শেখ আনোয়ার
Advertisement
করোনাভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত বিশ্বব্যাপী বহুল আলোচিত রোগ। ওষুধ নেই। তাই দিনদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মাস্ক পরলে জীবাণু বহনকারী ড্রপলেট থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই করোনাভাইরাস সংক্রমণ থামাতে পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরা উচিত। এই নির্দেশনার পর যেসব দেশ আগে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেনি, যেমন ব্রিটেন- তারাও প্রকাশ্য স্থানে, গণপরিবহনে এবং দোকানপাটের ভেতরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে। ফ্রান্সে যেসব প্রকাশ্য স্থানে লোকের ভীড় হয়, সেখানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভাইরাস ঠেকাতে মাস্ক এখন অন্যতম এক পরিধানের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে মাস্ক নিয়ে নানা ঠাট্টা-বিদ্রুপও চলছে। যুক্তরাষ্ট্রে বহু লোকই প্রকাশ্য স্থানে মাস্ক পরতে চান না। এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও মাস্ক নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছেন বহুবার। দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে এমনকি জনসভায়ও মাস্ক পরেননি। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বরিস জনসন উভয়কেই সম্প্রতি প্রকাশ্যে মাস্ক পরতে দেখা গেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের অনেককে ফেস মাস্ক না পরা অবস্থায় দেখার পর স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ক’দিন আগে হুঁশিয়ারি দেন যে, কোন সদস্য অধিবেশন কক্ষে মাস্ক না পরলে তাকে বের করে দেবেন। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ আমেরিকার অনেক মানুষ এখনো বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরার নির্দেশ মানতে রাজি নন। তারা মনে করেন, নাগরিক কী পরবেন না পরবেন গণতান্ত্রিক সেই স্বাধীনতার প্রতি এটা একটা হুমকি। আমেরিকার বহু জায়গায় মাস্ক পরার নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে। ব্রিটেনের বিখ্যাত লেখক ও কলামিস্ট পিটার হিচেন্স রক্ষণশীল ‘দ্য ডেইলি মেইল’ পত্রিকায় এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘মুখে ঢাকনা দেয়াটা আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের চিহ্ন এবং এর মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যতম মুক্ত একটা দেশের মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়।’ তার মতে, ‘মাস্ক পরার অর্থই হচ্ছে আপনি এই সামাজিক পরিবর্তনকে মেনে নিচ্ছেন।’
