নতুন সংস্করণ চালুর পর প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। লেনদেনের ক্ষেত্রে নানা বিড়ম্বনায় পড়েন বিনিয়োগকারীরা। এর প্রেক্ষিতে ডিএসইকে শোকজ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
Advertisement
গত বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) বিএসইসির কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে শোকজের চিঠি ধরিয়ে দেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে ওয়েবসাইটে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি শেয়ারবাজারে প্রি-ওপেনিং এবং পোস্ট ক্লোজিং সুবিধা চালুর বিষয়ে ডিএসই থেকে পাঠানো একটি চিঠির ভাষাও বিএসইসিকে বিব্রত করেছে। ফলে এ বিষয়ে নতুন করে আর একটি চিঠি দিয়েছে ডিএসই।
শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতি বেড়ে যাওয়ায় কয়েকদিন ধরেই ডিএসইর মাধ্যমে লেনদেন করতে সমস্যায় পড়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা। ডিএসইর সফটওয়্যার ক্রয়-বিক্রয়ের আদেশ নিতে দীর্ঘ সময় নেয়ার পাশাপাশি মাঝে মধ্যে কোড পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার অভিযোগও ওঠে। এ বিষয়ে জাগো নিউজে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
Advertisement
এ পরিস্থিতিতে হুট করেই গত বুধবার (১৯ আগস্ট) থেকে নতুন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লেনদেন শুরু করে ডিএসই। নতুন এ সংস্করণ চালুর পর থেকেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে বিড়ম্বনায় পড়েন বিনিয়োগকারীরা। এমনকি একই সময়ে সূচক এক ডিভাইসে ঋণাত্মক, আর এক ডিভাইসে পজিটিভ দেখানোর ঘটনাও ঘটে।
অথচ ওয়েবসাইটের নতুন সংস্করণ চালুর আগে মঙ্গলবার ডিএসই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, আপডেট সাইটটি খুব ব্যবহারবান্ধব ও রেসপনসিভ হবে। যা ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী প্রদর্শনের ব্যবস্থা এবং এক্সিলারেটেড মোবাইল পেজের (এএমপি) বৈশিষ্টগুলোর সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামঞ্জস্য করবে।
এ নিয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার পরপর দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাগো নিউজ। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডিএসইর এমডিকে বিএসইসির কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাৎক্ষণিক শোকজের চিঠি ধরিয়ে দেয়া হয়।
ডিএসইর ওয়েবসাইটের জটিলতা ও শোকজের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, সার্ভিল্যান্সকে সমস্যার বিষয়টি দেখার জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। ডিএসইকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
Advertisement
‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ডিএসইর সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি এবং তাড়াতাড়ি সমস্যা সমাধান করতে বলা হয়েছে। ওরা শুক্রবার ও শনিবার কাজ করছে। তারপরও হয়তো কিছু সমস্যা থাকতে পারে। আমরা সবকিছু ক্ষতিয়ে দেখছি’ বলেন রেজাউল করিম।
ডিএসইর এমডি কাজী ছানাউল হক জাগো নিউজকে বলেন, বাহির থেকে আমাদের ভেন্ডর (সফটওয়্যারের সেবাদাতা) ওয়েবসাইট আপডেট করার জন্য বলেছিল। সে কারণেই আমরা আপগ্রেড করছি। এটা ইনস্টল করতে গিয়ে প্রথম অবস্থায় আইটিতে একটু সমস্যা হয়েছিল।
তিনি বলেন, এটা না করলেও সমস্যা, আবার করতে গিয়ে সমস্যা হয়ে যায়। এখন এটা মোটামুটি একটা অবস্থায় আসছে। সবথেকে বড় কাঁটা ওয়েবসাইট অনেক সময় হ্যাক হয়ে যায়।
বিএসইসির শোকজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টেকনিক্যাল পাঠে সমস্যা হয়ে গেলে, সে ক্ষেত্রে আমরা যাদের কাছ থেকে আইটি সাপোর্ট পাই তাদের সাজেশন ইমপ্লিমেন্ট করতে হবে। সেটা করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হলে অফিসিয়াল ব্যবস্থা তো নেয়া হবেই।
যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) জিয়াউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, আইটি বিভাগের প্রধান হওয়ার কারণে ডিএসই থেকে আমাকে শোকজ করা হয়েছিল, আমি সকলের উত্তর দিয়ে দিয়েছি। বিএসইসিকে শোকজের উত্তর দেয়া হয়েছে কিনা সেটা আমি জানি না।
তিনি বলেন, ওয়েবসাইটের যে সমস্যা হচ্ছিল সেটা সমাধানের আমরা কাজ করছি। আজ কোন সমস্যা হচ্ছে সে ধরনের তথ্য আমরা পাইনি।
এদিকে প্রি ওপেনিংয়ে জন্য ১৫ মিনিট এবং পোস্ট ক্লোজিংয়ের জন্য ১০ মিনিট অতিরিক্ত সময় চেয়ে বিএসইসির কাছে আবেদন করে ডিএসই। তবে এ-সংক্রান্ত চিঠির ভাষা বিএসইসিকে বিব্রত করে। এর প্রেক্ষিতে একই বিষয়ে আর একটি চিঠি দেয় ডিএসই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর এমডি জাগো নিউজকে বলেন, মার্কেট ফ্রেন্ডলি আমরা চিন্তা করছি। ভাষাগত ত্রুটি থাকলে সেটা সমস্যা না, এটা হতে পারে। আমার কথা হলো এটা এমন একটা জিনিস প্রি ওপেনিং থাকলে ১৫ মিনিট আগে অর্ডার প্লেস করলে লোড কমে যায়। আমাদের বোর্ড এটা করতে চেয়েছে এবং ওটাই আমরা ওখানে (বিএসইসি) পাঠিয়ে দিয়েছি।
বর্তমানে শেয়ারবাজার একটি ভালো অবস্থানে রয়েছে, এ পরিস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনায় আপনারা বিব্রত কি না? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অবশ্যই। এখন প্রতিটা মুহূর্তে আমাদের টেনশন করতে হয়, যাতে কোনো সমস্যা না হয়।
এমএএস/বিএ/পিআর