করোনার কারণে অনেকের চাকরি চলে যাচ্ছে। আমাদের অনেক শিক্ষিত যোগ্য প্রার্থী যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাবে না। এ দায় পুরোটা শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি অথবা শিক্ষার মানকে দেয়া উচিত নয়। কারণ কর্মসংস্থান আর্থ-সামাজিক অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে । এই অঞ্চলের মানসম্মত শিক্ষা অর্জনকারী ও মেধাবীদের বেকার থাকার গল্প নতুন নয়। বরিশালে জন্মগ্রহণকারী অক্সফোর্ডের ইতিহাসবিদ ড. তপন রায়চৌধুরী (১৯২৬-২০১৪) তাঁর 'বাঙালনামা'য় লিখেছেন "বিশ এবং ত্রিশের দশকে (১৯১০-৩০) বেকার সমস্যা কি ভয়াবহ ছিল তা আমাদের স্মৃতি থেকে প্রায় মুছে গেছে।
Advertisement
বিএ এবং এমএ তে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েও অর্থনীতিবিদ ড. ভবতোষ দত্ত প্রায় সাত-আট বছর বেকার ছিলেন। নীরদ চৌধুরী মশায়ের জীবনের বেশ ক'বছর কেটেছে দৈনিক এক টাকা রোজগারে। " তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান শেলী(১৯২৮-২০১৪) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ রেজাল্ট করেও চাকরি না পেয়ে প্রতিবাদস্বরূপ জুতা পলিশের কাজ শুরু করেছিলেন। চলতি বাজারে চাকরি দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় অনেকেই ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা কালেও গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে নতুন ব্যবসা শুরুর আবেদন পড়েছে ৬৭,১৬০ টি, যা ২০১৯ সালের একই সময়ের সাত দিনের চেয়ে ২১শতাংশ বেশি। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক Robert Fairly চাকরি দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় ব্যবসা শুরু করারকে অনন্যোপায় উদ্যোক্তা বা ঠেকায় পড়ে উদ্যোক্তা (Necessity Entrepreneurship) হিসাবে অবহিত করেছেন। নির্দিষ্ট বেতনে নিরাপদ চাকরির সুযোগ না থাকাই এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা হওয়ার অন্যতম প্রেরণা। তবে এসকল উদ্যোক্তাদের অনেকের মনেই হয়তো শ্রমিক (বেতনভুক্ত কর্মচারী) না হয়ে মালিক হওয়ার সুপ্ত বাসনা ছিল। আর যারা সদ্য চাকরি হারিয়েছেন তারাতো তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই ফিরেছেন, 'বড় শ্রমিক (বেশি বেতনের চাকরি) হওয়ার চেয়ে ছোট মালিক হওয়াও অনেক ভালো'। স্বাধীনভাবে কাজ করা যায়, আত্মমর্যাদা ও স্বকীয়তা নিয়ে থাকা যায়, নিজের সৃজনশীলতাকে পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করা যায়,ইত্যাদি ইত্যাদি ।
তাছাড়া চাকরি করতে গিয়ে তাদেরতো কিছু বাস্তব কর্ম অভিজ্ঞতাও হয়েছে , এটাকে কাজে লাগাতে চায়। বিদেশে অনেকেই কৃষি খামারে কাজ করে দেশে ফিরে এসে পশুপালন, মৎস্য খামার, ফল চাষ, ছাগল বা ভেড়ার খামার, টার্কিশ বা উট পাখির খামার, এমনকি খেজুর অথবা ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তুলছেন। যারা বিভিন্ন দেশে হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজ করে ফেরত এসেছেন তারা নিজ এলাকায় বা শহরে রেস্টুরেন্ট খুলছেন। করোনার কালে লকডাউন, আইসোলেশন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে কর্মব্যস্ততা কমে যাওয়ায় চিন্তা করার (brain storming) বেশি সময় পাওয়া গেছে। যার মাথায় বা অভিজ্ঞতায় যে ধারণা ছিল সে সেটা নিয়েই ব্যবসায় নামার চেষ্টা করছে । এদের সবাই ব্যবসায় টিকে থাকবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে এদের মধ্যেই অনেকের সফল ব্যবসায়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
Advertisement
