দেশজুড়ে

অবশেষে দুই শহীদের কবর খুঁজে পেলেন স্বজনেরা

৪৪ বছর পর অবশেষে মুক্তিযুদ্ধে দুই শহীদের কবরের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে তাদের পরিবার। শহীদের কবরের সামনে আবেগ-আপ্লুত শহীদ পরিবারের সদস্যরা। তাদের চোখের পানি সেখানে কিছু সময়ের জন্য নিঃস্তব্দ করে রাখে। মনে হচ্ছে শহীদ পরিবার নয়, কেমন এক আজানা আবেগে কাঁদছে বাংলাদেশ।শনিবার বিকেল ৪টায় ওই দুই শহীদ পরিবারের সদস্যরা দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার দশমাইলে শায়িত মুক্তিযুদ্ধের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ল্যান্স নায়েক মোস্তাফিজুর রহমান ও হাবিলদার মিয়া হোসেনের কবরস্থানে আসার পর হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এ সময় এই দুই বীর শহীদকে বীরশ্রেষ্ট খেতাব প্রদানের দাবি জানিয়েছেন দুই শহীদ পরিবারের সদস্যরা।৭১’র ১২ এপ্রিল স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন দিনাজপুরের দশমাইল এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতার পক্ষে তৎকালীন ইপিআরের একটি বিদ্রোহী দল অবস্থান নিলে হানাদারদের কামানের একটি গোলা সেখানেই শহীদ হন। পরে স্থানীয় লোকজন সেখানেই রাস্তার পাশে একটি বাড়ির পিছনে গর্ত খুঁড়ে দু’জনকে একসঙ্গে দাফন করে। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বিডিআরের পক্ষ থেকে কবরটি পাকা করা হয়।ঠিকানা খুঁজে বের করার মতো এই প্রশংসনীয় কঠিন কাজটি করেছেন চট্টগ্রাম বিনিয়োগ বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মাহবুব কবির মিলন। মাহবুব কবির মিলন জানান, এই দুই বীর শহীদের পারিবারিক ঠিকানা দিনাজপুরের প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা এবং দিনাজপুরের বিজিবি দফতরে তাদের ঠিকানা বিষয়ে কোনো রেকর্ড নেই।সম্প্রতি বিজিবির সদর দফতর পিলখানার রেকর্ড অফিস থেকে তাদের পারিবারিক ঠিকানা বের করেন মাহবুব কবির। ল্যান্স নায়েক মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা ইউনিয়নের উত্তর বাটমারা গ্রাম। পিতার নাম সফিউর রহমান। পিতা-মাতা অনেক আগেই মারা গেছেন। এখন শুধু এক ভাই ও এক বোন বেঁচে আছেন।হাবিলদার মিয়া হোসেনের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার খলিশাউর ইউনিয়নের গৌরকান্দা গ্রামে। মিয়া হোসেনের স্ত্রী ও এক ছেলে বেঁচে আছেন। আজ ৪৪ বছর পর দুই শহীদ পরিবারের সদস্যরা কবরে আসলেন এবং আত্মার মাগফেরাত কামনা করলেন।বিকেলে দশমাইল মোড়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কোরানখানি, মিলাদ মাহফিল ও স্মৃতিচারণ করা হয়। এ সময় হাবিলদার মিয়া হোসেনের স্ত্রী শামসুন নাহার বলেন, আমার স্বামী দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। এই গর্বে বেঁচে আছি। এতো কেউ আমাদের খবর রাখেনি। আজকে আমার স্বামীর শেষ ঠিকানা দেখতে পেয়ে নিজের কাছে অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছি। তিনি আর বেঁচে নেই।শহীদ ল্যান্স নায়েক মোস্তাফিজুর রহমানের ছোট ভাই মো. হুমায়ুন কবির জানান, ভাইয়া দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। আমার অহংকার দেশ মাতৃকার যুদ্ধে আমার ভাই রক্ত দিয়েছেন। জীবন দিয়েছেন। আমরা শুধু আশা করবো সরকার যেন এই দুইজনকে শহীদের সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রদান করেন। ব্যক্তিগতভাবে আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই আমাদের।স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল জানান, শহীদ পরিবারের দাবি বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়ে জোর তৎপরতা অব্যাহত রাখবো। যারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন তাদের পরিবারের পাশে জাতির জনক কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। আওয়ামী লীগ আছে। আমরা তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করতে পারবো না। কিন্তু তাদের পরিবারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে প্রস্তুত।এমদাদুল হক মিলন/বিএ

Advertisement