মতামত

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে- বঙ্গবন্ধুর স্মরণে রোগীর সেবায় হই আরও যত্নবান

চলছে বাঙালির শোকের মাস, এসেছে বাঙালি জাতিকে, বাংলার মানুষের স্বপ্ন-ভবিষ্যত হত্যা করার মাস, এসেছে ফিরে আবার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের জাতির পিতা বিশ্ব নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার কালো দিবস ১৫ আগস্ট । করোনা সংক্রমণের কারণে এবার অন্যান্য বারের মতো মাসব্যাপী কর্মসূচি সেভাবে করা যাচ্ছে না । তবুও বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নানা কর্মসূচি পালন করে চলেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা,আনুষ্ঠানিকতা,দোয়া-মাহফিল,সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মধ্যে খাদ্য বিতরণসহ নানা অনুষ্ঠানের প্রয়োজন রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমাদের সকলের মধ্যে যার যার রাজনৈতিক জীবনে,সামাজিক জীবনে,শিক্ষা জীবনে,ব্যাক্তি জীবনে নিয়মিত চর্চা করার একটা প্রবণতা ব্যাপকভাবে বাস্তবায়িত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সর্ব সময়ে, সর্বকালে । সেজন্য বঙ্গবন্ধুকে আরও বেশি বেশি জানা, বোঝার ব্যবস্থা করতে হবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে,পারিবারিকভাবে । বঙ্গবন্ধু চর্চা কেবল একটি মাসের মধ্যে বা দিনের মধ্যে আবদ্ধ রাখলে হবে না । নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আলোয় আলোকিত করতে হবে তবেই দেশ এগিয়ে যাবে একটি আদর্শ,আধুনিক ,কল্যাণ, উন্নত রাষ্ট্রের দিকে ।

Advertisement

বাংলার রুপ-প্রকৃতি, মায়াবী সবুজ-শ্যামল গাছপালা, দিগন্ত-বিস্তৃত মাঠ, মাঠে মাঠে সোনার ধান আর গ্রামের শান্তস্নিগ্ধ জীবন শেখ মুজিবকে এদেশের মাটি ও মানুষকে নিবিড়ভাবে ভালোবাসতে শিখিয়েছে । একই সাথে বাংলার চাষি, কামার, কুমার,জেলে ও সাধারন মানুষের সুখ-দুঃখ তাঁকে বিচলিত করত । তাই তাঁর রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল বাংলার অবহেলিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানো । আড়ম্বরের উচ্চ কোলাহল বা সুখের জীবন কখনই তাঁকে স্পর্শ বা আকৃষ্ট করতে পারেনি ।

বঙ্গবন্ধু রাজনীতিতে এসেছিলেন বাংলার মানুষকে ভালোবেসে। তাই ক্ষমতার লোভ কিংবা যশ, খ্যাতি, সম্পদের উচ্চাভিলাষ তাঁকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি । একজন মানুষ হিসেবে শেখ মুজিবের মহত্ত্ব এখানে যে, বাঙালী জাতির মুক্তির জন্য তিনি নিরন্তর লড়াই করেছেন । তিনি চেয়েছেন এ দেশের মানুষ যেন খেয়ে- পরে, সুখে- শান্তিতে বাঁচতে পারে, আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বের দরবারে নিজেদের ন্যায্য স্থান পেতে পারে । আর এজন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর সমগ্র জীবন, চিন্তা-ভাবনা, ও শ্রম উৎসর্গ করেছিলেন। বাঙালির মুক্তির জন্য, স্বাধীনতার জন্য তিনি প্রায় ১৩ বছর জেলখানার অন্ধ প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন । ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন আদর্শবাদী ও নীতিবান মানুষ হিসেবে এদেশের সাধারণ মানুষের একান্ত কাছাকাছি ছিলেন।

২৪ বছরের নিরলস সাধনায় সাফল্য অর্জন স্বত্ত্বেও তিনি অহংকারী ও উদ্ধত ছিলেন না । বিলাসিতা ও স্বেচ্ছাচারকে তিনি ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে কখনো প্রশ্রয় দেননি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও তাঁর ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসাটি একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মতোই আড়ম্বরহীন, বাহুল্যবর্জিত, সাধারণ ছিল । পৃথিবীর কোনো দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এতটা সাধারণ , জাঁকজমকহীন এমন কল্পনা করা যায় না । সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের অংশীদার হিসেবে তিনি অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন । বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে তাঁর যে অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলো প্রাধান্য পায় তাহলো- সর্বোচ্চ ত্যাগ, প্রশ্নাতীত সততা, গভীর দেশপ্রেম,জনগণের জন্য গভীর ভালোবাসা, অদম্য সাহস, মানবতাবাদী, গনতান্ত্রিক, ধর্মনিরপক্ষতা, নিয়মতান্ত্রিক, এবং লক্ষ্যে অবিচল ।