বিশ্বের অনেক ব্যবসায় সফল কোম্পানির জন্ম সঙ্কটকালে। মার্কিন অর্থনীতির ১৯০৭ সালের আতঙ্কজনক অর্থনৈতিক সংকটের টালমাটাল অবস্থায় ১৯০৮ সালে জেনারেল মোটর কোম্পানি যাত্রা শুরু করে। Burger King এর উদ্বোধন করা হয় ১৯৫৩ সালের মন্দার মধ্যে। CNN সম্প্রচার শুরু করে ১৯৮০ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ১৫ শতাংশ। Uber ও Airbnb তাদের ব্যবসা শুরু করে ২০০৭-৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট চলাকালে । ওয়াশিংটনভিত্তিক Bipartisan Policy Center এর ফেলো Dane Strangler এক গবেষণায় দেখিয়েছেন বিশ্বসেরা এবং দীর্ঘদিন যাবত টিকে থাকা অনেক কোম্পানিই অর্থনৈতিক পড়তির সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । অর্থনৈতিক কঠিন সংকটের কালে জন্ম হওয়ায় এই সকল কোম্পানি ভবিষ্যতের কঠিন-কঠোর পরিস্থিতি মোকাবেলায় দৃঢ়তা এবং ক্ষিপ্রতা অর্জন করে।
সংকট মোকাবেলার হার্ড (HERD) ইমিউনিটি নিয়েই এদের জন্ম। মন্দার সময় ব্যবসায়ের জন্য অর্থসংস্থান করা খুব কঠিন এবং এই সময়ে ভোক্তাদের চাহিদাও কম থাকে। বিশ্বব্যাংকের প্রাক্কলন হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি ২০২০ সালে ৫.২ শতাংশ সংকুচিত হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতিতে কখনোই এত বড় সংকট আসেনি। বাংলাদেশের অর্থনীতি সরকারি হিসাবেই গতবছর প্রায় ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, বেসরকারি হিসাবে এই সংকোচনের পরিমান পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি। অতএব আগামী বছরগুলোতে চাকরির বাজার খুবই মন্দা থাকবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। অনেকের জন্যই নিজস্ব ব্যবসায় শুরু করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। ইতিহাস থেকে দেখা যায় অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যেও সফল ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্ম হতে পারে। তবে ব্যবসা শুরু করার আগে কি ব্যবসায় করবেন সেটা তিন বার ভাবুন, কিন্তু একবার সিদ্ধান্ত নিলে আর বিলম্ব করবেন না।যারা নতুন করে ব্যবসায় শুরু করতে চাচ্ছেন তাঁদের প্রথম কাজ হচ্ছে নিজের একটা নৈপুণ্য (skill) কে তাঁর নতুন ব্যবসায়ের মূল শক্তি হিসেবে নির্বাচন করা। এটা ঠিক করতে পারলে দ্রুত শুরু করুন এবং সবচেয়ে কম টাকা দিয়ে শুরু করুন। মন্দার সময় সবকিছু দ্রুত শিখতে পারলেই টিকে যাবেন। নতুন ব্যবসায়ীদের মনে রাখতে হবে বাজারের একটা খন্ডাংশের (segment) নির্দিষ্ট একটি নিড নিয়েই কাজ শুরু করতে হবে। সবাইকে সন্তুষ্ট করা যাবে না। সবাইকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করলে কাউকেই সন্তুষ্ট করা যাবে না।
(আমার এক দাদী কোন বিয়ে বাড়িতে গেলে কনের কানে কানে বলে আসতেন, "শ্বশুরবাড়িতে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে যেও না, কখনো পারবে না। বাছাই করে সন্তুষ্ট করবে। প্রথমে বুঝে নেবে শ্বশুরবাড়িতে কোন দুইজন সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী বা শক্তিশালী। প্রথমে গিয়ে ওই দুজনকে হাত করবে। আরেকজনকে (বরকে) হাতে নিয়েইতো শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছ। তিন জনকে হাতে নিতে পারলেই পুরো শ্বশুরবাড়ি তোমার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে"। দাদির এই পরামর্শটি আমার মনে ধরেছিল। আমার এক ছাত্রীকে তার প্রেমিক বন্ধুটিকে বিয়ের আগে আমিও এই পরামর্শ দিয়েছিলাম। বিয়ের কয়েক মাস পরে সে আমার কাছে এসে অভিযোগ করল তার শ্বশুরবাড়িতে খুবই অশান্তি হচ্ছে। আমি বললাম, কেন? তুমি আমার পরামর্শ মত কাজ করো নাই ? সে বলল, "স্যার, আপনার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেছি। ওই বাড়িতে গিয়েই শ্বশুর-শাশুড়ি দুইজনকেই আমার হাতে নিয়ে এসেছি"। বললাম, তাহলে সমস্যা কি? "স্যার, সমস্যা হচ্ছে যেটাকে(বর) হাতে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে ঢুকেছিলাম সেইটাই এখন নড়াচড়া শুরু করেছে")।