মাস্ক পরা নিয়ে এমন গোয়ার্তুমি, ঠাট্টা-বিদ্রুপ কম হয়নি অতীতেও। বিশ শতকের শুরুর কথা। তখন প্লেগে উজাড় চীন। এসময় হাসপাতালে চিকিৎসায় নিয়োজিত এক তরুণ চীনা চিকিৎসক বললেন, ‘মাস্ক পরলেই আটকাবে মহামারী।’ ত্রিশ বছর বয়সী পাঁচ ফুট দু’ইঞ্চির পুঁচকে ডাক্তারের চেহারার প্রায় পুরোটাই বিরাট আর্মচেয়ারে ডুবে রয়েছে। পুঁচকে হলে কী হবে? লিভারপুলে ‘স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এ স্যার রোনাল্ড রসের অধীনে এক বছর পোস্টগ্রাজুয়েট রিসার্চ করেছেন তিনি। তারপর ম্যালেরিয়া ও টিটেনাস নিয়ে গবেষণা করেন প্যারিসের পাস্তুুর ইনস্টিটিউটে। চশমার আড়ালে ঝিলিক দিয়ে উঠছে আত্মবিশ্বাসী তরুণের উজ্জল দু’টো চোখ। শান্ত মুখে হাসছেন আর হাসতে-হাসতেই আবারও বললেন, ‘মাস্ক পরলেই আটকাবে মহামারী’। কথাটা শুনে পাশে থাকা সহকর্মী ফরাসি অধ্যাপক ডাক্তার জেরাল্ড মেনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছেন। কী বলে দু’দিনের এক পুঁচকে ডাক্তার? একটা কাপড়ের টুকরো জীবাণু আটকাবে! যুদ্ধং দেহি হয়ে হুমকি দিলেন তাকে, দেখে নেবেন। তারপর চেয়ার ছেড়ে উঠে ক্ষিপ্ত বাঘের মতো পায়চারি করছেন। মাস্ক নিয়ে শুরু হলো তার নানা বিদ্রুপ। তার দিকে আঙুল তুলে গনগনে চোখে হুমকি দিলেন, ‘এই যে চাইনিজ পুঁচকে। তোমার এতো সাহস যে, তুমি আমার কথা খারিজ করে আকাশ-কুসুম তত্ত্ব আওড়াচ্ছো! দেখে নেবো তোমাকে।’ ব্যস। রাগে গজগজ করতে করতে তখনই প্লেগ-রোগীর অস্ত্রোপচার করলেন মাস্ক ছাড়াই। তারপর বাকিটা ইতিহাস।
Advertisement
আমার কথা নয়। ‘মাস্ক’ নিয়ে এতক্ষণ যা শুনলেন, মাস্কের আবিষ্কর্তা চীনা চিকিৎসক উ লিয়েন থে নিজের আত্মজীবনীতে সে দিনের কথা বিস্তারিত লিখে গেছেন। তার প্রকৃত নাম গো লেয়ান টাক। জন্ম ১৮৭৯ সালে, মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে। বাবা ছিলেন স্বর্ণকার। চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারের পদ্ধতির জনক হিসাবে লিয়েন থে-কে পৃথিবীর চিকিৎসক মহল আজও কুর্নিশ করে চলে। তার আগে মাস্কের ব্যবহার ছিলো বটে। তবে কেবল অস্ত্রোপচারের সময় পর্যন্ত। ১৯১০-১১ সালে চীনের উত্তর-পূর্বাংশে শুরু হয় ভয়াবহ মাঞ্চুরিয়ান প্লেগ বা নিউমোনিক প্লেগ। প্লেগ প্রতিরোধে উ লিয়েন থে-র অবিশ্বাস্য ভূমিকা এবং সেই প্লেগের উৎস চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়ায় নোবেল পুরস্কারের জন্য তার নাম মনোনীত হয়। এই চিকিৎসা-বিজ্ঞানীর দেখানো পথ ধরে এখনও গোটা বিশ্বে ইনফ্লুয়েঞ্জা, স্প্যানিশ ফ্লু থেকে শুরু করে হালের সার্স বা কোভিড ১৯ বা করোনা রুখতে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহৃত হচ্ছে।