Advertisement

যে মহামানবের জন্য আমরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক, সুযোগ-সুবিধামতো নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারছি,বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি সেই জাতির জনককে জীবন-যাপনের সকল ক্ষেত্রে অনুসরণ করতে হবে । আমাদের তাঁর মতো ত্যাগ করতে হবে না, জীবন দিতে হবে না, শুধু আমরা সততার সাথে যার যার অর্পিত দায়িত্ব পালন করি তবেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে । এর জন্য প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুকে গভীরভাবে অনুধাবন , দৈনন্দিন চর্চা এবং কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ ।

প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চর্চার মাধ্যমে প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে । আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচিত করেছিলেন । এজন্য আমি বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি চির কৃতজ্ঞ। আমার দায়িত্ব পালনকালে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আলোচনা-আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। আমরা শোকের মাসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য একটি শ্লোগান নির্ধারণ করেছিলাম " রোগীর সেবায় হই আরো যত্নবান "। ২০১৫তে ছিল বঙ্গবন্ধুর ৪০ তম শাহাদাত বার্ষিকী। আমি মনে করি জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব অন্যদের চাইতে একটু বেশি নিতে হবে, একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে ।

প্রস্তুতি পর্ব : প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বসিং না করে সমন্বয়ক হিসেবে প্রধানত কাজ করতে হয় এবং অখণ্ড সময় দিতে হয় । ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠান প্রধানের উপস্থিতি ঔষধের মতো কাজ করে । জাতির পিতা, জাতীয় নেতৃবৃন্দ, ৩০ লাখ শহীদ আমাদের জন্য, দেশের জন্য জীবন দিয়ে গেছে আর আমরা যদি আমাদের জন্য শুধু সময়টা না দেই তবে অন্যায় হয়ে যায় । প্রথমত : কাজের, সেবার, শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয় । দুরকম পরিবেশের প্রতি নজর রাখতে হয় - ১) আঙ্গিক পরিবেশ: ঘরে-বাইরে সর্বত্রই ২৪ ঘন্টা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে । এজন্য পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সাথে কথা বলে উদ্বুদ্ধ করে নিতে হয় । পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ মনে উত্ফুল্লতা আনে । ২) সহকর্মীদের সাথে সম্পর্কিত পরিবেশ : সুন্দর কাজের জন্য সহকর্মীদের সাথে সুন্দর-আন্তরিক সম্পর্ক বাঞ্ছনীয় । এজন্য চর্চার মধ্য দিয়ে তিনটি নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়েছে-১) পারস্পরিক শ্রদ্ধা ২) বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা ৩) সহকর্মী-রোগীদের সাথে হাসিমুখে কথা বলা ।আমরা একটি নীতি অনুসরণ করতাম "All Health Professionals should have smiling face "- এটা আমাদের পেশাগত আচরণ । নিরন্তর সামাজিক ঘাত-প্রতিঘাতে যদিও রক্ষা করা কঠিন । এজন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান, শিক্ষক,অফিসার,নার্সদের জন্য তিন দিন করে গ্রুপে গ্রুপে ব্যবস্থাপনার উপর প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিলাম যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় আইন-বিধি এবং আচরন অন্যতম ছিল । প্রশিক্ষণশেষে সকলের হাতে আইন-বিধির বই তুলে দেয়া হয়েছে ।

আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন পতাকা খুঁজে পাইনি । বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতির জন্য পতাকা অপরিহার্য় । আমরা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের অনুমোদিত নকশা মোতাবেক পতাকা উত্তোলন করেছি । ২৪ ঘন্টা চিকিৎসক উপস্থিতি একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত করেছি, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও । ২৪ ঘন্টা পুরো ক্যাম্পাসের সকল কর্মকাণ্ডের উপর প্রশাসনিক নিবিড় পর্যবেক্ষণ ছিল আমাদের অন্যতম কর্মসূচী । শিক্ষক-চিকিৎসক-ছাত্র-নার্স- কর্মচারী-সাংবাদিকদের সাথে নিয়মিত মতবিনিময় আমাদের আত্মবিশ্বাসী করেছে । সকল রোগীর সাথে সবাইকে ভালো ব্যবহার করতে হবে - এটি ছিল সকলের প্রতি বিশেষ অনুরোধ । রোগী-ডাক্তার সুন্দর রাখার জন্য আমরা নিরন্তর পর্যবেক্ষণ করেছি ।

