আন্তর্জাতিক

আমিরাতের পথে অন্যান্য আরব দেশ?

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ওই চুক্তিকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

Advertisement

এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। সে বছরের ১৯ নভেম্বর ইসরায়েলে আনুষ্ঠানিক সফর করেন তৎকালীন মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত। ওই সফরে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।

তিনি ইসরায়েলের সংসদে দাঁড়িয়ে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলি দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে কীভাবে শান্তি অর্জন করা যায় সে বিষয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।

তবে তার এই সফরে মর্মাহত হয়েছিলেন তৎকালীন ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। সে সময় এই ঘটনাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে উল্লেখ করে অনেক স্বৈরশাসকই আনোয়ার সাদাতের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেছিলেন।

Advertisement

দু'বছর পর যখন ইহুদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে আনোয়ার সাদাত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন তখন অনেক আরব দেশই পুনরায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সে সময় আরব লীগ থেকে মিসরকে বের করে দেওয়া হয়।

১৯৮১ সালে জিহাদীদের হাতে নিহত হন সাদাত হোসেন। মূলত ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তিই তাদের ক্রোধের মূল কারণ ছিল। ইসরায়েলের সঙ্গে আরব আমিরাতের বর্তমান শান্তিচুক্তি চার দশক আগের ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারণ এতে করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন ঘটছে।

একই সঙ্গে সে সময়ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রহীন অবস্থায় ছিল, তারা এখনও সে অবস্থাতেই রয়েছে। অপরদিকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে ট্রাম্পের মধ্যস্ততায় একটি কথিত ঐতিহাসিক চুক্তিতে উপনীত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েল।

ফিলিস্তিন এ চুক্তিকে তাদের পিঠে ছুরি মারা হিসেবে অভিহিত করে মুসলিম দেশগুলোর জোট আরব লীগ ও অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনকে (ওআইসি) চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানিয়েছে।

Advertisement

ওই চুক্তির মাধ্যমে উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক স্থাপন করল আরব আমিরাত। অনেকেই এই চুক্তিকে যুগান্তকারী আবার কেউ কেউ একে শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে করছেন।

এটা মোটেও গোপন বিষয় নয় যে, ইসরায়েল এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও কাছাকাছি এসেছে। বিশেষ করে তাদের সবারই পরিচিত শত্রু দেশ হচ্ছে ইরান। তেহরানকে কোনঠাসা করতে উঠেপড়ে লেগেছে অনেক আরব দেশ। হয়তো ইরানের ওপর আরও বেশি চাপ প্রয়োগ করতেই ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করেছে আরব আমিরাত।

এদিকে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইরানবিরোধী সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে আমিরাত ও ইসরায়েলের মধ্যে হওয়া এই চুক্তির সমালোচনা করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। তিনি ইসরায়েলকে ‘এ অঞ্চলে পা রাখার সুযোগ’ করে দেওয়ার ব্যপারে আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলোকে সতর্ক করেছেন।

রুহানি বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাদের (আমিরাত) আরও বিবেচনা করা প্রয়োজন ছিল। তারা বিরাট একটা ভুল করেছে, তারা একটা বিশ্বাসঘাতকতার কাজ করেছে। আমরা আশা করবো তারা এটা বুঝতে পারবে এবং এই ভুল পথ বর্জন নিজেদেরকে সরিয়ে নেবে।’

আরব আমিরাত বলছে, ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের এই শান্তি চুক্তি দু'পক্ষকেই সুবিধা এনে দেবে। এর মধ্যেই জানা গেছে যে, দুবাইয়ে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ইসরায়েলের ব্যবসায়ীরা।

ইতোমধ্যেই ইসরায়েল এবং আমিরাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। তাই ধারণা করা হচ্ছে, মিসরের সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তিচুক্তির চেয়ে ইসরায়েল-আমিরাত শান্তিচুক্তি বেশি এগিয়ে। অনেক আরব দেশই এর মধ্যে আমিরাতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। তারাও হয়তো আমিরাতের পথেই হাঁটবে।

অপরদিক, এই শান্তিচুক্তির বড় ক্রেডিট ট্রাম্প প্রশাসনের। সাত মাস আগেই তারা এই শান্তিচুক্তির ব্যাপারে তাদের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেছিল। তবে সে সময় তাৎক্ষণিভাবে ফিলিস্তিনি এবং বেশিরভাগ আরব দেশগুলো এই শান্তিচুক্তির পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছিল।

এদিকে, এই শান্তিচুক্তি যেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জন্য আশীবার্দ হিসেবে ধরা দিয়েছে। নিজ দেশে সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় দেশের জনগণের রোষের মুখে পড়েছেন তিনি। আমিরাতের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি করে রাজনৈতিক লড়াইয়ে কিছুটা হালে পানি পেয়েছেন এই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী।

২০১৯ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রধান প্রতিপক্ষ বেনি গান্তজের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে গত মে মাসে পঞ্চম মেয়াদে ক্ষমতায় বসেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গণমাধ্যমগুলো তাকে নিয়ে পক্ষপাতী খবর প্রচার করেছে বলে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন ডানপন্থী লিকুদ পার্টির এ নেতা। বিভিন্ন অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বর্তমানে তিনটি মামলা চলছে। তবে এসব অভিযোগকে বরাবরই মিথ্য বলে দাবি করেছেন তিনি।

টিটিএন/এমএস