সব ক্রেতার দিকে নজর দেয়া যাবে না। একই পণ্য 'সবাই কিনুন', 'সবার জন্য' -এটা বলা ফলদায়ক হবে না। কেউ যদি সারাদিন ঢাকার রাজপথে মাইকিং করে, "আমি তোমাদের ভালোবাসি" "আমি তোমাদের ভালোবাসি', এতে কোনো সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কাউকে ভালোবেসে যদি গালমন্দ, এমনকি জুতাপেটাও(সাড়া) খেতে চায় তাহলেও প্রেমিককে বলতে হবে, " . . . (প্রেমিকার নাম), আমি তোমাকে ভালোবাসি"। তাহলেই কেবল একটা সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটাকে Michael Porter ফোকাস (Focus)স্ট্র্যাটেজি বলেছেন। ধরা যাক অতি চালাক কেউ একজন ঢাকার সদরঘাট এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টের ব্যবসায় শুরু করতে যাচ্ছে এবং রেস্টুরেন্টের নাম দিল "হোটেল ধনী-গরীব আনলিমিটেড"। (বাংলাদেশ রেস্টুরেন্টকে হোটেল বলতেই মানুষ বেশি পছন্দ করে)। তার প্রত্যাশা হচ্ছে সদরঘাটে যত লোক লঞ্চ থেকে নামবে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই তার হোটেলে খাবে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিবে এই হোটেলে গরিবরা ঢুকবে না। কারণ হোটেলের নামের প্রথমেই ধনীদের কথা বলা আছে , অতএব এই হোটেল ধনীদের জন্য এবং বেশ ব্যয়বহুল হবে। একইভাবে ধনীরাও ঢুকবে না এই ভেবে এটা বোধহয় গরিবের হোটেল, খাওয়ার মান তেমন ভালো হবে না। অতএব হোটেলটি ক্রেতাশূন্য থাকার সম্ভাবনা আছে। এক্ষেত্রে যেকোনো একদিকে যেতে হবে। এক্ষেত্রে হোটেলের নাম দিতে হবে "হোটেল ডাল ভাত" অথবা "হোটেল গরীবে নেওয়াজ লিমিটেড"; অথবা "Hotel Aristocrat" অথবা "হোটেল ভোজন বিলাস" । তাহলেই ধনী এবং গরীবরা তাদের জন্য নির্ধারিত হোটেল চিনে নেবে। ট্রাফিক আইনের মতো রাস্তার যেকোনো এক পাশ ধরে হাঁটতে হবে। মাঝখান দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করলে নির্ঘাত গাড়িচাপায় মৃত্যু।
Advertisement
সবচেয়ে কম খরচে ব্যবসা করতে হবে (Overall Cost Leadership)। এই কৌশলটিও হার্ভার্ডের অধ্যাপক Porter এর কাছ থেকে এসেছে। আমি মনে করি অন্তত এই কৌশলটি ভারতবর্ষ থেকে আমেরিকায় গিয়েছে । কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বলা আছে, "বেচার সময় লাভ করা যায় না, কেনার সময় লাভ করতে হয়"। পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারে দাম নিয়ে খুব বেশি হেরফের করা যাবে না। ইদানিং ঢাকা শহরে মাছ বাজারেও এক দামে মাছ বিক্রি হয়। নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে পাঁচজন মাছ বিক্রেতা চিংড়ি মাছ বিক্রি করে। একটা নির্দিষ্ট সাইজের চিংড়ির প্রত্যেক দোকানে একই দাম থাকে। এক পয়সাও দাম কমায় না। কমাতে বললে মাছ দোকানদার তার বসার চৌকির দিকে তাকাতে বলে। তার বসার চৌকির কাঠের মধ্যে লাল এনামেল পেইন্ট দিয়ে লেখা আছে, "এক দাম"।
একটা নির্দিষ্ট সাইজের চিংড়ি যদি পাঁচশত টাকা কেজি হয়, আর সব বিক্রেতা যদি একই দামে বিক্রি করে, তাহলে কে বেশি লাভবান হবে? নিশ্চয়ই মানিকগঞ্জ বা মুন্সিগঞ্জ থেকে চিংড়ি মাছ কেনার সময় যে কম দামে কিনেছে, যে বেশি পরিমাণে কিনে দামের সুবিধা পেয়েছে , নিজস্ব পরিবহনে ঢাকা এনেছে, অথবা নিজেই গতরাতে চিংড়ি মাছ ধরেছে (ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ), সে'ই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। যতভাবে সম্ভব পণ্যের মান বজায় রেখে অন্যদের চেয়ে উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, নিজস্ব ও পারিবারিক ভূমি ও শ্রম, ভিন্ন কাঁচামাল ও সাশ্রয়ী জ্বালানি ব্যবহার করা যেতে পারে।