ঠিক যে পদ্ধতিতে লিয়েন থে ‘অ্যান্টি-প্লেগ মাস্ক’ তৈরি করেছিলেন, আজও সেই পদ্ধতিই চলছে। বদলায়নি। তবে লিয়েনের পথ মোটেই মসৃণ ছিলো না। এশিয়ার একটা দেশের বিজ্ঞানী হয়ে প্রথাভাঙা রাস্তায় হাঁটার সাহস দেখানো অতো সোজা কথা নয়। স্বাস্থ্য পরিসেবায় যুগান্তকারী তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে পদেপদে বাঁধা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ আর হেনস্থার মুখে পড়েছেন তিনি। কিন্তু না। আত্মবিশ্বাস আর নিজের কাজের উপর একটুও আস্থা হারাননি। তথ্য-প্রমাণ-যুক্তির সঠিক মিশেলে তার পদ্ধতিকে তিনি গ্রহণযোগ্য করে তোলেন পৃথিবীর সর্বত্র। ১৯১০ সালের শরৎকাল। চীন ও রাশিয়ার সীমান্তবর্তী মানঝাউলি নামক শহরে শুরু হলো প্লেগ। ঝড়ের গতিতে রোগ ছড়িয়ে পড়লো দক্ষিণের দিকে মাঞ্চুরিয়ার হারবিন ও অন্য শহরে। বিশেষত হারবিনে পোকামাকড়ের মতো মানুষ মরতে লাগলো। মৃত্যুহার প্রায় ১০০ শতাংশ। যারাই আক্রান্ত হচ্ছেন; তারাই মরছেন। রাস্তায় মৃতদেহের স্তূপ। সেই সময় মাঞ্চুরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল চীন, জাপান ও রাশিয়ার অধীনে ছিলো। তাই তিন সরকারই পড়লো ঘোরতর দুশ্চিন্তায়। কোনও ভাবে রোগ আরও ছড়ালে বিপদ গোটা বিশ্বের। সে কথা বুঝে ইউরোপ আর আমেরিকাও উদ্বিগ্ন হয়ে ডাক্তার দল পাঠানো শুরু করলো।
চীনের ইম্পিরিয়াল কোর্ট, চিকিৎসকদের যে দলকে প্লেগ মোকাবিলার জন্য পাঠালো, তার প্রধান নিযুক্ত হলেন মালয়েশিয়ায় জন্মানো কেমব্রিজ-পাস চীনা তরুণ ডাক্তার উ লিয়েন থে। তারিখটি ১৯১০ সালের ১৯ ডিসেম্বর। আক্রান্ত এলাকায় কিছুদিন সরেজমিনে ঘুরে দেখে উ লিয়েন থে যা বার্তা দিলেন, তাতে অনেক চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরই ভুরু কুঁচকে গেলো। লিয়েন থে জানালেন, এই প্লেগের ধরন অন্য প্লেগ থেকে আলাদা। এটা অসুস্থ প্রাণি থেকে মানুষের মধ্যে এলেও রোগ ছড়ানোর জন্য কোনো মানুষ বাহক আর প্রয়োজন হচ্ছে না। রোগ ছড়াচ্ছে বাতাস-বাহিত হয়ে। এটি নিউমোনিক প্লেগ। আর তাই রোগ আটকাতে নাক-মুখ ঢাকতে হবে। ততোদিন পর্যন্ত ধারণা ছিলো, প্লেগ ছড়ায় শুধু ইঁদুর বা মাছির মতো প্রাণির মাধ্যমে। জাপান, ফ্রান্স, রাশিয়ার অনেক বিজ্ঞানী, গবেষকের বিদ্রুপে বিদ্ধ হতে হলো চীনা তরুণ ডাক্তার উ লিয়েন থে-কে।
করোনাকালে যুক্তরাষ্ট্র যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে বিদ্রুপের আচরণ করেছে, ঠিক তেমনই। সমালোচনার জেরে লিয়েন থে-কে চীনা মেডিক্যাল টিমের প্রধানের পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলো। তার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য ১৯১১ সালের ১১ জানুয়ারি টিয়েন্টসিনের পেইয়াং মেডিকেল কলেজের ফরাসি চিকিৎসক-অধ্যাপক জেরাল্ড মেনি এসে পৌঁছলেন মাঞ্চুরিয়ায়। তার প্লেগ মোকাবিলার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলো। তিনি কিছুতেই লিয়েন থে-র বাতাসবাহিত সংক্রমণ তত্ত্ব মানবেন না। মাস্ক নিয়েও মতভেদ চরমে উঠলো তার। যেদিন তিনি লিয়েন থে-কে দেখে নেওয়ার হুমকি দিলেন, সেদিনই প্লেগ হাসপাতালে চলে গেলেন। চীনের চিকিৎসককে ভুল প্রমাণিত করতে মাস্ক ছাড়াই এক প্লেগ-আক্রান্তের অস্ত্রোপচার করলেন। এর দিন-কয়েকের মধ্যেই