করোনা যখন ভারতকে চেপে বসছিলো ক্রমশ তখনই দেশটির জনপ্রিয় তারকা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর খবর এলো। তার মৃত্যুতে তোলপাড় ঘটে গেল বলিউডে। চলতি বছরের ১৪ জুন সুশান্ত সিং রাজপুত মারা গেলেন। নিজ বাসায় তাকে উদ্ধার করা হলো ঝুলন্ত অবস্থায়।
Advertisement
তারপর থেকেই সুশান্তের মৃত্যু নিয়ে নানা ভাগে বিভক্ত হয়েছে ইন্ডাস্ট্রি। কারণে-অকারণে অনেককেই বিদ্ধ করা হচ্ছে এই অভিনেতার মৃত্যুর দায় চাপিয়ে। নায়কের প্রেমিকা, বন্ধু, অনেক সহকর্মী পরিচালক- প্রযোজক ও তারকাদের নাম এসেছে যাদেরকে সুশান্তের মৃত্যুর প্ররোচণাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখনো সেসব নিয়ে বিতর্ক চলমান।
এদিকে নতুন করে সুশান্তের মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ভারতের গোয়েন্দা বিভাগকে। এরইমধ্যে পাঁচ ভাগে দল গঠন করে কাজ শুরু করে দিয়েছে সিবিআই। বেশ কিছু তথ্য তারা ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছেন যা এই মৃত্যুরহস্যে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তার ভিড়ে ইন্ডিয়া টুডেকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে প্রয়াত অভিনেতার বাবুর্চি নীরজ সিং বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন সুশান্ত সিং রাজপুত মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে কী করছিলেন।
Advertisement
১৪ জুনের ঘটনাবলির কথা স্মরণ করে নীরজ সিংহ বলেলেন, ‘১৪ জুন সকালে তিনি সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠেছিলেন। আমি গেটের কাছে পরিষ্কার করার সময় তিনি বেরিয়ে এসেছিলেন। সুশান্ত স্যার আমাকে শীতল জল দিতে বলেছিলেন। তাকে আমি তাত্ক্ষণিকভাবে জল দিয়েছিলাম। তিনি তখন আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন নীচে সবকিছু ঠিক আছে কিনা। আমি ‘হ্যাঁ’। তিনি মুচকি একটি হাসি দিয়ে তার ঘরে চলে গেলেন।’
‘১০টা থেকে সাড়ে ১০টার দিকে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তিনি নাস্তার জন্য কী চান? তিনি নারকেল জল, কমলার রস এবং কলা চেয়েছিলেন। নাস্তার পর ঘরে ঢুকে সেটি তালাবদ্ধ করলেন। কেশব (অন্য বাবুর্চি জিজ্ঞাসা করতে গেলেন তিনি লাঞ্চে কী খাবেন। তার সাড়া পাওয়া যায়নি। দরজায় বারবার কড়া নাড়লেও তিনি সাড়া দেননি। তখন আমরা ১০-১৫ মিনিট পর আবার নক করলাম কিন্তু কোন সাড়া পেলাম না। উনার বন্ধু সিদ্ধার্থ স্যারের কাছে সুশান্ত স্যারের নাম্বার ছিল। তিনি তাকে ফোন করেছিলেন কিন্তু কোনো উত্তর মেলেনি’- যোগ করেন নীরজা।
তিনি আরও বলেন, ‘তারপর আমরা রুমের চাবির সন্ধান করেও এটি খুঁজে পেলাম না। খানিক পর সুশান্তের বোনকে ডাকলাম বাসায় আসার জন্য। তিনি বললেন দ্রুত তালা ভাঙার ব্যবস্থা করতে। তিনিও আসছেন দ্রুত। আমরা তালা ভাঙার লোক ডাকলাম। ওই লোক এসেই পাঁচ মিনিটের মধ্যে সুশান্ত স্যারের রুমের তালাটি ভেঙে ফেললো। আমরা ভেতরে গিয়ে যা দেখলাম তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। সিদ্ধার্থ স্যার, আমি ও দিপেশ প্রথম ঘরে প্রবেশ করে সুশান্ত স্যারকে ফ্যানে ঝুলতে দেখি। সুশান্ত স্যার তার কুর্তা ব্যবহার করেছিলেন ফ্যানে ঝুলার জন্য। এটা স্পষ্ট যে তিনি নিজেই গলায় কুর্তা বেঁধেছিলেন।’
নীরজ আরও প্রকাশ করেছেন তারা অভিনেতার বডিটি নামিয়ে আনেন। সিদ্ধার্থ দেহটি নিচে নামায়। সুশান্তের বোন যখন বাসায় প্রবেশ করে তখন তিনজন মিলে সুশান্তের বুকে চাপ দিচ্ছিলো নিঃশ্বাস স্বাভাবিক রাখার জন্য। কিন্তু সেটা অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো। ততক্ষণে মৃত্যু হয়ে গেছে সুশান্তের। তার শরীর ছিলো অনেক ঠান্ডা।
Advertisement
নীরজ আরও জানান যে আগের রাতে সুশান্ত রাতের খাবার খাননি। কেবল এক গ্লাস আমের মিল্কশেক চেয়েছিল। সেটি খেয়েই তিনি ঘুমাতে গিয়েছিলেন এবং সকালে স্বাভাবিকভাবেই ঘুম থেকে জেগেছিলেন।
নীরজের এই বক্তব্য সুশান্তের ঠান্ডা মাথায় আত্মহত্যাকেই প্রকাশ করে। এখন সেই আত্মহত্যার পেছনের কারণটা কী বা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে কাদের প্ররোচনা রয়েছে সেটাই এখন অনুসন্ধান করবে সিবিআই।
এলএ/জেআইএম