রাজনীতি

সহসাই জামায়াত ছাড়ছে না বিএনপি!

বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক নিয়ে আবারও জোরালো প্রশ্ন উঠেছে রাজনীতিতে। খোদ বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে জামায়াতসঙ্গ নিয়ে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে নাকি টিকে যাচ্ছে, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে বারবার আলোচনা উঠলেও সহসাই বিএনপি তার ২০ দলীয় জোটসঙ্গী জামায়াতকে ছাড়ছে না বলে বিভিন্ন সূত্রে আভাস মিলেছে।

Advertisement

আদর্শিক মিল না থাকলেও দুই দশক ধরে জামায়াতের সঙ্গে জোট গড়ে একই ধারার রাজনীতি করে আসছে বিএনপি। জোট গড়ে একবার সরকার গঠন করলেও গত প্রায় ৭-৮ বছর ধরে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ছিন্নের আলোচনা উঠেছে।

২০১২ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফরের সময় জামায়াতের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে বলে জোর আলোচনা উঠেছিল। সেসময় বিভিন্ন সূত্র বলেছিল, ভারত বিএনপিকে জামায়াত ও মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ইঙ্গিত দিয়েছিল। ঠিক ওই সময়টায় দুই দলের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হচ্ছে বলে জোর আলাপ উঠলেও কার্যত তা আর হয়নি। বরং ঐক্যবদ্ধভাবে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি-জামায়াত।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনকালেও জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ছিন্নের কথা সামনে আসে। ওই জোটের ড. কামাল হোসেন, এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (চূড়ান্ত সময়ে জোট থেকে সরে যান), বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীসহ অনেক নেতাই বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে বলেন। কিন্তু তখনও সেই কথার প্রতিফলন দেখা যায়নি।

Advertisement

ওই নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভের ব্যর্থতার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বরাবরের মতো আওয়ামী লীগের প্রতিই তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখে। নির্বাচনে কারচুপি, আগের রাতে নির্বাচন হয়ে যাওয়াসহ নানা অভিযোগ তুললেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতে পারেনি বিএনপি। সেখানেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জামায়াত ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসে।

এ বছরের শুরু থেকেই ফের জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের বিষয়ে বিএনপির মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। করোনাভাইরাসের কারণে বিষয়টি চাপা পড়ে গেলেও আবার তা আলোচনায় এসেছে। গত ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত বিএনপির নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ববহ আলোচনা হয়।

তবে ঈদের দিন (১ আগস্ট) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে সেখানে জামায়াতসঙ্গ ছাড়ার বিষয়টি উঠলেও সিদ্ধান্তমূলক কোনো কথা হয়নি।

সূত্র জানায়, সে সময় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। যদিও পরে এ কথা বাইরে ছড়ানোর বিষয়ে প্রতিবাদ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

Advertisement

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াত ছাড়ার প্রশ্নে অধিকাংশ নেতার মতৈক্যের প্রসঙ্গটি খালেদা জিয়ার সামনে তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, জামায়াত ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন আছে। স্বল্প সময়ের চিন্তা না করে দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করতে হবে।

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে নেতাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে, বিএনপি হচ্ছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল। এ দলের কাছে দেশ ও জনগণের স্বার্থ সবার আগে। দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে এমপি, মন্ত্রী হয়ে অথবা ক্ষমতায় গিয়ে কী হবে?

বিএনপির বর্তমান দুরবস্থার জন্য এবং প্রতিবেশীসহ বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না হওয়ার পেছনে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গ দায়ী বলে দলটির অনেক নেতা মনে করেন। তবে দলের একটি অংশ এবং ২০ দলীয় জোটের শরিকদের অনেকে মনে করেন, ভোটের রাজনীতির অঙ্কে জামায়াত এখনও গুরুত্বপূর্ণ। সব বাম দল মিলেও জামায়াতের সমান ভোট বাগানোর ক্ষমতা নেই। যেহেতু বিএনপি ভোট করে ক্ষমতাগ্রহণে বিশ্বাসী দল, সুতরাং নির্বাচনী অঙ্কের হিসাব করলে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা খুবই কঠিন কাজ। আর এ কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া বিএনপির পক্ষে সহজ হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, ২০ দলীয় জোটে জামায়াতকে নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। জামায়াত জোটে ছিল, আছে।

জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের বিষয়ে বিএনপি নতুন কোনো চিন্তা-ভাবনা করছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, চিন্তা-ভাবনা তো কতকিছুই থাকতে পারে।

কেএইচ/এইচএ/এমএআর/জেআইএম