প্লেগ-আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলো ফরাসি চিকিৎসক-অধ্যাপক জেরাল্ড মেনি-র। গোটা বিশ্ব চমকে উঠলো। বায়ুবাহিত জীবাণু-সংক্রমণ আটকাতে মাস্কের অপরিসীম গুরুত্ব নিমেষে স্বীকৃতি পেয়ে গেলো। প্রশাসন থেকেও মাস্ক পরার জন্য ব্যাপক প্রচার শুরু হয়ে গেলো। রাস্তায় নাকে-মুখে মাস্ক বা কাপড়ের আচ্ছাদন ছাড়া কাউকে দেখতে পাওয়া গেলো না। বিজ্ঞান লেখক ও গবেষকরা গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে লিয়েন থে-র মাস্কের অসামান্য ভূমিকা প্রশংসা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি করলো। লেখালেখি প্রচারণার কারণে মাস্ক ব্যাপারটা ঠিক কী রকম কার্যকর, এই প্রথম মানুষ উপলব্ধি করতে পারলো।
Advertisement
চীনের মাঞ্চুরিয়ার লিয়েন থে-র বদৌলতে সে যাত্রায় জিতে যায় চীন। তবুও প্রায় ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যুর পর মাঞ্চুরিয়ায় ধীরে-ধীরে কমে আসে প্লেগের সংক্রমণ। ১৯১১-র ১ মার্চ শেষ কেস নথিভুক্ত হয়। তখন থেকেই সংক্রামক রোগের মহামারীর মোকাবিলার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সংযোজিত হলো। পোশাকের সঙ্গে যুক্ত হলো এক নতুন অনুষঙ্গ। এই মাস্ক। এই মাস্ক তৈরির জন্য লিয়েন থে সাহায্য নিয়েছিলেন ন’ইঞ্চি চওড়া দু’টো সার্জিক্যাল গজের টুকরোর। তাদের মাঝখানে ছ’ইঞ্চি-চার ইঞ্চির একটা তুলোর টুকরো রেখে সেলাই করে দেওয়া হয়। সার্জিক্যাল গজের দু’প্রান্ত দড়ির মতো করে কাটা থাকতো। যাতে কানের উপর দিয়ে নিয়ে মাথার পেছনে বাঁধা যায়। নাক থেকে শুরু করে থুতনির নিচ পর্যন্ত যাতে ঢাকা থাকে সেটা নিশ্চিত করা হতো। এর প্রায় সাত বছর পর, ১৯১৮ সালে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে স্প্যানিশ ফ্লু-র প্রকোপের সময় ‘মাস্ক’ পরা বাধ্যতামূলক করা হলো।
আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস, সান্টা ক্রুজ বা অ্যারিজোনার মতো শহরে জারি হলো ‘ফেস মাস্ক অর্ডিন্যান্স’। মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বেরোলেই অর্থদণ্ড বা হাজতবাস। একই নিয়ম মানা হলো ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে। মাস্ক ব্যবহারের গণসচেতনতার জন্য মাস্ক নিয়ে লেখা হলো গান ‘ওবে দ্য লজ/ওয়্যার দ্য গজ/প্রটেক্ট ইওর জস/ফ্রম সেপটিক পজ।’ শুধু মাস্ক পরার প্রচলনই নয়, মাঞ্চুরিয়ান প্লেগ নিয়ন্ত্রণে আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নিয়েছেন লিয়েন থে। লিয়েন থে-র সাহায্যে মহামারী রোগের গোটা বিষয়টির রহস্যভেদ সহজ হয়। তার নির্দেশেই তৈরি হয় নতুন প্লেগ হাসপাতাল। চীন-জাপান-রাশিয়ার মধ্যে সাময়িকভাবে স্থগিত হয় ট্রেন চলাচল। সংক্রমণ আটকাতে রাস্তায় পড়ে থাকা প্রায় দু’হাজার মৃতদেহের যথাযথ সৎকারের ব্যবস্থা করা হয় তার নির্দেশ মেনে। ১৯৬০ সালে মালয়েশিয়ায় নিজ গ্রামের বাড়িতে মারা যান মাস্কের এই আবিষ্কারক বিজ্ঞানী উ লিয়েন থে। তিনি নেই। কিন্তু তার মাস্ক আজও মানুষের নাকে-মুখে বসে থেকে জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে।
