জাতীয়

খেলতে এসে পড়তে এসে এখন তারা পেশাদার প্রতারক

খেলোয়াড় হিসেবে নাইজেরিয়ার নাগরিক মরো মহাম্মদ, মরিসন দেশে এসেছিলেন ৩০ দিনের ভিসায়। এই সময়ে তারা বাংলাদেশের একটি স্বীকৃত ফুটবল ক্লাবের হয়ে খেলেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তারা আর নাইজেরিয়া ফেরেননি। বরং আট বছর ধরে অবৈধভাবে বাংলাদেশেই অবস্থান করে জড়িয়ে পড়েন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।

Advertisement

ফেসবুকে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত চার বিদেশিকে (নাইজেরিয়া ও ঘানার নাগরিক) মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর দক্ষিণখানের কাউলা ও ভাটারার বসুন্ধরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের একটি বিশেষ টিম। এতে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজিব ফরহান। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ছয়টি ল্যাপটপ, বেশকিছু সিম এবং ছয়টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

সিআইডির দাবি, গ্রেফতারদের মধ্যে আট বছর আগে খেলোয়াড় হিসেবে আসা মরো মহাম্মদ ও মরিসনও রয়েছেন। বাকি দুই ঘানার নাগরিক সিসম ও অ্যান্থনি এসেছিলেন চার বছরের স্টুডেন্ট ভিসায়। তাদের কেউই ভিসার মেয়াদ বাড়াননি।

বুধবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘গ্রেফতারদের দ্বারা প্রতারণার শিকার একজন ভিকটিমের অভিযোগের সূত্র ধরে সিআইডি তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তারা অভিনব কায়দায় সাধারণত বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব তৈরি করেন। বন্ধুত্বের একপর্যায়ে একটি তথাকথিত মেসেঞ্জার আইডি থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসহ পার্সেল উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দেন। পরে এসব গিফট বক্সে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে বলে তারা ভিকটিমকে অবহিত করেন এবং তা কাস্টমস থেকে রিসিভ করতে বলেন।’

সিআইডির পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরা আরও বলেন, ‘এ সময় তাদের অন্য সহযোগীদের মাধ্যমে কাস্টমস কমিশনার পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে মূল্যবান গিফটি গ্রহণসহ শুল্ক বাবদ মোটা অংকের টাকা কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পরিশোধের জন্য চাপ দেন। গিফটি রিসিভ না করলে আইনি জটিলতার ভয়ও দেখান। ফলে ভিকটিম তাদের দেয়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫৫ হাজার টাকা জমা দেন।’

একইভাবে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে সারাদেশে অসংখ্য ভিকটিমের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা গত কয়েক মাসের মধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে মর্মে সিআইডি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়েছে। গ্রেফতার বিদেশিরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে এ ধরনের প্রতারণা করে আসলেও এদেশে তাদের অবস্থানের বৈধ কোনো কাগজপত্র এবং পাসপোর্ট দেখাতে পারেননি।

প্রথমত তারা ট্যুরিস্ট, খেলোয়াড়, বিজনেস ও স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে পরে স্থানীয় কিছু এজেন্টের সহায়তায় এ ধরনের প্রতারণা করে আসছিলেন।

Advertisement

এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বল্পমেয়াদি ভিসায় আসা আফ্রিকানদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও প্রতি বছর তারা কী করে বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন তা খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে সিআইডি এসবির (পুলিশের বিশেষ শাখা) সঙ্গে আলোচনা করবে। কারণ ইমিগ্রেশন বিভাগ এসবির অধীনে।

গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি মামলা করেছেন।

জেইউ/এসআর/এমকেএইচ