দেশজুড়ে

পর্যটকদের জন্য কবে খুলবে সুন্দরবনের দ্বার

অন্তত সাড়ে পাঁচ মাস ধরে বন্ধ বিশ্ব ঐতিহ্যের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের যাতয়াত। আসছে শীত, পর্যটনের সেরা মৌসুম। কিন্তু এই মৌসুমেও যাতায়াত শুরু হবে কিনা তা বলতে পারছে না কেউ। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এমনই অনিশ্চিয়তায় রয়েছে খুলনা অঞ্চলের পর্যটন শিল্প। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ট্যুর অপারেটর, লঞ্চ/জাহাজ মালিক ও শ্রমিক এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

খুলনা তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পর্যটন শিল্প বলতে বিশ্বখ্যাত নয়নাভিরাম সুন্দরবনকেই বোঝায়। সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্পে লক্ষাধিক মানুষের রুটিরুজি জড়িত। সারা বছর দেশি-বিদেশি বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনায় মুখর থাকে সুন্দরবন উপকূল। তবে বর্ষার পরই সাধারণত সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুম শুরু। সে হিসেবে এখনই সময় প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগের।

বনবিভাগের সূত্রমতে, করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে গত ১৯ মার্চ পুরো সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াত ও নৌযান চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবন জুড়ে এ নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার নির্দেশনা ছিল। সুন্দরবনের নয়টি পর্যটন এলাকায় পর্যটন মৌসুমে (নভেম্বর থেকে মার্চে) কোনো কোনো দিন ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ অবস্থান করেন। ফলে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় চরম দুর্ভোগে পড়েন বনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে থাকা দর্শনার্থীরা। চরম আর্থিক হুমকির মুখে পড়েন ট্যুর অপারেটর ও সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সভাপতি মো. মইনুল ইসলাম জমাদ্দার বলেন, কুয়াকাটাসহ দেশের প্রায় সব পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। সুন্দরবনও খুলে দিলে কোনো সমস্যা নয় বরং সরকারের রাজস্ব আয় হবে। সুন্দরবন কেন্দ্রীক ৭০টি ট্যুর কোম্পানির অর্ধশত জাহাজের কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় পাঁচ মাস বেকার। চরম আর্থিক সংকটে রয়েছেন তারা। মাত্র তিন থেকে চার মাস সুন্দরবনের পর্যটন মৌসুম, এরপর সারা বছর বসে বসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন গুনতে হয়। সেই সময়টাতেই যদি পর্যটন বন্ধ থাকে, তাহলে একদিকে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হবে অন্যদিকে সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্পটি বিধ্বস্ত হয়ে যাবে।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন উপকূলের লোনা অঞ্চলের মানুষ কিন্তু প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল, করোনা সংক্রমণ কিন্তু তাদের ধরেনি। সে হিসেবে বলা যায়, সুন্দরবন অঞ্চল নিরাপদ। করোনায় গৃহবন্দি মানুষের অবসাদ কাটাতে অবিলম্বে সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতয়াতের অনুমতির দাবি জানিয়েছেন তিনি।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ১৯ মার্চ সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াত ও নৌযান চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। তারপর এ বিষয়ে আর কোনো নির্দেশনা আসেনি। কবে নাগাদ আসবে সেটা মন্ত্রণালয়ের বিষয়।

তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে সুন্দরবনের পর্যটন খাত থেকে কোনো রাজস্ব আয় হয়নি। তবে গেল অর্থবছরে (২০২০-১৯) এক কোটি ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৫৮ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিল। গত বছর এক লাখ ৭ হাজার ৩৮৪ জন পর্যটক সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছিলেন।

পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বশির আল মামুন বলেন, গত অর্থবছরে সুন্দরবনের পর্যটনখাতে ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫০ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মন্ত্রণালয় থেকে পর্যটনের বিষয়ে কোনো নির্দেশনাও আসেনি।

Advertisement

লকডাউনে দীর্ঘদিন বাড়িতে আটকে থাকার পর প্রকৃতির সান্নিধ্যে যেতে মন চায় সবারই। নিরিবিলি পরিবেশে সপরিবারে প্রাণভরে শ্বাস নিতে চাইলে সুন্দরবন ভ্রমণের বিকল্প নেই।

আলমগীর হান্নান/এফএ/জেআইএম