চাঁদপুর জেলায় ২০৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক দীর্ঘ ৮ বছর বন্ধ থাকার পর বর্তমান সরকার পুণরায় চালু করেছে। এসব ক্লিনিকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ নিতে হত দরিদ্র সাধারণ রোগীরা ভিড় করছে। স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে রোগীরাও বেশ খুশি। এদিকে চরাঞ্চলসহ কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদানকারীদের সময় মতো আসা-যাওয়া না করা ও অনুপস্থিতির কারণে রোগীরা সব সময় চিকিৎসা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া নির্মিত ভবনগুলো নিম্নমানের হওয়ায় বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ ক্লিনিকে বাউন্ডারি না থাকায় ২৪ ঘণ্টায় নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হচ্ছে। চাঁদপুর জেলায় ২৬৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকের স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিক সম্পূর্ণ নির্মাণ করা হয়েছে ২১৭টি। বাকি ৪২টি নির্মাণে কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। তবে বর্তমানে ২০৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম চলছে। নির্মাণাধীন ৯টির কার্যক্রম এখনো চালু হয়নি। তারপরও চালু কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে হতদরিদ্র সাধারণ জনগণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সাবেক চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা) ডা.এস এম কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা সেবা চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এমবিবিএস ডাক্তাররাও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। তবে ক্লিনিকের জরাজীর্ণ ভবনগুলো সংস্কার করা, বাউন্ডারি দেওয়া এবং বিশুদ্ধ পানির সমস্যা সমাধান করতে হবে। এছাড়া ক্লিনিকের কর্তব্যরত সেবাদানকারীরা যথা সময়ে আসছে না ও অনুপস্থিত থাকছে- এটা সঠিক নয়। তারা সার্বক্ষণিক সেবা দেয়ার জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রুনা রেহানা জাগো নিউজকে জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের জন্য প্রতি ৩ মাসে ২ কার্টুন করে ২৮ পদের ওষুধ দেয়া হয়। তারপরেও ওষুধের প্রয়োজন হলে চাহিদার আলোকে তা বরাদ্দ দেয়া হয়। তিনি জাগো নিউজকে আরো জানান, বর্তমানে চালু ক্লিনিকগুলোতে পর্যাপ্ত রোগী আসছে। চাঁদপুর সদরের কাশেমবাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মুক্তা বেগম জাগো নিউজকে জানান, ক্লিনিকগুলো নতুনভাবে চালু হওয়ার পর রোগী বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাসহ ওষুধ নিচ্ছে। ওষুধের কোনো ঘাটতি নেই। এমবিবিএস ডাক্তারাও সপ্তাহে ভিজিট করছে। ক্লিনিকগুলোতে স্থানীয়ভাবে গঠিত একটি কমিউনিটি গ্রুপ ও তিনটি সাপোর্ট গ্রুপ রয়েছে। তাদের সিদ্ধান্তের আলোকেই এসব ক্লিনিকের সুযোগ-সুবিধা পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে ওষুধ বিতরণের সময় প্রতি রোগীর কাছ থেকে ৫ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। যা কমিটির ব্যাংক হিসাবে রাখা হয় এবং সাধারণ সমস্যাগুলো এ টাকা থেকে মিটানো হয়। তিনি আরো জানান, এ ক্লিনিকের ভবনটি জরাজীর্ণ, নিচে মাটি নেই, বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার একমাত্র টিউবওয়েলটিও নষ্ট এবং বাউন্ডারি না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হচ্ছে।একই কমিউনিটি ক্লিনিকের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক মরিয়মুন্নেছা জাগো নিউজকে জানান, এখানে হতদরিদ্র সাধারণ রোগীরাই বেশি চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। এতে তারা সাধারণ রোগের জন্য অধিক টাকা ব্যয় করে শহরমুখী হতে হয় না। তাদের রোগও ভালো হয়, আর্থিক ব্যয়ও কমে। আনন্দবাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার রিয়াদ খান জাগো নিউজকে জানান, বিএনপির আমলে ৮ বছর এসব ক্লিনিক বন্ধ ছিল। বর্তমান সরকার এসে আবারো ক্লিনিকগুলো চালু করায় গ্রামাঞ্চলের হত দরিদ্র সাধারণ জনগণ তাদের রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছে। মাসে ৭/৮শ রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে এসব ক্লিনিক থেকে। তিনি জানান, এসব এলাকায় জ্বর, সর্দি, কাশি, এলার্জি রোগীর সংখ্যাই বেশি। আর এসব রোগের জন্য এন্টিবায়োটিক ওষুধ, সিপলোসিন বেশি লাগে। তাই এ ধরনের ওষুধের চাহিদা বাড়ানো দরকার। চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারী কুলসুমা বেগম জাগো নিউজকে জানান, এই ক্লিনিকে আমগো সব চিকিৎসা হয়। ওষুধ কিনতে হয় না। তারাই দেয়। শহরে যাইয়্যা টাকা খরচ কইরা চিকিৎসা নিতে হয় না। আলায় শেখ হাসিনারে ভালো রাহুক। চিকিৎসা সেবা নেয়া আফাজ উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, আগে শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হতো। সময়লাগতো বেশি, টাকাও খরচ হতো। কিন্তু এখন আর শহরে যেতে হয় না। সাধারণ রোগের চিকিৎসা আমরা এখান থেকেই নেই। ওষুধেরও পয়সা লাগে না। আবার অনেকগুলো ক্লিনিকে সরজমিনে গেলে রোগীরা অভিযোগ করে জাগো নিউজকে জানান, ক্লিনিকে যারা কাজ করে তারা ঠিকমতো আসেনা। যখন মন চায়, তখন আসে। অনেকে চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যায়। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. রথীন্দ্র নাথ মজুমদার জাগো নিউজকে জানান, চাঁদপুরের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রতিদিন প্রচুর রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। সেপ্টেম্বর মাসেই চাঁদপুর জেলায় এক লাখ ৪৩ হাজার ৭৫ জন রোগী সেবা নিয়েছে। এদের বেশীর ভাগই হতদরিদ্র ও গরীব শ্রেণির। সকাল ৯টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেবা দেয়া হচ্ছে। চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মদী ভাংতি এলাকার চরাঞ্চলে কোনো কমিউনিটি ক্লিনিক নেই। সেখানের চরভৈরবী, নীলকমল ও ইশানবালায় ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার রাজরাজেস্বর ও ইব্রাহিমপুর চরে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, পুরাতন হওয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকের অর্ধেকেরও বেশী জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এগুলোর ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। শাহরাস্তি উপজেলায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে। তবে কিছু সংস্কারও করা হচ্ছে। গ্রামীণ পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর জনপ্রিয়তা খুবই বেড়েছে। এ মূহুর্তে কোনোটি বন্ধ হলে চালুর জন্য এলাকায় এলাকায় আন্দোলন গড়ে উঠবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।এমএএস/এমএস
Advertisement