মাইকেল পোর্টার এর সুপারিশকৃত তৃতীয় কৌশলটি হচ্ছে পৃথকীকরণ (Differentiation)। ভিন্নতা না থাকলে পণ্য বা সেবার প্রতি কেউ আকর্ষিত হবে না । প্রত্যক্ষনের সূত্র হচ্ছে, মানুষ ভিন্নতাকেই আগে প্রত্যক্ষ করে। অনেকগুলো রাজহাঁস রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে এর মধ্যে একটা ছোট্ট পাতি হাঁসের বাচ্চা থাকলে মানুষের দৃষ্টি প্রথমেই সেই পাতি হাঁসের বাচ্চার উপরেই পড়বে। হিন্দি সিনেমায় এই কৌশলটা ব্যবহার করা হয়। মূল নায়িকা অনেক সময় শারীরিকভাবে সহ-নায়িকাদের চেয়ে আকর্ষণীয় নাও হতে পারে। যেমন বাঙালি মেয়ে রানী মুখার্জি। হিন্দি সিনেমায় যে ক'জন সখীর সাথে (৫০ জনেরও বেশি হতে পারে) সমুদ্রের ঢেউয়ের তালে তালে নাচবে তাদের প্রত্যেকেরই শরীর-স্বাস্থ্য রানী মুখার্জির চেয়ে ভালো । এত সুন্দরীদের মধ্যে রানীকে কিভাবে দর্শক খুঁজে পাবে? পরিচালক তখন সবাইকে হাফ প্যান্ট আর রাণীকে ফুল প্যান্ট পরিয়ে দেয়। অথবা সবাইকে লাল আর রানীকে দেয়া হয় সাদা পোশাক। অনেকটা মৌমাছির রানীর মত। একটি মৌচাকে একটিই রানী থাকে, তার আকৃতি অন্যদের থেকে অনেক বড় এবং গায়ের রংও ভিন্ন হয়।
নতুন ব্যবসায়ীদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে বাজারে যদি পাউরুটিও বিক্রি করতে চান সেটা যেন ৭৬ নম্বর পাউরুটি না হয়। বাজারে আরো ৭৫ টি কোম্পানির পাউরুটি আছে, আপনারটা হবে ৭৬ নম্বর, এছাড়া পৃথকভাবে বলার কিছুই নাই। কেবলই ৭৬ নম্বর পাউরুটি দোকানে শুয়ে থাকবে, দাঁড়াবে না। উল্লেখ্য, দোকানে পাউরুটি শুইয়ে রাখা হয়। পাউরুটি এবং প্রস্তুতকারী বেকারিটিকে যদি দাঁড় করাতে হয়, তবে বলতে হবে এটাই হচ্ছে একমাত্র পাউরুটি যাতে প্যারাসিটামল মেশানো আছে। পাওয়া যাবে কেবলমাত্র ফার্মেসিতে। টার্গেট হচ্ছে যাদের গায়ে জ্বর আছে। জ্বরের রোগীকে প্যারাসিটামল খেতে হয়। প্যারাসিটামল খালি পেটে খাওয়া ঠিক না। জ্বরের রোগী আবার কিছু খেতেও চায়না। একসাথে দুটি ঝামেলা মিটানোর সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে প্যারাসিটামল মিশ্রিত পাউরুটি। বড়দের জন্য দুই স্লাইস, ছোটদের জন্য এক স্লাইস। '২৫০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল বিপি পার স্লাইস'। এটা সম্ভব কিনা সেটা একমাত্র ফার্মাসিস্টরাই বলতে পারেন। আমি বিষয়টা বুঝার জন্য উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করলাম।
আরেকটা কাজ করা যেতে পারে, সেটা যদি আইনের ব্যত্যয় না হয়। তাহলো পুরো পাউরুটির প্যাকেটে সবকিছু আরবিতে লিখতে হবে। আকৃতিতে ভিন্নতা নিয়ে আসতে হবে। বাজারে চার কোণ, তিন কোণ, গোল, ওভাল ইত্যাদি আকৃতির পাউরুটি থাকলেও পাঁচ কোণের কোন পাউরুটি নেই। পাঁচটি কোণে পাঁচজন হিন্দি সিনেমার নায়িকার নাম লিখে দিতে হবে আরবিতে। আমার ধারণা আরবি লেখার কারণে এবং পাঁচ কোণের কারণেই অনেকেই পাউরুটিকে বেশি হালাল মনে করবে। আয় হালাল না হলেও সেই টাকা দিয়ে যারা হালাল খাবার খুঁজে তাদের জন্য এই বাজে কৌশলটা সুপারিশ করেছেন আমার এক প্রবাসী বন্ধু। বাংলাদেশে প্রস্তুত অনেক পণ্যের প্যাকেটে বাংলা লেখা থাকে না, পুরোটাই ইংরেজিতে। এক্ষেত্রে আইনের কিছুটা ব্যত্যয় হলেও আরবি লেখার কারণে পুলিশ ধরবে না, অন্তত ভয়ে হলেও।
লেখক : উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচআর/জেআইএম