দেশজুড়ে

তাকে খুঁজছে পুলিশ

একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত ও একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার সিকদার লিটন নামে এক প্রতারক ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন সময় থানায় তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টগুলোর কাগজ পৌঁছালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে গেছে। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন সিকদার লিটন।

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, এমন কোনো অপরাধ নেই যার সঙ্গে জড়িত নয় সিকদার লিটন। বিশেষ করে চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও প্রাণনাশের হুমকি, সাইবার অপরাধসহ প্রায় ডজনখানেক মামলার আসামি তিনি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর, খুলনা ও পাবনা জেলায় এসব মামলা রয়েছে। এর মধ্যে খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ। মামলা নং-২৪। চাঁদা দাবি এবং প্রাণনাশের হুমকির অপরাধে এ মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও পাবনার আটঘরিয়ায় একটি সি আর মামলার আসামিও তিনি। মামলার নং-৪৯/১৪। এই মামলাটি করা হয়েছে প্রতারণার অভিযোগে। পাবনার আমিনপুর থানাতেও করা প্রাণনাশের একটি মামলার আসামি তিনি। ২০১৪ সালের ১৮ মে মামলাটি করা হয়। দুস্কর্মের অভিযোগে ২০১৬ সালের ৯ মে তা বিরুদ্ধে একটি মামলা হয় আলফাডাঙ্গা থানায়।

সাইবার অপরাধেও অর্ধডজন মামলার আসামি এই সিকদার লিটন। তার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় দুই ডজনের বেশি সাধারণ ডায়েরিও রয়েছে। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সাইফারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা রটনার অভিযোগ আছে সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সিকদার লিটন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি অভিযোগ করেন সাইফুর রহমান সাইফার। যেটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নিবন্ধিত হয়। যার নম্বর-৮৭৫।

Advertisement

ওইদিনই আলফাডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক স্বপন কুমার ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগটি তদন্তের অনুমতি চান। এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৪ নভেম্বর আদালত তদন্তের অনুমতি দেয়। সেই সঙ্গে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দিতে বলা হয়। পরে পুলিশি তদন্তে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং প্রতিবেদনটি আদালতেও জমা দেয়া হয়। কিন্তু এখনও ওই মামলায় শিকদার লিটনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা এস এম আকরাম হোসেনকে নিয়ে ফেসবুকে নানা ধরনের অপপ্রচার ও সম্মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগ আছে শিকদার লিটন ও তার ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন আকরাম হোসেন। যার নং- ৯৬।

ফেসবুকে অসত্য ও মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এনায়েত হোসেনও শিকদার লিটনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এই দুটো অভিযোগ তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতির অপেক্ষায় আছে পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিকদার লিটনের বাড়ি আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর গ্রামে। ওই গ্রামের সিদ্দিক শিকদারের ছেলে সিকদার লিটন। স্থানীয়দের কাছে তিনি প্রতারক ও ছদ্মবেশী অপরাধী বলেই পরিচিত। এলাকার মানুষকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দফতরে চাকরি দেয়ার নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন শিকদার লিটন। একবার তার হাতে টাকা গেলে সেই টাকা কেউ ফেরত পেয়েছেন এমন নজির নেই। চাকরি তো দূরের কথা, টাকা চাইতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

Advertisement

এসব অপরাধের অভিযোগে একাধিক মামলাও আছে তার বিরুদ্ধে। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর লিটন ভুক্তভোগীর ফোন ধরা বন্ধ করে দেন। এসব কারণে আলফাডাঙ্গা ও টগরবন্দ থেকে তাকে বিতারিত করা হয়। তিনি বেশি দিন এক মোবাইল নম্বর ব্যবহার করেন না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র বলছে, এলাকা থেকে বিতারিত হওয়ার পর ঢাকা ছাড়াও খুলনার সীমান্ত এলাকা, পাবনাসহ বিভিন্ন জায়গা অবস্থান নিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন সিকদার লিটন। বর্তমানে ভাঙ্গা এবং গোপালগঞ্জে তার অবস্থান বলে জানা গেছে।

এদিকে সম্প্রতি তার প্রতারণার বিভিন্ন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে সিকদার লিটন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে গুজব ছড়াতে থাকেন। মাঝে মাঝে ফেসবুক লাইভে এসে নেতাদের বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক এমপি মো. আব্দুর রহমান, আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম আকরাম হোসেন, আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সাইফারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা রটাচ্ছেন। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে থানায় সাইবার অপরাধে মামলা হয়েছে। যা আদালতের নির্দেশে তদন্তাধীন। প্রতারণার অভিযোগে সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানায় ৫-৭টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। এছাড়াও একাধিক সাইবার মামলার তদন্ত করছে থানা পুলিশ।

পুলিশ বলছে, খুবই চালাক এই প্রতারক প্রতিনিয়ত নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন। যেখানেই অবস্থান করেন সেখানেই মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে সরে পড়েন। বহুরূপী এই প্রতারক বিভিন্ন সময় ডজনখানেক সিম নিজের নামে কিনেছেন।

ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন বলেন, সার্কেল অফিসে লিটনকে ডেকেছিলাম। কিন্তু তিনি হাজির হননি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তার নামে থানায় ওয়ারেন্ট আছে। তবে তিনি এলাকায় নেই। পুলিশ তাকে খুঁজছে। কেউ তার সন্ধান পেয়ে থাকলে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করেন এই কর্মকর্তা।

বি কে সিকদার সজল/আরএআর/এমএস