Advertisement

২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট ছিল বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদত বার্ষিকী : এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে " রোগীর সেবায় হই আরো যত্নবান " ভিত্তিক ৪০ দিনব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণ করা হয় । বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালটি আমাদের সকল কাজের প্রেরণার উৎস । প্রতিদিনই সন্ধ্যা বেলা ম্যুরালে মোমবাতি প্রজ্জলনের মাধ্যমে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হতো । এতে প্রায়ই জাতীয় নেতৃবৃন্দ , পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকতেন । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-চিকিৎসক-ছাত্র -নার্স-কর্মচারীরা প্রতিদিন উপস্থিত থাকতেন । একেক দিন একেক ডিপার্টমেন্টকে মোমবাতি নিয়ে আসার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো । এতে সবার মাঝে অসাধারন আগ্রহ, স্বতঃস্ফূর্ততা এবং প্রাণ চাঞ্চল্য লক্ষ্য করেছি । তখন থেকে শুরু হলো প্রতি সন্ধ্যায় শিক্ষকদের ক্লাশ নেয়া, রাউন্ড দেয়া, রোগী দেখা- নতুন করে সান্ধ্যকালীন প্রান সঞ্চার হলো ক্যাম্পাসে । শিক্ষা কার্যক্রম এবং চিকিত্সা সেবা নতুন করে গতি পেলো। মাল্টিডিসিপ্লিনারী মাসিক বিশ্ববিদ্যালয় সেমিনার শিক্ষক-ছাত্রদের অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত হয়ে গেলো এ মাস থেকেই । এ মাসেই আউটডোরে ওটি চালুর মাধ্যমে অপারেশন শুরু হয় । ১৪ আগস্ট টুঙ্গীপাড়ায় বিনামূল্যে হেলথ ক্যাম্প কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয় যেখানে সিনিয়ার শিক্ষকসহ প্রচুর চিকিৎসক,নার্স,কর্মচারীর অংশগ্রহণ করে । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা,স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণা কার্যক্রমের মান নিশ্চিত করার জন্য "ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি এসিউরেন্স সেল (IQAC) গঠন করে তার কার্যক্রম পুরো উদ্যোমে শুরু হয় । সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ এ কাজে অসাধারণ উৎসাহ ও সহযোগিতা দিয়েছেন । চিকিত্সকরা মেধার কারণে বহুমাত্রিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছে । গান- কবিতা তারুণ্যকে উদ্দীপ্ত করে । বঙ্গবন্ধু নিজেও সংস্কৃতসেবী ছিলেন । এজন্য দেশের বরেণ্য কবি-শিল্পীদের নিয়ে "বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত গান-কবিতা" অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো । বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ গ্রন্থ " অসমাপ্ত আত্মজীবনী" -এর উপর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের মধ্যে বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল যাতে ছাত্ররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিলো । প্রতিটি অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকতেন ।" আমাদের প্রশাসন প্রথম থেকে চেষ্টা করেছে যাতে রোগীর আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে থেকে নিশ্চিত থাকতে পারে যে হাসপাতালে তার রোগীটি যত্নে আছে "। সকল সহকর্মীদের এমনভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে । আগস্ট মাসে আমরা সকলে মিলে যে গতি সৃষ্টি করেছিলাম তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে । বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি সার্ভিস ২৪ ঘন্টা চালু করা হয় । বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী প্রথমবারের মতো সকল বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব রোটেশন সিস্টেমের মাধ্যমে পরিবর্তন করা হয় ।

আগস্ট ২০১৬ : ১০০০ শয্যাবিশিষ্ট সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কার্যক্রম উদ্বোধন - ১৭ আগস্ট এই হাসপাতালের কনসালটেন্সী কার্যক্রম বাংলাদেশস্থ দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে একটি সভার মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় । এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকের সভায় এ প্রকল্পটি অনুমোদন করেন । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ কোটি টাকা যুক্ত করে ১১ তলার প্রকল্পটিকে ১৩ তলায় রুপান্তর করেন । এ প্রকল্পের নকশা অনুমোদন, দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের সাথে চূড়ান্ত চুক্তি ও টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ সকল কার্যক্রম ২০১৭ এর মধ্যে সম্পন্ন হয় ।

