ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ‘ইতিহাস বিকৃত’ করার অপরাজনীতিতে নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Advertisement
১৫ আগস্টের ঘটনার সাথে জিয়াউর রহমানকে জড়িত করে সরকার প্রধানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার (১৮আগস্ট) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
ফখরুল বলেন, ‘‘এখন আর বর্তমান সরকারের কোনো রাজনীতি নেই। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অপরাজনীতিতে নেমেছে। আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে নিয়ে এহেন ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।”
একই সঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘১৯৭১ সালে আমরা যে গণতান্ত্রিক চেতনা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেছিলাম, গত এক দশকের অধিককাল ধরে বর্তমান সরকার সেই চেতনাকে হিমাগারে পাঠিয়েছে। সেই চেতনাকে বিনষ্ট করে দিয়ে তারা একটি ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। ক্ষমতাসীনরা এই মিথ্যাচার করে ইতিহাস বিকৃত করার প্রক্রিয়ায় জিয়াউর রহমানকে খাটো করার অপচেষ্টয় লিপ্ত হয়েছে।”
Advertisement
ফখরুল বলেন, ‘‘শহীদ জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এহেন মিথ্যাচার ও তার চরিত্র হননের অপপ্রয়াসে আপামর জনগণ দারুণভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। শহীদ জিয়া ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোটি কোটি ভক্ত ও অনুরক্তরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত এই ষড়যন্ত্রকে শুধু ঘৃণাভরে প্রত্যাখানই করছে না। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্রকে ভেঙে চুরমার করে দেয়ার দৃপ্ত শপথ ঘোষণা করছে।”
১৫ আগস্টের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘‘জিয়াউর রহমানকে ১৫ আগস্ট হত্যা মামলার সাথে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কারা হত্যা করেছে সেটা শেখ হাসিনার দায়ের করা মামলায় ইতোমধ্যে আদালতে নির্ধারিত হয়ে গেছে এবং এই হত্যার জন্য কোথাও জিয়াউর রহমানকে দোষারোপ করার মতো কিছুই পাওয়া যায়নি।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ওই মামলায় জিয়াউর রহমান কিংবা তার ঘনিষ্ঠ কাউকে আসামিও করা হয়নি। কিন্তু তাতে আওয়ামী লীগের মন ভরছে না। এখন তারা জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পৃক্ত করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।”
‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির ভিডিও প্রচার উদ্দেশ্যমূলক’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘১৫ আগস্ট হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামিকে (মেজর (অব.) মাজেদ) দিয়ে বন্দি অবস্থায় দেশের আইন, আদালত, শাসনব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সরকাররের মুসাবিদায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ধারণকৃত ভিডিও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারে বাধ্য করা এবং একই সাথে বেতনভুক্ত সাইবার ফোর্স নিয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৫ আগস্ট হত্যার সকল আসামিদের যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা এবং রায় কার্য্কর করার পর্ব প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছে।”
Advertisement
তিনি বলেন, ‘‘এমতাবস্থায় আইনিভাবে এই ধরনের বক্তব্যের কোনো সাক্ষ্যমূল্য নেই। এই পদক্ষেপ বরং সংঘটিত বিচার প্রক্রিয়া ও রায়কে নতুনভাবে বিতর্কিত করে তুলতে পারে। আইনবিরোধী এই ধরনের পদক্ষেপ আসলে অপরাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘কথিত মাজেদের জবানবন্দিতে বয়ান করা হয়েছে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ১৯৭৫ সালের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি রেফারেন্স দিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।”
তিনি বলেন, ‘‘অথচ জাতি জানে, প্রকৃতপক্ষে সরকার প্রধান নিজেও জানেন, ওই সময়ের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক কর্তৃক, জিয়াউর রহমান নহে। এই অধ্যাদেশটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ ৫০ নামে অভিহিত। ‘দ্য বাংলাদেশ গেজেটে’ প্রকাশিত অধ্যাদেশটিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএইচ রহমানের স্বাক্ষরে।”
ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, শহীদ জিয়াউর রহমানকে ঘিরে এই অপপ্রচার সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার। মাজেদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে মিথ্যা করা যাবে না।”
তিনি বলেন,‘‘ গত ১১ বছরে বর্তমান সরকারের আমলে বিচারবর্হিভুত হত্যার শিকার হয়েছে প্রায় তিন হাজার জন। এই সকল হত্যাকান্ডের সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অভিযোগ যা বাংলাদেশের দন্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য। একদিন সকল বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের বিচার ঠিকই হবে এদেশে।”
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে আবারো জাতীয় ঐক্যের আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু ও চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এনএফ/এমকেএইচ