দেশের ৩৭ জেলায় বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা আবার চাষাবাদ শুরু করে দিয়েছেন। কেউ আমন ধান রোপণ করছেন, কেউ মাসকলাই। আবার কেউবা শুরু করেছেন সবজি চাষ। এভাবে এলাকা অনুযায়ী কৃষকরা বিভিন্ন ফসল আবাদ শুরু করেছেন। যারা আমন ধান রোপণ করছেন তারা বানের পানি জমি থেকে নামতেই চাষ দিয়ে ধান রোপণ করা শুরু করে দিয়েছেন। যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে চাষাবাদে।
Advertisement
কৃষকরা বলছেন, আমন ধান রোপণের এখন শেষ মুহূর্ত চলছে। তাই বানের পানিতে ডুবে যাওয়া ফসলের কথা মনে না রেখে আবার ঘুরে দাঁড়াতে চাচ্ছেন তারা। দেশের বিভিন্ন স্থানে খবর নিয়ে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কৃষকেরা ক্ষতি পুষিয়ে যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য বিভিন্ন প্রণোদনার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার কৃষি উপকরণ দুই লাখ ৩৯ হাজার ৬৩১ জন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এর আওতায় স্বল্পমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি বিভিন্ন শাকসবজি চাষের জন্য প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এক লাখ ৫২ হাজার কৃষককে লালশাক, ডাটাশাক, পালং শাক, বরবটি, শিম, শসা, লাউ বীজ ইত্যাদি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
কমিউনিটি ভিত্তিক বীজতলার মাধ্যমে প্রায় দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা, প্রায় ৭০ লাখ টাকার ভাসমান বেড এবং ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে রোপণের জন্য আমন ধানের চারা উৎপাদন/বীজতলা তৈরি ও বিনামূল্যে বিতরণের কাজ চলছে। সেই বীজতলা থেকে চারা নিয়ে আমন রোপণ করছেন কৃষকরা। এছাড়া প্রায় তিন কোটি ৮২ লাখ টাকায় ৩৫ জেলায় ৫০ হাজার কৃষকের মাঝে প্রায় তিন কোটি ৮২ লাখ টাকার মাসকলাই বীজ, ডিএপি ও এমওপি সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
Advertisement
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বকচর গ্রামের কৃষক আব্বাস আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বানে (বন্যা) সবজি খেত ডুবে গিয়ে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এখন বানের পানি নেমে গেছে। তাই শীতকালীন আগাম সবজি চাষের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’তিনি বলেন, ‘ঋণ করে সবজি খেত করেছিলাম। বানের পানিতে সবজি খেত ডুবে যাওয়ায় সে ঋণ পরিশোধ করতে পারিনি। এবার সে কারণে আগাম সবজি চাষ করছি। ভালো দাম পেলে আগে ঋণ শোধ করব।’
বগুড়ার ধুনট উপজেলার উল্লাপাড়া গ্রামের হেলাল খাঁ জাগো নিউজকে বলেন, ‘যে আউশ ধান ডুবে গেছে সে ধান থাকলে এতদিন কেটে ঘরে তুলতে পারতাম। ভাগ্যের লিখন তো কেউ খণ্ডাতে পারে না! যা হোক বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে আমন ধানের চারা রোপণ করছি। যদিও আমন ধান লাগানোর একদম শেষ মুহূর্ত তারপরও রোপণ করতে হচ্ছে। কারণ এবার ধানের ভালো দাম আছে। তাছাড়া আগামীতেও ভালো দাম পাওয়া যাবে। কারণ বন্যায় হাজার হাজার বিঘা জমির আউশ আমন ধান নষ্ট হয়েছে।’ সিরাজগঞ্জের চরমালশাপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম বললেন, এবারের বানে শুধু ফসলের ক্ষতি হয়নি, অনেকের ঘরবাড়িও ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, আউশ ধান করেছিলাম কিন্তু বানের পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ধান করার আর সময় নেই। তাই দুই বিঘা জমিতে মাসকলাই বুনেছি। এটা তুলে আবার ভুট্টা করব।
এ বছর ৬০ বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে প্রায় সাত লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে একই গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাকের। তিনি বলেন, ‘এটি পূরণ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তারপরও বসে থাকলে তো চলবে না। আবার চাষাবাদ শুরু করেছি।’
এদিকে ইতোমধ্যে ১৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার কৃষি উপকরণ দুই লাখ ৩৯ হাজার ৬৩১ জন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, আরও প্রায় ৭৫ কোটি টাকার প্রণোদনা কর্মসূচি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ অর্থ দিয়ে ৯ লাখ ২৯ হাজার ১৯৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক কৃষককে গম, সরিষা, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী, খেসারি, পিঁয়াজ, মরিচ, টমেটো ইত্যাদি ফসল আবাদের জন্য বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ করা হবে।
Advertisement
পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারিবারিক কৃষির আওতায় সবজি-পুষ্টি বাগান স্থাপন কর্মসূচির আওতায় ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬৪ জেলায় মোট এক লাখ ৪১ হাজার ৭৯২ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ, চারা ও সার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী।
এফএইচএস/এসআর/পিআর