নার্সিং সেবা কার্যক্রম : এ মাসে নার্সিং সেবা কার্যক্রম উল্লয়নের লক্ষ্যে নার্স অফিসারদের সাথে সিরিজ সভা হয় । সকল নার্সদের ৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়-১) রোগীদের নিজ হাতে ঔষুধ খাওয়াতে হবে ২) প্রয়োজনের বাইরে দিনে ৩ বার রোগীর খোঁজ নিতে হবে ৩) সকল সময় রোগীর সাথে হাসিমুখে কথা বলতে হবে । সম্মানিত নার্সরা এ নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন- রোগীদের মাধ্যমে নিয়মিত খোঁজ নেয়ার ব্যবস্থা ছিলো । এতে রোগীদের সন্তুষ্টির মানে আমূল পরিবর্তন আসে । শিক্ষকদের হাসপাতাল ও আথিক ব্যবস্থাপনার উপর বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় । এ মাসে শিশুরোগ অনুষদসহ ৫ টি নতুন বিভাগ ও ২টি নতুন কোর্স খোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।

ইতোমধ্যে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে প্রথম বারের মতো ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুন্দর পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে সুন্দর ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক অপরিহার্য ।

এর মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো নার্সিং মাষ্টার্স কোর্স চালু করা হয়েছে । মুক্তিযাদ্ধাদের চিকিত্সার জন্য বিশেষ "মুক্তিযাদ্ধা সেল" চালু করা হয়েছে । প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে "কর্মচারী চাকুরী নীতিমালা " সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অনুমোদিত হয় এবং কর্মচারীদের ন্যায্য পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হয় । "বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিধি" সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গৃহীত হয়। সকল স্তরের শিক্ষক,চিকিৎসক,কর্মকর্তা ,নার্স,কর্মচারীদের Job Satisfaction -এর জন্য নিয়োগ-পদোন্নতির ব্যবস্থা নিয়মিত করা হয় ।বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা দিবস : প্রথমবারের মতো গবেষণা দিবস পালিত হয় । এতে ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ,আগ্রহ-অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেছে । বৈকালিক সেবা আরো সম্প্রসারিত ও জোরদার করা হয় ।

আগস্ট ২০১৭ : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহবাগস্থ বেতার ভবনের জমি ও স্থাপনার দলিল উপাচার্যের নিকট হস্তান্তর করেন এবং এরমধ্য দিয়ে জমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোপুরি দখলে আসে ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য কন্যা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ইনষ্টিটিউশন হিসেবে "ইনষ্টিটিউট অফ প্যাডিয়াড্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার এন্ড অটিজম ইন বিএসএমএমইউ (ইপনা) " প্রকল্পটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিধি হিসেবে অনুমোদিত হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থাপিত হয় ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে সংক্রামক রোগ "চিকুগুনিয়ার " উপর দুটি জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় যার মাধ্যমের জাতীয় পর্যায়ে সমন্বয় স্থাপন হয় ।

এ মাসে নার্সিং সেবার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয় । নার্স অফিসার ও ইনচার্জদের সাথে বিশেষ সভা করা হয় তাদের বিশেষ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয় । পুরো মাস জুড়ে নার্সিং সেবার মান উন্নত করার জন্য নার্সদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায় । ৩টি নির্দেশনা অনুসরন করে তাঁরা রোগীদের মন জয় করে । হাসপাতালের সকল ওয়ার্ডকে মডেল ওয়ার্ড হিসেবে উন্নত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।

রোগীদের সুবিধার্থে সকল ব্লকে স্থাপন করার লক্ষ্যে" হাসপাতাল ফার্মেসী" চালু করা হয় ।

বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের অনুমোদিত নতুন নীতিমালা সাপেক্ষে "ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সেন্টার " চালু করা হয় । এ মাসের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নির্মাণাধীন ভবনের সকল কাজ সম্পন্ন করা হয় ।

রেসিডেন্টদের মাসিক পারিতোষিক সরকারীভাবে নিয়মিত জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা ব্যবস্থা করা হয়।

