স্বাস্থ্য

বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নে আশাব্যঞ্জক সাড়া

আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন না করলে তাদের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে— স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমন ঘোষণার পর টনক নড়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকদের। প্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধ হওয়া অথবা পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা ঝামেলায় পড়ার আশঙ্কায় অনেকেই এখন অনলাইনে লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করছেন। কেউ সরেজমিন অধিদফতরে উপস্থিত হয়ে লাইসেন্স হালনাগাদ করা কিংবা অসম্পূর্ণ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করে নিচ্ছেন।

Advertisement

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. ফরিদ হোসেন আজ (১৯ আগস্ট) জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়নে আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করেনি এমন কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান অনলাইনে নবায়নের জন্য ইতোমধ্যে আবেদন করেছে।

মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স ছাড়াই ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর। রিজেন্টের মতো নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও চাপের মুখে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৎকালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম। ওএসডি করা হয় তৎকালীন পরিচালক হাসপাতাল ও ক্লিনিক ডা. আমিনুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে।

এর পরই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য অধিদফতর। লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের বিরুদ্ধে মাঠে নামে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। এতে দেখা যায়, রাজধানীর বেশ কয়েকটি নামি দামি বেসরকারি হাসপাতাল, যেমন- বারডেম, আনোয়ার খান মডার্ন, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালসহ দেশের সুপরিচিত বিভিন্ন হাসপাতাল লাইসেন্স নবায়ন না করেই চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ আগস্ট টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত হয়, লাইসেন্স নবায়ন না করা হলে আগামী ২৩ আগস্টের পর লাইসেন্সবিহীন সব হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তালিকা অনুযায়ী, দেশে মোট ১৭ হাজার ২৪৪টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে পাঁচ হাজার ৪৩৬টি, চট্টগ্রাম বিভাগে তিন হাজার ৩৭৫, রাজশাহী বিভাগে দুই হাজার ৩৮০, খুলনায় দুই হাজার ১৫০, রংপুরে এক হাজার ২৩৬, বরিশালে ৯৫৭, ময়মনসিংহে ৮৭০ এবং সিলেট বিভাগে ৮৩৯টি। এগুলোর মধ্যে অনলাইনে লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছে ১০ হাজার ৯৪০টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। লাইসেন্স রয়েছে মাত্র চার হাজার ৩৮৭টির। অধিদফতরের পরিদর্শনের অপেক্ষায় রয়েছে এক হাজার ৫২৫টি। বিভিন্ন শর্ত পূরণ না করতে পারায় ঝুলে রয়েছে চার হাজার ৫২৬টি প্রতিষ্ঠান।

সূত্র মতে, ২০১৮ সালে লাইসেন্স ও নবায়ন প্রক্রিয়ার জন্য অনলাইনে আবেদনের পদ্ধতি চালু হয়। কিন্তু তাতে কোনো একটি শর্ত যদি পূরণ না হয় তাহলে রেজিস্ট্রেশন হয় না, নবায়নও হয় না।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নিবন্ধন ফি এবং নিবন্ধন নবায়ন ফি পাঁচ হাজার থেকে বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অপরদিকে বিভাগীয় ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০ থেকে ৫০ শয্যার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের নবায়ন ফি ৫০ হাজার টাকা, ৫১ থেকে ১০০ শয্যার জন্য এক লাখ, ১০০ থেকে ১৪৯ শয্যার জন্য দেড় লাখ ও ২৫০ শয্যার জন্য নির্ধারণ হয় দুই লাখ টাকা।

Advertisement

একইভাবে একই শয্যা সংখ্যা ধরে জেলা হাসপাতালগুলোর জন্য ধরা হয় ৪০ হাজার টাকা, ৭৫ হাজার ও এক লাখ টাকা। উপজেলা পর্যায়ে একই শয্যা সংখ্যা ধরে ফি নির্ধারণ হয় ২৫ হাজার, ৫০ হাজার, ৭৫ হাজার ও এক লাখ টাকা করে।

এসব হাসপাতালে কমপক্ষে তিনজন এমবিবিএস চিকিৎসক, ছয়জন নার্স ও দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকতে হয়। প্রতিটি শয্যার জন্য থাকতে হয় ৮০ বর্গফুট জায়গা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অপারেশন থিয়েটার, আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং নারকোটিকসের লাইসেন্স থাকতে হয়। এর সঙ্গে আরও দরকার হয় ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন ও বিআইএন, সঙ্গে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। তবে শয্যা সংখ্যা বেশি হলে আনুপাতিক হারে জনবল থাকতে হবে। আবেদনের ভিত্তিতে অধিদফতরের টিম সরেজমিন পরিদর্শন করে লাইসেন্স দেবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ। লাইসেন্সই নেই শতকরা ১০ ভাগের। তারা বলছেন, হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে কেবল নোটিশ ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া ছাড়া কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না স্বাস্থ্য অধিদফতর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরও বলছে, তাদের জনবল সংকটের কারণে সমস্যায় পড়তে হয়। একজন পরিচালকের অধীনে একজন সহকারী পরিচালক ও দুজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে তাদের হাসপাতাল পরিদর্শনের কাজ চলে।

এমইউ/এমএআর/পিআর