বের হই না। অভ্যাস হয়ে গেছে। বাসায় ব্যায়াম করছি, বই পড়ছি। টেলিফোনে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। গানবাজনা, নাটক-সিনেমা দেখছি। পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। সব মিলিয়ে চলে যাচ্ছে দিন।

জাগো নিউজ : সবশেষ ব্যস্ততা কি ছিল ?রাইসুল ইসলাম আসাদ : (অনেকক্ষণ ভেবে) যতদূর মনে পরে 'অপারেশন সুন্দরবন' সিনেমার শুটিং করেছি বিরতির আগে। সুন্দরবনে গিয়েছিলাম। মার্চের শুরুর দিকে শুটিং করেছিলাম এই সিনেমার। এরপরে আর কোনো কাজ আমি করিনি। করোনা শুরু হয়ে গেল।

জাগো নিউজ : শুটিং তো শুরু হয়েছে আবার। পুরোদমেই বলা চলে। আপনি ফিরবেন কবে?রাইসুল ইসলাম আসাদ : না। এখন পর্যন্ত শুটিং শুরু করবো না বলেই ভাবছি। আর তেমন কাউকে শিডিউলও দেয়া হয়নি আমার। দিবো কি করে, কাজই তেমন হচ্ছে না এই করোনা ভাইরাসের কারণে।

জাগো নিউজ : করোনার আগেও পর্দায় আগের চেয়ে উপস্থিতি অনেক কম আপনার। কারণ কি ?রাইসুল ইসলাম আসাদ : আমি তো কখনই ব্যস্ত ছিলাম না। যখন একসঙ্গে সিনেমা নাটক মঞ্চ বেতারে কাজ করেছি তখনও অতো ব্যস্ত ছিলাম না। ফুরসত সবসময়ই ছিলো। একটা সময় তো অনেক চ্যানেল হয়ে গেলো। টেলিফিল্ম এবং এক ঘন্টার নাটক হচ্ছে অনেক বেশি। তারপরেও বুঝেশুনে কাজ করার চেষ্টা করেছি। এখন বয়স হচ্ছে, এ বয়সের শিল্পীদের কাজ এমনিতেই কমে আসে।

Advertisement

জাগো নিউজ : নাটকে অনেক চরিত্র হারিয়ে যেতে বসেছে। যদি বলি কেন্দ্রীয় চরিত্রের পাশাপাশি পার্শ্বচরিত্রগুলো কমে গেছে। এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। আপনি এটিকে কীভাবে দেখেন?রাইসুল ইসলাম আসাদ : পার্শ্বচরিত্র থাকতে হবে এমন কি কোনো ফর্মুলা আছে? আছে কোনো ফর্মুলা? সবাই বলে আগে এমন ছিল যেটি এখন নেই। আমি কিন্তু এটা বিশ্বাস করি না। আমরা বাঙালিরা এটা সব সময় বলি যে 'আগের দিন ভালো ছিল এখনকার দিন খুব খারাপ'। আসলে এই কথাটি আমার মাথায় ঢুকে না। ছোটবেলা শুনেছি বাবা দাদারা বলতো 'ব্রিটিশকাল ভালো ছিল'! তারা শুনেছে মোঘলকাল ভালো ছিলো। আমার প্রশ্ন ব্রিটিশ বা মোঘল কোন কালটা আসলে বেশি ভালো ছিলো? বা আগে ভালো ছিল এখন খারাপ কেন? সবকালই ভালো। কিছু ভালো থাকে, কিছু মন্দ। মিলিয়েই। আগে নাটকের দর্শক একরকম ছিলো, মার্কেট একরকম ছিলো। এখন আরেক রকম। সময় যা চায় তাই হবে। হচ্ছে। শুধু সব খারাপ এটিতে আমি বিশ্বাসী না। তাছাড়া সময়কে দোষ দিয়ে নাটক সিনেমাকে খারাপ বলা ঠিক না।

জাগো নিউজ : বর্তমানে নাটকের মান নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তোলেন.....রাইসুল ইসলাম আসাদ : আগেই বলেছি আমি, আগে ভালো ছিল এখন খারাপ এটিতে আমি বিশ্বাসী না।যখনকার যে সময় যখনকার যে অবস্থা-ব্যবস্থা তখন সেইভাবে কাজ হয়। সময় বদলায়। সাথে কাজের ধরন বদলায়। প্রশ্ন সবসময় থাকে। আমাদের শুধু এটুকু মনে রাখতে হবে সব কাজের ভালো এবং খারাপ দুটোই রয়েছে।আমার মনে হয় প্রশ্ন না করে কাজটি দেখলে এতো সমস্যা হয় না। আগে আমাদের কাজ ছিল কম, শুধু বিটিভিতে। একটা সময় নাটক হতো মাসে চারটি বা পাঁচটি। তারপরে শুরু হলো সাহিত্য গল্প থেকে নাটক। তারপর শুরু হলো সিরিয়াল। এই ছিল কাজ এবং আর কোনো চ্যানেল ছিলো না। কাজ কম হতো তবে এর মধ্যে ভালো কাজ হতো। আবার খারাপ কাজও হতো কিছু। সবই যে ভালো হয়েছে তা বলা যায় না। এখন কাজ বেড়েছে। তার ভিড়ে ভালো-খারাপ দুটোর সংখ্যাই বেড়েছে।

জাগো নিউজ স্পেশাল : এ প্রজন্মের কোন অভিনেতা-অভিনেত্রীর কাজ আপনার ভালো লাগে?রাইসুল ইসলাম আসাদ : অনেকেরই কাজ ভালো হচ্ছে।সব অভিনেতার সব কাজ আমার ভালো লাগে না। তবে কিছু কিছু কাজ আমার ভালো লাগে। নাম নেবো না৷ অনেকের কাজ দেখেই আরাম পাই। আবার সবার মধ্যেই কম আর বেশি ঘাটতিও দেখি। এটাকে খারাপ বলা যাবে না। কারণ একটি সময় গিয়ে দেখা যায় ঘাটতিটা চলে যাচ্ছে। শিল্পী ক্রমেই নিজেকে উন্নতির পথে নিয়ে যায়। আমাদের এ প্রজন্মের শিল্পীরাও নিশ্চয় আরও পরিণত হবেন।

এলএ/পিআর