প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা নিতে চায় না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি বছর পরীক্ষা বাতিলের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বুধবার এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
Advertisement
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে চলতি বছর সমাপনী-ইবতেদায়ি ও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত সপ্তাহে এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের উপস্থিতিতে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর ভিত্তিতে উভয় মন্ত্রণালয়ই পৃথক দুটি সারসংক্ষেপ তৈরি করে। আজ বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, চলতি বছর পঞ্চম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা না নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সম্মতি দিলে এবার সমাপনী-ইবতেদায়ি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে না। যতটুকু পড়ানো হয়েছে তার ওপর ক্লাস মূল্যায়ন করে সনদ প্রদান করা হবে। তা না হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, চলতি বছর ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩১ কর্মদিবস নির্ধারণ করা হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ দিন বিষয়ভিত্তিক পাঠদান দেয়া সম্ভব হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ আছে। এ ছুটির মেয়াদ আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে মোট ৭১ কার্যদিবস বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকবে। পঞ্চম শ্রেণির ৪০৬টি স্বাভাবিক পাঠদান সম্ভব হবে না। তবে সংসদ টেলিভিশনে চলমান ‘ঘরে বসে শিখি’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু অনেকের শিক্ষার্থীর বাসায় টেলিভিশন না থাকায় এবং টেলিভিশন থাকলেও ক্যাবল সংযোগ না থাকায় সকল শিক্ষার্থীকে এ প্রোগ্রামের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
Advertisement
সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির প্রায় ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশন শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে বা অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। সে বিবেচনায় ১২ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ বেতারে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এতে ৯৭ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী-অভিভাবক মোবাইল ও রেডিওর মাধ্যমে এ সুবিধা নিতে পারছেন। এছাড়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকরা যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি পাঠ (নেপ) ও বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটির (বেডু) পরিকল্পনা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী-ইবতেদায়ি ও জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নিতে হলে আরও প্রায় ৫০ কার্যদিবস পাঠদান প্রয়োজন রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যালয়গুলো খোলা না হলে নভেম্বর বা ডিসেম্বরের মধ্যে এ দুই স্তরের অবশিষ্ট পাঠদান সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এ কারণে ২০২০ সালের এ দুই স্তরের পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করে ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে পাস করিয়ে সার্টিফিকেট দেয়ার প্রস্তাব জানানো হয়েছে। তবে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিলের প্রস্তাব তৈরি করা হলেও তা এখনো প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়নি। আগামী রোববারের মধ্যে এটি পাঠানো হতে পারে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জানা গেছে।
এমএইচএম/এমএসএইচ/পিআর
Advertisement