জীবনের অন্তিমকালে হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম নেক সন্তান লাভের দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়া কবুল করেন। দোয়া করার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের মাধ্যমে নামাজের সময় এমন সন্তান দেয়ার সুসংবাদ দিলেন- যিনি হবে একাধারে পূতপবিত্র নবি ও রেসালাতের মহান সাক্ষ্যদানকারী। আল্লাহ তাআলা বলেন-فَنَادَتْهُ الْمَلآئِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي الْمِحْرَابِ أَنَّ اللّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَـى مُصَدِّقًا بِكَلِمَةٍ مِّنَ اللّهِ وَسَيِّدًا وَحَصُورًا وَنَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِينَ‘যখন তিনি কামরার ভেতরে নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন ফেরেশতারা তাঁকে ডেকে বললেন যে, আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহইয়া সম্পর্কে, যিনি সাক্ষ্য দেবেন আল্লাহর নির্দেশের সত্যতা সম্পর্কে, যিনি নেতা হবেন এবং নারীদের সংস্পর্শে যাবেন না আর তিনি অত্যন্ত সৎকর্মশীল নবি হবেন।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ৩৯)
Advertisement
আয়াতের ব্যাখ্যামূলক অনুবাদঅনন্তর যখন সে (হজরত জাকারিয়া) মেহরাবে (মসজিদে) নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন (তখন) ফেরেশতারা অর্থাৎ হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম তাঁকে সম্বোধন করে বললেন যে, আল্লাহ তাআলা তোমাকে ইয়াহইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন। সে হবে আল্লাহর বাণীর অর্থাৎ হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের সমর্থক। সে হবে নেতা তথা অনুসৃত ব্যক্তি। সে হবে জিতেন্দ্রীয় নারী সংস্পর্শ থেকে মুক্ত এবং পুণ্যবানদের মধ্য থেকে একজন নবি। বর্ণিত আছে যে, তিনি (হজরত ইয়াহইয়া) কখনও কোনো পাপ কাজ করেননি বা তাঁর কল্পনাও করেননি। (তাফসিরে জালালাইন)
আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাএ আয়াতে উল্লেখিত ’ইয়াহইয়া’কে খ্রিস্টানরা তাদের আধুনিক সহিফায় (ধর্মগ্রন্থে) ইউহান্না লিখেছেন। বাইবেলে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘ফেরেশতারা তাঁকে বললেন, ওহে জাকারিয়া! শঙ্কিত হইও না, তোমার দোয়া কবুল হয়েছে আর তোমার স্ত্রী ইল ইয়াশবা তোমার জন্য সন্তান প্রসব করবে। তাঁর নাম ইউহান্না রেখ। তুমি সুখী ও আনন্দিত হবে।’ (লুক ১ : ১৪; টীকা- তাফসিরে জালালাইন)
‘ইয়াহইয়া’ নাম রাখার কারণ বর্ণনা তাফসিরে ইবনে কাছিরে এসেছে, ‘তাঁর জীবন হবে ঈমানের সঙ্গে।’ তিনি আল্লাহর কালেমা অর্থাৎ হজরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামের সত্যতা প্রকাশ করবেন।’
Advertisement
হজরত রাবি ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের নবুয়তের প্রথম স্বীকারকারীও হচ্ছেন হজরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম।’
হজরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম ঠিক হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের পথের উপর ছিলেন বলে উক্তি করেছেন হজরত কাতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এ দুজন পরস্পর খালাতো ভাই ছিলেন। হজরত ইয়াহইয়ার মা প্রায়ই হজরত মারইয়ামকে বলতেন-‘আমি আমার গর্ভের জিনিসকে দেখতে পাচ্ছি যে, সে তোমার গর্ভের জিনিসকে সেজদা করছে।’এটা ছিল হজরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের সত্যতা প্রকাশ তাঁর দুনিয়ায় আগমনের আগেই। সর্ব প্রথম তিনি হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের সত্যতা অবগত হয়েছিলেন। তিনি বয়সে হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের চেয়ে বড় ছিলেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাছির)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন গুণ ও নবুয়তের সুসংবাদ দিয়েই হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালামকে সন্তান দেয়ার কথা জানান। যিনি ছিলেন হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের রেসালাতের প্রথম সত্যয়নকারী।
Advertisement
এমএমএস/এমকেএইচ