সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকের উদ্যোগের প্রশংসা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, তিনি আশা করছেন অন্যান্য আরব দেশও একই পথ অনুসরণ করবে। সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসে এমন মন্তব্য করেন পম্পেও।
Advertisement
তিনি বলেন, আমি খুবই আশাবাদী, এতে আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশও যোগ দেবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় আমিরাতের সঙ্গে এই চুক্তি আঞ্চলিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতায় সহায়তা করবে।
ইসরায়েলি এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, এ এক নতুন যুগের সূচনা; যেখানে অন্যান্য দেশও যোগ দিতে পারে। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে আমরা আরও ভালো খবর পাবো; তা হতে পারে অদূর-ভবিষ্যতে।
রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতির পাশাপাশি ভবিষ্যৎ অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে এই চুক্তির মাধ্যমে আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মাইক পম্পেও।
Advertisement
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বলছে, মধ্যপ্রাচ্য সফরের প্রথম দিন ইসরায়েলে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পম্পেও। সেখান থেকে সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন সফরে যাবেন তিনি।
সুদান-ইসরায়েলের গভীর সম্পর্কের প্রতি সমর্থন জানাতে সুদানের প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে বাহরাইনের যুবরাজ সালমান বিন হামাদ আল-খলিফার সঙ্গেও বৈঠক করবেন পম্পেও।
গত ১৩ আগস্ট সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইসরায়েল জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মাঝে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চুক্তিতে পৌঁছেছে তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন লড়াই, ফিলিস্তিন ইস্যুসহ মধ্যপ্রাচ্যের পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতি খোল-নলচে পাল্টে যেতে পারে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ইসরায়েল-আমিরাতের চুক্তিটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল এবং এটি বাতিল হওয়া উচিত।
Advertisement
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সমর্থনে এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তিতে সম্মত হওয়ার মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘ভণ্ডামিপূর্ণ আচরণ’র কথা এই অঞ্চলের মানুষ কখনও ভুলে যাবে না এবং ক্ষমা করবে না।
ইরানবিরোধী জোট?
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে ওয়াশিংটনের মধ্যপ্রাচ্য কৌশলের একটি অংশ হলো- ইসরায়েল এবং মার্কিন উপসাগরীয় মিত্রদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে এই অঞ্চলের চিরবৈরী প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে কোণঠাসা করে রাখা।
পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের রাজনৈতিক সমীকরণে ইসরায়েলকে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দেয়ার বিরুদ্ধে আবু ধাবিকে সতর্ক করে দিয়েছে তেহরান। দেশটি বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অন্যান্য সহযোগী রাষ্ট্রের সরকারকে এই চুক্তির সব ধরনের পরিণতির দায় নিতে হবে।
উপসাগরীয় অঞ্চলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যিক এবং সামরিক সংঘাত দিনে দিনে বাড়ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে তেহরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোটের শীর্ষস্থানীয় সমর্থক আবু ধাবি।
এই চুক্তির সমর্থক কারা?
চুক্তিতে পৌঁছানোর মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রথম দেশ। এছাড়া মিসর এবং জর্ডানের পর আরব বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পূর্ন কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করছে আমিরাত।
গত ১৩ আগস্ট ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং আবু ধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনায় এই চুক্তি নিশ্চিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, তিন রাষ্ট্রনেতা ইসরায়েল এবং আমিরাতের কূটনৈতিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করতে সম্মত হয়েছেন।
‘ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধিরা শিগগিরই বিনিয়োগ, পর্যটন, সরাসরি বিমান চলাচল, নিরাপত্তা, টেলিযোগাযোগ ও অন্যান্য বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বৈঠক করবেন।’ এছাড়াও শিগগিরই উভয় দেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ ও দূতাবাস স্থাপন করা হবে বলেও প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলকরণ বন্ধের প্রতিশ্রুতির জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইসরায়েলের চুক্তির প্রশংসা করেছেন। এই অঞ্চলে চুক্তিটি শান্তি বয়ে আনবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি।
জর্ডান বলছে, শান্তি প্রক্রিয়াতে এই চুক্তির প্রভাব ইসরায়েল কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তার ওপর নির্ভর করছে। জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান আল-সাফাদ বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং অবৈধ পদক্ষেপ গ্রহণ বন্ধ করতে হবে।
আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে ইসরায়েল এবং আমিরাতের রাষ্ট্রনেতারা চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি, এএফপি।
এসআইএস/এমকেএইচ