>> ২০১৩ শয্যার বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে রোগী মাত্র ১৫ জন>> ১০১২ শয্যার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে রোগী ভর্তি ১৯৫ জন>> ‘নন-কোভিড’ প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে : ফরিদ হোসেন
Advertisement
করোনা আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারি ও বেসরকারিপর্যায়ে রাজধানীসহ সারাদেশে ৩০টি করোনা হাসপাতাল চালু করা হয়। কিন্তু বর্তমানে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল প্রায় রোগীশূন্য হয়ে পড়েছে। রোগী না থাকায় হাসপাতাল পরিচালনা বাবদ সরকারের মাসে কোটি কোটি টাকা জলে যাচ্ছে।
জানা গেছে, এসব হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুয়ে-বসে বেকার-অলস সময় পার করছেন। কাজ না করেই মাসশেষে লাখ লাখ টাকা বেতন তুলছেন। বিশেষ করে সরকারি কয়েকটি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। এছাড়া কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সরকারি খরচে করোনার রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের চুক্তি থাকায় রোগী না থাকলেও তাদের বিপুল অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।
করোনা রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় সরকারি অর্থের সাশ্রয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ওইসব করোনা হাসপাতালকে নন-কোভিড অর্থাৎ সাধারণ চিকিৎসার জন্য ঘোষণা করতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কম করোনার রোগী রয়েছে এমন হাসপাতালের তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে খুব শিগগিরই চিঠি পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বেশ কয়েকটি হাসপাতালকে নন-কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা দেয়া হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
Advertisement
দেশে গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। করোনা সংক্রমণের আগে থেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু হয়। রাজধানীর কুড়িলে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় সরকারি কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে দ্রুততম সময়ে ২০১৩ শয্যার করোনা হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টার নির্মিত হয়। প্রয়োজনীয় দামি যন্ত্রপাতি স্থাপন করে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য সেখানে চিকিৎসক ও নার্সসহ জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। হাসপাতালটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন পরিচালকও নিয়োগ দেয়া হয়। পর্যাপ্ত জনবলসহ রোগীদের সেবা প্রদানের সার্বিক প্রস্তুতি থাকলেও খুব বেশি রোগী সেখানে ভর্তি হননি। গত বেশকিছু দিন ধরে রোগীর সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে। গতকাল সোমবার (২৪ আগস্ট) ২০১৩ শয্যার এ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫ জন অর্থাৎ শয্যা খালি ছিল এক হাজার ৯৯৮টি।
মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ১০ শয্যার করোনা হাসপাতাল চালু থাকলেও সেখানে বর্তমানে কোনো রোগী ভর্তি নেই। রাজধানীর বাবুবাজারে ১০৫ শয্যার ঢাকা মহানগর করোনা হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন মাত্র ১১ জন। মিরপুরের ১২১ শয্যার লালকুঠি হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন মাত্র নয়জন। রাজধানীর ইস্কাটনে ৪২০ শয্যার হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট করোনা হাসপাতালে মাত্র ১২২ রোগী ভর্তি আছেন। এক হাজার ১২ শয্যার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছেন মাত্র ১৯৫ জন। ৬৬ শয্যার সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে রোগী ভর্তি মাত্র ৩০ জন।
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে ১০০ শয্যার হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে পাঁচজন, ১০০ শয্যার চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল আছে রোগীশূন্য, পাহাড়তলীর ৪৭ শয্যার বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে একজন, ৪০ শয্যার ভাটিয়ারি হাসপাতাল রয়েছে রোগীশূন্য।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া বলেন, যেসব হাসপাতালে করোনারোগী কম সেগুলোর তালিকা তৈরি করে আপাতত হাসপাতালগুলোকে নন-কোভিড ঘোষণা করা যায় কিনা, সে সম্পর্কে প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
Advertisement
উল্লেখ্য, দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তে সরকারি ও বেসরকারিপর্যায়ে পরিচালিত ৯১টি করোনা শনাক্তকরণ আরটি-পিসিআর ল্যাবরেটরিতে এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ ৭০ হাজার ১৯১টিতে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সর্বমোট করোনা রোগী শনাক্ত হয় দুই লাখ ৯৯ হাজার ৬২৮ জন। ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ২৮ জনে।
এমইউ/এমএআর/পিআর