"২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের জন্য " সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিধি প্রণয়ন করে নিয়মিত চিকিৎসার ব্যবস্থা কর হয় । " ৫০০ কিডনী ট্রান্সপ্লান্টের সফল অস্ত্রোপচার নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কর হয় " । বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বয়স্ক মানুষদের চিকিৎসার জন্য "জেরিয়াট্রিক মেডিসিন" ইউনিট চালু করা হয় । নিরন্তরভাবে অটোমেশনের জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় । ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার জন্য ঈদ পুনর্মিলনীর পাশাপাশি দুর্গাপূজা এবং বড়দিন পরবর্তী পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয় । ২২ আগষ্ট " বঙ্গবন্ধুর কারাগারের রোজনামচা " - র উপর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বক্তৃতামালার আয়োজন করা হয় । এ চমকপ্রদ অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। রাত ৯ টা থেকে প্রতিদিন উপাচার্যের উপস্থিতিতে "প্রশাসনিক ওয়ান পয়েন্ট অফিস "চালু করা হয় । সকল কর্মকর্তা এক কক্ষে বসে হাসপাতালের যাবতীয় পর্যবেক্ষণ, তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া হতো । সন্ধ্যার প্রাইভেট চেম্বার শেষে সিনিয়ার শিক্ষকরা যুক্ত হতেন। এতে ২৪ ঘন্টা গতিশীল থাকতো হাসপাতালের সকল কর্মকান্ড, রোগীরা থাকতো নিবিড় পরিচর্যায়, নিরাপদে । ছাত্রদের বিকশিত করার আয়োজন হয়েছিলো বইমেলার । বিভাগীয় চেয়ারম্যানগণ সান্ধ্যকালীন রাউন্ড এবং ক্লাশ নিশ্চিত করেছেন । চিকিৎসক- কর্মচারীদের নিশ্চিন্তে অফিস করার জন্য "বেবি ডে কেয়ার" বিভাগ চালু করা হয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘর-আঙ্গিনা ২৪ ঘন্টা পরিছন্ন রাখার ধারাবাহিকতায় সপ্তাহব্যাপী "পরিষ্কার পরিছন্ন সপ্তাহ" পালন করা হয় । বহির্বিভাগে ৩,০০০ থেকে ৯,০০০ রোগী বৃদ্ধি পায় । ভিআইপি রোগীরা বিদেশ বাদ দিয়ে অত্র হাসপাতালের চিকিৎসায় সন্তোষ প্রকাশ করে । আইসিইউ, অস্ত্রোপচারসহ সকল সেবার সুযোগ বৃদ্ধি করা হয় ,ক্রয় করা হয় নতুন নতুন আধুনিক যন্ত্রপাতি ।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও প্রেরণা নিয়ে আগস্ট মাসব্যাপী যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছি পরবর্তী সময়ে তার ধারাবাহিকতা সবসময় নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রক্ষা করা হয় । ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের সাথে সুসম্পর্কের মাধ্যমে কর্মচাঞ্চল্য ও গতিশীলতা বজায় থাকে । প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে সকল শিক্ষক, চিকিৎসক, ছাত্র,কর্মকর্তা ,নার্স, কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয় কে আপন করে নেয় - সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় । প্রতিমাসে "বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদ" নামে একটি বুলেটিন প্রকাশিত হতো । বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় আইন, বিধি-প্রবিধান , সিন্ডিকেটে ও একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ।

শিক্ষা,সেবা ও গবেষণায় সাফল্যসহ প্রশাসনের বহুমুখী কর্মকান্ডের ফলে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক গবেষণা ফেডারেশন যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস ও স্পেনের সিমাগো রিসার্চ গ্রুপ পরিচালিত জরিপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব সেরা তালিকায় সম্মানজনক স্থান অর্জন করে । জরিপে দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার চিকিত্সা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারতের একটি ইনস্টিটিউট এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে ছিলো অন্যান্য সকল চিকিত্সা প্রতিষ্ঠান । বাংলাদেশের ইতিহাসে চিকিত্সা ক্ষেত্রে এটিই একমাত্র বিরল আন্তর্জাতিক সম্মান এবং স্বীকৃতি ।

এভাবে যদি আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতির পিতার আদর্শ ওস্বপ্ন অনুসরণ করি তাহলে সেখানে সফলতা অবশ্যসম্ভাবী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- আমরা তোমাকে ভুলবো না । যতদিন বাংলার ভূখণ্ড থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবে আমাদের হৃদয়ে , কাজে-কর্মে । বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো- এই হোক এবারের জাতীয় শোক দিবস ও আগস্টের প্রতিজ্ঞা ।

লেখক : সাবেক উপাচার্য , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

এইচআর/এমএস