চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি চাকরিজীবীদের কাজে উদ্বুদ্ধ করতে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের পরিবারকে ইতোমধ্যে ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু হয়েছে। এবার পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রথম ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা পাচ্ছে করোনায় মারা যাওয়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের নগর গোয়েন্দা (দক্ষিণ) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমানের পরিবার।
Advertisement
গত বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক মঞ্জুরি পত্রে এ বিষয়ে সম্মতি প্রদান করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
একে বলা হয়, উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে তার স্ত্রী ও ওয়ারিশরা সরকার ঘোষিত ক্ষতিপূণ পেতে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে আবেদন করেছেন। পুনরায় বিবাহ না করার অঙ্গীকার নামাও দাখিল করেছেন তার স্ত্রী। এছাড়া মিজানুর রহমান ৫ম গ্রেডে বেতনভুক্ত ছিলেন। তাই তার পরিবারের অনুকূলে ৫০ লাখ টাকা পরিশোধে সম্মতি দেয়া হলো।
করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ১৩ জুলাই ভোর সাড়ে ৩টায় রাজধানী ঢাকায় রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিজানুর রহমান।
Advertisement
এদিকে এর আগে গত ২৭ জুলাই প্রথম ক্ষতিপূরণ সম্মতি দেয়া হয় প্রয়াত প্রতিরক্ষা সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী এবং সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক মো. মঈন উদ্দিনের পরিবারের অনুকূলে। উভয় পরিবারের নামে ৫০ লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি টাকা মঞ্জুরি দিতে দুটি আলাদা চিঠি পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাব কর্মকর্তার কাছে।
অর্থ বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ স্বাক্ষরিত উভয় চিঠিতে বলা হয়, তাদের স্ত্রীদের কাছে ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর করবেন অর্থ বিভাগের ড্রইং অ্যান্ড ডিসবার্সিং অফিসার (ডিডিও)।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ‘স্বাস্থ্যঝুঁকি বাবদ ক্ষতিপূরণের জন্য বিশেষ অনুদান’ খাতে যে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে, তা থেকে এ ব্যয় করা হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো তিনজনের শরীরে শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। শনাক্তের কয়েকদিন পরই ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে সরকার কয়েক ধাপে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করে। কিন্তু সাধারণ ছুটিতে ও এর পরবর্তী সময়েও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
Advertisement
এমন পরিস্থিতিতে সরকারি চাকরিজীবীদের কাজে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল- কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ গ্রেডভেদে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পাবেন। আর মারা গেলে পাবেন ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে গত ২৩ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ সংক্রান্ত সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরাসরি আর্থিক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
ওই পরিপত্রে আরও বলা হয়, ২০১৫ এর বেতন স্কেল অনুযায়ী, ১৫-২০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন পাঁচ লাখ, মারা গেলে পাবেন ২৫ লাখ টাকা। ১০-১৪তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন সাড়ে সাত লাখ এবং মারা গেলে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া প্রথম-নবম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন ১০ লাখ এবং মারা গেলে ৫০ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের সবার জন্য স্বাস্থ্যবীমার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বীমার ক্ষেত্রে সরকারকেই প্রিমিয়াম দিতে হবে। এছাড়া বীমার টাকা পেতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে সরাসরি আর্থিক সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এমইউএইচ/এমএসএইচ