শরীরের অন্যান্য অংশের চেয়ে নাকের মাধ্যমে করোনার টিকা গ্রহণ করলে এটি বেশি কার্যকরী হয় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বিজ্ঞানবিষয়ক পত্রিকা ‘সেল’ এবং ‘নেচার কমিউনিকেশন’ প্রকাশিত দুটি গবেষণা এ ধরনের তথ্য দিয়েছে।
Advertisement
করোনার টিকা নাকে নিলে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা মেলে বলে গবেষণা দুটিতে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। একদল গবেষক দেখিয়েছেন, পেশিতে টিকা দেয়ার চেয়েও কার্যকর হচ্ছে নাকের মাধ্যমে টিকা দেয়া। এই টিকা দেয়ার পর দেখা যায়, নাসারন্ধ্রে বা শ্বাসতন্ত্রে ঢোকামাত্রই ভাইরাসের বিরদ্ধে কাজ শুরু হয়।
এ ধরনের গবেষণার জন্য ইঁদুর ও রিসাস বাঁদরের ওপর করা প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই তথ্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন অনেক বিশেষজ্ঞই। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের দুই বিজ্ঞানী ডেভিড কুরিয়েল এবং মাইকেল ডায়মন্ডের দল কাজ করেছেন বায়োইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতিতে তৈরি ইঁদুরের ওপর, যার মধ্যে রয়েছে মানুষের শরীরে থাকা রিসেপটর এসিই-২, যা করোনাকে ঢুকতে সাহায্য করে।
বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, পেশিতে টিকা দেয়ার পর শরীরজুড়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে, কোষ সজাগ হয়ে উঠছে। সর্বোপরি ফুসফুস সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে। তবে শরীরে ঢোকা থেকে আটকানো যাচ্ছে না ভাইরাসকে। অর্থাৎ তৈরি হচ্ছে না স্টেরিলাইজিং ইমিউনিটি। যা পাওয়া যাচ্ছে ইন্ট্রান্যাজাল পদ্ধতিতে। তৈরি হচ্ছে মিউকোসাল ইমিউনোগ্লোবিউলিন এ অ্যান্টিবডি, যা কাজ করছে ফ্রন্টলাইন ইমিউনিটি হিসেবে। অর্থাৎ প্রবেশপথেই পাহারাদার বসে যাচ্ছে। করোনা ঢুকলেই কাত!
Advertisement
প্রথম ক্ষেত্রে ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধের পরও ফুসফুসে কিছু ভাইরাল আরএনএ অবশিষ্ট হিসেবে থেকে যাচ্ছিল। ইন্ট্রান্যাজালে সাফ হয়ে যাচ্ছে পুরোটাই, এমনই দাবি বিজ্ঞানীদের।
রিসাস বাঁদরের ওপর পরীক্ষা করেছেন চীনের গুয়াংঝৌ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী লিন চেং এবং তার দলবল। তাদের গবেষণায়ও দেখা গেছে, টিকা কার্যকর। তবে নাসারন্ধ্রে প্রয়োগ করলে গোটা শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে কিছুটা কম।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যেই করোনার বেশকিছু সম্ভাব্য ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সফল হয়েছে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনই সবচেয়ে এগিয়ে। নিরাপত্তার বিভিন্ন মাত্রায় ইতোমধ্যেই এই ভ্যাকসিন তার সক্ষমতা প্রমাণ করতে পেরেছে। ফলে আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
Advertisement
ইতোমধ্যে রাশিয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে করোনার টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। স্পুটনিক-ভি নামের এ টিকার উৎপাদনও শুরু করেছে রাশিয়া। এদিকে এ বছরের শেষ নাগাদ খুচরা বিক্রির জন্য বাজারে আসতে পারে চীনের তৈরি ভ্যাকসিন।
বিএ/পিআর