যদিও অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনায় সুস্থতার হার বেশি, মৃত্যু হারও কম। কিন্তু করোনার দাপাদাপি থেমে নেই। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমিত মানুষদের ৪০ শতাংশের দেহেই কোন উপসর্গ দেখা যায় না।’ গবেষকরা বলছেন, ‘ফেসমাস্ক পরলে শরীরের ভেতর হয়তো অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণ করোনাভাইরাস ঢুকতে পারে। সেক্ষেত্রে হয়তো তার উপসর্গ হবে খুবই মৃদু বা আদৌ কোনো উপসর্গ দেখা যাবে না।’ তার মানে, তারা যদি প্রকাশ্য স্থানে অন্য মানুষদের সংস্পর্শে আসেন বিশেষ করে বাস-মিনিবাস-ট্রেনের মত গণপরিবহনে যাতায়াত করার সময় অন্যদের কাছাকাছি আসেন। তাহলে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিটা বেড়ে যায়। নতুন কিছু গবেষণায় মাস্ক পরার উপকারিতার প্রমাণ মিলেছে।
বলা হয়েছে, মাস্ক সংক্রমণের মাত্রা কমাতে পারে। বাংলাদেশে প্রকাশ্য স্থানে মাস্ক পরার জন্য সরকারি নির্দেশনা থাকলেও কে শোনে কার কথা? সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও লোকে মাস্ক পরতে চায় না। বিশেষত খোলা বাজারগুলোয়। যেখানে প্রচুর জনসমাগম হয়। সেখানে বহু লোককেই মাস্ক ছাড়া কেনাবেচা করতে দেখা যায়। মুখে মাস্ক থাকলেও তা নামিয়ে রাখা হয় থুতনির নিচে। কারও মাস্ক থাকে পকেটে। আবার কারো মাস্ক দেখা যায় এক পাশ থেকে খোলা। কান থেকে ঝুলছে। মাস্ক পরেন না পথচারী থেকে শুরু করে দোকানদার পর্যন্ত। বাংলাদেশের মানুষ অজুহাত মাস্টার। মাস্ক নিয়ে চলে ঠাট্টা-বিদ্রুপ। বাড়িতে মাস্ক আছে। কিন্তু বাজারে আসার সময় মনে থাকে না মাস্কের কথা। আবার মাস্ক পড়লে চশমা ঘোলা হয়ে যায় বলে অনেকের দেখতে অসুবিধা হয়। আবার অনেকের মাস্ক পরে থাকলে কথা বলতে বা অন্যের কথা বুঝতে অসুবিধা হয়। মাস্ক না পরা থাকলে তারা কথা বুঝতে পারে। আর গরম লাগার অজুহাত তো রয়েছেই।
মনে রাখতে হবে, করোনায় আক্রান্ত কোনো রোগীর মুখের লালা রস বা কোনো সংক্রমিত এলাকার সংস্পর্শে এলে অন্য মানুষ সংক্রমিত হবেন। এতে কোন রেহাই নেই। এক্ষেত্রে মাস্ক পরা থাকলে চট করে কোনো সুস্থ মানুষের নাকে বা মুখে আক্রান্তের থুতু যাওয়া সম্ভব নয়। তাই মাস্ক পরলে অনেকটাই নিরাপদে থাকা যায়। মাস্কের সাহায্যে অনেক দেশই সংক্রমণের হার কমাতে সক্ষম হয়েছে। সুতরাং আমাদের প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে হবে। দূরত্ব বিধি বজায় রেখে মাস্ক পড়তেই হবে। মাস্ক পরার ফলে সংক্রমণ বেড়েছে, এমন তথ্য কোথাও পাওয়া যায়নি। তাই বাঁচতে হলে নিজের চেষ্টা নিজে করি। চলুন সবাই নিয়ম মেনে মাস্ক পরি।
লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এসইউ/এএ/পিআর