আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে সাধু-সজ্জন ব্যক্তিদের গুণ বর্ণনা করে বলেন,‘যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুত আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরই ভালোবাসেন।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ১৩৪)
Advertisement
ইসলাম এমন শান্তিপ্রিয় জীবন ব্যবস্থা। যার শিক্ষায় ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও দেশ তথা এককথায় সর্বত্রই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। যারা সমাজে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
আমরা আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, আমাদের আদর্শও হওয়া চাই শ্রেষ্ঠ। একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন কারণে মতবিরোধ থাকতে পারে, তাই বলে কারো ওপর আক্রমণ করে বসা বা তার ক্ষতির চিন্তা করা এটা মোটেও একজন ধার্মিক মানুষের কাজ নয়।
এছাড়া আমার প্রতিবেশি যে ধর্মের অনুসারীই হোন না কেন মানুষ হিসেবে তার একটি মর্যাদা রয়েছে। আমাদের সবার সৃষ্টি উৎস একই। যদি একই উৎস থেকে মানব জাতির সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে কেন নিজেদের মাঝে এত মারামারি আর বিভেদ? ছোট ছোট বিষয় নিয়ে মারামারি এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটার সংবাদ পাওয়া যায়। যা ধর্মীয় শিক্ষা বিরোধী কাজ। হাদিসে এসেছে-হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা একে অপরকে হিংসা করবে না, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ কর না, পরস্পরে বিদ্বেষ রেখ না, একে অপরের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ কর না, মূল্য নির্ধারণ হওয়ার পর চড়া দাম দিয়ে অন্যের কেনা জিনিস কিনবে না। হে আল্লাহর বান্দারা! পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও, এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার ভাই-এর ওপর যুলুম করে না। তাকে নিগৃহীত করে না এবং তাকে হীন জ্ঞান করে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ বুকের দিকে অঙুলি নির্দেশ করে তিন বার বলেন- ‘আত-তাকওয়া হা হুন্না অর্থাৎ তাকওয়া এখানে।’
Advertisement
কোনো ব্যক্তি দূরভিসন্ধি বা ষড়যন্ত্র করার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলমান ভাইদের হীন জ্ঞান করে। প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত, ধন-সম্পদ আর মান-সম্মান অপর মুসলমানের জন্য হারাম।’ (মুসলিম)
যদি আমরা এ হাদিসের উপর আমল করি তাহলে কি সমাজ বা দেশে কোনো প্রকার অন্যায় হওয়া সম্ভব? অবশ্যই ‘না’ বরং পারস্পরিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় এ হাদিসের আমলই যথেষ্ট।
বিশ্ব মানবতার শান্তি ও মুক্তির দূত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনভর সমাজ ও দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মাক্কি ও মাদানি জীবন নিরলস পরিশ্রমে অতিবাহিত করেছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রিজিকে প্রাচুর্য এবং জীবনের উন্নতি কামনা করে, তার জন্য আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা উচিত।’ (বুখারি)
Advertisement
আজ আমরা ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা ভুলে গিয়ে আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকেও নির্মমভাবে হত্যা করতে দ্বিধা করছি না। সামান্য বিষয় নিয়ে মারমুখি আচরণ করছি। অথচ দিকে দিকে সব ধর্মই চায় শান্তি, সব মানুষ চায় শান্তি। আমরা যেন অশান্তির মাঝেই দিনাতিপাত করতে বেশি পছন্দ করছি। প্রকৃতপক্ষে মানুষ যতদিন পরস্পরকে না ভালোবাসবে, ততদিন পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। এ পৃথিবী তখনই স্বর্গরাজ্যে পরিণত হতে পারে যখন মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে। মানুষের জন্য মানুষের প্রেমপ্রীতি জন্ম না নিলে সে মানুষ হয় কিভাবে? সবার সঙ্গে, সে যে ধর্মেরই হোক না কেন মানুষ হিসেবে তার প্রতি প্রীতিময় সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখার শিক্ষাই দেয় পবিত্র কুরআন। তাই আসুন, আমরা সবাই সবার প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেই। বিশ্ব মানবতার প্রতি হই মমতাশীল। কাজী নজরুলের ‘মানুষ’ কবিতার পাঙতি দিয়ে শেষ করছি-
গাহি সাম্যের গান-মানুষের চেয়ে কিছু নাই,নহে কিছু মহীয়ান,নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ,অভেদ ধর্মজাতি,সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।
এমএমএস/এমকেএইচ