দীর্ঘ ৬৬ দিন পর গণপরিবহন চালু হলেও এ খাতে নৈরাজ্য রয়েই গেছে। করোনাভাইরাসে পর্যুদস্ত সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বাড়তি ভাড়ার খড়গ। যদিও উপেক্ষিত যাত্রী সুরক্ষা ব্যবস্থা। গণপরিবহন রাস্তায় নামানোর ক্ষেত্রে সরকার ১১ দফা শর্ত দিলেও খোদ রাজধানীতে সেসবের তোয়াক্কা না করে চলছে বাস। সাত টাকার ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৩০ টাকা। ইচ্ছে করে গণপরিবহন কম চালিয়ে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম সংকটও।
Advertisement
বিআরটিএ কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানি বন্ধের দাবিতে আজ মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে বক্তারা এ কথা বলেন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বারসিক, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশন ও ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের (বানিপা) সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াহেদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হকার্স লীগের সভাপতি এম এ কাশেম, পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, বারসিকের সমন্বয়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ, গ্রিন ফোর্সের সমন্বয়ক মেসবাহ সুমন, নাসফ’র সহ-সম্পাদক মো. সেলিম, বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য সচিব শাকিল রেহমান, সেভ দ্য রোড’র যুগ্ম-মহাসচিব মো. হাসিবুল হক, সুজন ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের আতিকুর রহমান।
বক্তারা বলেন, কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০১৬ সালের মে মাসের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসের প্রতি কিলোমিটারের সর্বোচ্চ ভাড়া ছিল ১ টাকা ৪২ পয়সা। করোনাকালে ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে তা ২ টাকা ২৭ পয়সা নির্ধারিত হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে বাস ও মিনিবাসের চলাচলের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের প্রজ্ঞাপন অনুসারে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং চট্টগ্রামে ১ টাকা ৬০ পয়সা। করোনাকালে বাসভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ায় তা যথাক্রমে ২ টাকা ৭২ পয়সা এবং ২ টাকা ৫৬ পয়সা হয়েছে। ভাড়া বাড়ানোর সময় ভোক্তা ও নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো আপত্তি করেছিল। করোনাকালে পৃথিবীর কোথাও গণপরিবহণে যাত্রীভাড়া বাড়ানো হয়নি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার চাইতেও বাস্তবে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ করা হলেও যাত্রী সুরক্ষা উপেক্ষিত। ১১ দফা শর্ত ভঙ্গ করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলছে বাস।
Advertisement
ভাড়া বৃদ্ধির উদাহরণ দিয়ে বক্তারা বলেন, কলাবাগান থেকে প্রেসক্লাবের দূরত্ব ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার। এই দূরত্বে বাসভাড়া হওয়া উচিত সাত টাকার মতো। কিন্তু করোনাকালে এই ভাড়া ৩০ টাকার মতো নেয়া হচ্ছে। প্রতিবাদ করেও সুফল মিলছে না। অন্যদিকে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহনের কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছেই।
বিগত দিনগুলোতে দেখা গেছে, একটি সিন্ডিকেট পুরো পরিবহন সেক্টরকে দখল করে নিয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি যত সংখ্যক ও যে মানের বাস চালানোর শর্তে রুট পারমিট পায় তারা তার চেয়ে অনেক কম সংখ্যক এবং নিম্নমানের বাস চালায়। কোম্পানিগুলো যেখানে ৫০টি বাস চালানোর কথা সেখানে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ১০টি বাস চালাচ্ছে। এতে যাত্রীরা যথেষ্ট যানবাহন না পেয়ে রাস্তার মাঝখান থেকে চলন্ত বাসে ঝুঁকি নিয়ে ওঠানামা করতে বাধ্য হচ্ছে। এ কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। ঢাকায় গেটলক বা সিটিং সার্ভিসের নামে অনেক বাস চলাচল করে যারা অন্যদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করে।
বক্তারা বলেন, সম্প্রতি বাস মালিক-শ্রমিকদের সাথে বিআরটিএ’র বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আগামী ৩১ আগস্টের পর গণপরিবহনে আর বর্ধিত ভাড়া নেয়া যাবে না। এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আশাবাদী হতে পারছি না। বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ঢাকা শহরে প্রতি কিলোমিটার এক টাকা ৭০ পয়সার এবং দূরপাল্লার প্রতি কিলোমিটারে সর্বোচ্চ এক টাকা ৪২ পয়সার অতিরিক্ত ভাড়া যেন আদায় না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যেন যাত্রী চলাচল করতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। কোনো শিথিলতা নয়, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর পূর্ণাঙ্গ ও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
যাত্রী হয়রানি বন্ধে বাসকে প্রাধান্য দিয়ে গণপরিবহনের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে স্টপেজ এবং আসা-যাওয়ার সুবিধাসহ একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানান বক্তারা।
Advertisement
জেইউ/এইচএ/এমএস