দেশজুড়ে

যশোরে ৩ কিশোর খুন, দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) তিন কিশোর খুন ও নির্যাতনের ঘটনায় কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলা, গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

Advertisement

সমাজসেবা অধিদপ্তরের গঠিত এ তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে রিপোর্ট প্রস্তুত করেছে। বুধবার অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

বুধবার সন্ধ্যায় দুই সদস্য বিশিষ্ট এ তদন্ত কমিটির প্রধান সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) যুগ্ম সচিব সৈয়দ নুরুল বাসির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘটনাটি দুপুরে ঘটলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেননি কর্মকর্তারা। তদন্তে তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। অপর তদন্ত কমিটি সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন জানিয়েছে।

Advertisement

এদিকে, বুধবার বিকেলে কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়কসহ তিন কর্মকর্তাকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ১৭ আগস্ট রিমান্ড শেষে অপর দু’জনকেও কারাগারে পাঠানো হয়।

সূত্র জানায়, গত গত ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোর ‘বন্দিদের’ অমানুষিক মারপিট করা হলে তিন কিশোর নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হয়। পরদিন ১৪ আগস্ট সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) যুগ্ম সচিব সৈয়দ নুরুল বাসিরকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির অপর সদস্য ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রতিষ্ঠান-২) এমএম মাহামুদুল্লাহ। এ তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত সম্পন্ন করেছে। বুধবার অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। পরে অধিদপ্তর তা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে।

‘বন্দি হত্যার’ ঘটনায় কর্মকর্তাদের সরাসরি জড়িত ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির প্রধান যুগ্ম সচিব সৈয়দ নুরুল বাসির বলেন, কারও কারও সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। সেটা ক্রিমিনাল ফ্যাক্ট। ওটা নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। তারা প্রাথমিক তদন্তে সত্যতাও পেয়েছে। ইতোমধ্যে কর্মকর্তাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। পুলিশ চূড়ান্ত তদন্তে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে চার্জশিট দেবে। আমরা মূলত প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করেছি। কেন এমন ঘটনা ঘটলো সেটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। সুপারিশ দিয়েছি, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।

Advertisement

একই দিন (১৪ আগস্ট) যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল লাইছকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয় এ কমিটিকে। বুধবার এ তদন্ত কমিটি আরও সাত দিন সময় চেয়ে আবেদন করেছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মুহাম্মদ আবুল লাইছ বলেন, তিন কিশোর নিহতের ঘটনায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের পাঁচ কর্মকর্তা রিমান্ডে আছেন। তদন্ত কমিটি তাদের বক্তব্য নিতে পারেনি। রিমান্ড শেষ হলে বক্তব্য নেয়া হবে। এজন্য সাতদিন সময় চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে, কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়কসহ তিন কর্মকর্তাকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বুধবার বিকেলে তাদেরকে যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর চাঁচড়া পরিদর্শক রকিবুজ্জামান জানান, রিমান্ডে কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। আপাতত তাদের আর রিমান্ডে নেয়া হবে না। ঘটনায় জড়িত ৮ কিশোরের রিমান্ড আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো তিন কর্মকর্তা হলেন, তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্যা আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক (প্রবেশন অফিসার) মাসুম বিল্লাহ, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলম। এর আগে ১৭ আগস্ট রিমান্ড শেষে কেন্দ্রের আরও দুই কর্মকর্তা সাইকো সোস্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান ও কারিগরি প্রশিক্ষক (ওয়েল্ডিং) ওমর ফারুককে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোর ‘বন্দিদের’ অমানুষিক মারপিট করা হলে তিন কিশোর নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হয়।

এ ঘটনায় ১৪ আগস্ট রাতে নিহত কিশোর পারভেজ হাসান রাব্বির বাবা রোকা মিয়া যশোর কোতোয়ালী থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কর্তৃপক্ষকে আসামি করা হয়। পুলিশ এ মামলায় কেন্দ্রের সহকারী পরিচালকসহ পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করে।

শনিবার (১৪ আগস্ট) তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। শুনানি শেষে যশোরের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহাদী হাসান কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্যা আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক (প্রবেশন অফিসার) মাসুম বিল্লাহ, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলমকে পাঁচদিনের ও সাইকো সোস্যাল কাউন্সিলর মো. মুশফিকুর রহমান ও কারিগরি প্রশিক্ষক (ওয়েল্ডিং) ওমর ফারুককে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই পাঁচ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।

মিলন রহমান/এমএএস/পিআর