সামাজিক দূরত্ব ও সুরক্ষা নীতির বাস্তবায়নসহ বেশকিছু শর্তে বর্ধিত ভাড়ায় গণপরিবহন চালু করেছিল সরকার। এই ভাড়া আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। তবে এর মধ্যে বর্ধিত রহিতকরণ অর্থাৎ পূর্বের স্বাভাবিক ভাড়ায় গণপরিবহন চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদে প্রস্তাবনা পাঠাবে বিআরটিএ।
Advertisement
বুধবার বিকেলে বিআরটিএ’র প্রধান কার্যালয়ে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিআরটিএর উপ-পরিচালক (ইনফোর্সমেন্ট) আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাসের দুই সিটের জায়গায় সিটে একজন করে বসবে এবং বর্ধিত ভাড়ার যে নির্দেশনা সেটাই বলবৎ থাকবে।
৩১ আগস্টের পর থেকে যাতে আগের ভাড়ায় বাসে যাতায়াত করে সে সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে আমরা সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। ভাড়া কমানোর প্রস্তাবনায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবি, সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগগুলোও উল্লেখ থাকবে।
Advertisement
প্রস্তাবনার পাশাপাশি দুই সিটেই যাত্রী বসার প্রস্তাবনা থাকবে। তবে এক্ষেত্রে প্রত্যেক যাত্রীর জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, গাদাগাদি করে যাত্রী না তোলা এবং সুরক্ষার সব ধরনের ব্যবস্থা গণপরিবহনে রাখার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলোও তুলে ধরা হবে প্রস্তাবনায়। বর্ধিত ভাড়াই কার্যকর থাকবে নাকি পূর্বের মতো স্বাভাবিক যে ভাড়া সেটা কার্যকর হবে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রিপরিষদ।
বিআরটিএর সঙ্গে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যকার বৈঠকে অংশ নেয়া বিআরটিএর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এবারের ঈদুল আজহার ঈদ যাত্রায় ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। সব মিলে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদেরও দাবি পূর্বের ভাড়ায় ফিরে যাওয়া। সাধারণ যাত্রীদের পক্ষ থেকে সে ধরনেরই দাবি ও অভিযোগ এসেছে। সব বিষয় আমলে নিয়ে বিআরটিএ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই মাসেই বর্ধিত ভাড়ার নির্দেশনা রহিত করে পূর্বের ভাড়ায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তাবনা পাঠাবে। এক্ষেত্রে মানতে হবে সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি। শুধু থাকবে না এক সিট খালি রাখার নির্দেশনা। অর্থাৎ পাশাপাশি দুই সিটেই যাত্রী বসবেন।
বৈঠকে অংশ নেয়া বাংলাদেশ বাস পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্ধিত ভাড়ার যে নির্দেশনা সেটার কিছু তো ব্যত্যয় ঘটেছেই। তবে বিআরটিএ বা হাইওয়ে পুলিশ কিংবা জেলা পুলিশ তো সেটা কন্ট্রোলও করতে পারেনি বা দেখভাল করা সম্ভবও নয়। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে বর্ধিত ভাড়ার নির্দেশনার কারণে যাত্রীদেরও তো অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়েছে। কিন্তু খেয়াল করুন সবই চলছে স্বাভাবিক নিয়মে। সিএনজি, লেগুনা, প্রাইভেটকার সব জায়গায়ই তো গাদাগাদি। শুধু বাস নিয়েই বেশি সমালোচনা বা প্রশ্ন উঠছে।
তিনি বলেন, আমরা দাবি জানিয়েছি যে, আগের ভাড়ায়ই ফিরে যাওয়া হোক। এক্ষেত্রে যাত্রীরাও অতিরিক্ত ভাড়া থেকে বাঁচবেন আবার গণপরিবহনের শ্রমিকরাও বাঁচবেন। এক্ষেত্রে আমরা মাস্ককে বাধ্যতামূলক করার কথা বলেছি। ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষা নীতি মানাসহ গাদাগাদি করে কোনো পরিবহনে যেন যাত্রী না ওঠে সেটা নিশ্চিত করার কথা বলেছি। এসব এই মাসেই বিআরটিএ প্রস্তাবনা আকারে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কেবিনেটে পাঠাবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সেখানেই হবে। তবে এর আগে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বর্ধিত ভাড়ায়ই চলবে গণপরিবহন।
Advertisement
উল্লেখ্য, গত ৩১ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালুর অনুমতি দেয় সরকার। ঈদুল আজহার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধির বেশ ভালো প্রয়োগেই চলছিল গণপরিবহন। তবে ঈদযাত্রায় ও ঈদ-পরবর্তী থেকে স্বাস্থ্যবিধির ধার ধারছে না গণপরিবহন। অনিয়ম করে যাত্রী বেশি নেয়া হচ্ছে। আদায় করা হচ্ছে বর্ধিত ভাড়াও।
এদিকে গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিআরটিএ চেয়ারম্যানের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বুধবার (১২ আগস্ট) অ্যাডভোকেট মো. আতিকুর রহমানের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হাসিম উদ্দিন এই নোটিশ পাঠান।
গতকাল এক মানববন্ধনে ইসলামী যুব আন্দোলনের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ নেছার উদ্দিন বলেন, ‘করোনার মধ্যে যখন মানুষের পেটে ভাত নেই, পকেটে টাকা নেই, তখন খোড়া অজুহাতে গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ শতাংশ বর্ধিত করা হয়েছে। এখনো চলছে। করোনার আপডেট দেয়াও সরকার বন্ধ করেছে। তাহলে ভাড়া কেন বর্ধিতই থাকবে। এই ভাড়া আর কাল (আজ) থেকে কেউ দেবেন না।’
তিনি আরও বলেন, আজ থেকে প্রত্যেকটি গণপরিবহনে উঠে পরীক্ষা করা হবে। যদি বর্ধিত ভাড়া নেয়া হয়, তাহলে সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে যা করা দরকার তা করতে তারা বাধ্য হবেন বলেও হুমকি দেন তিনি।
জেইউ/এআর/এসএইচএস/পিআর