বিশেষ প্রতিবেদন

কুমিল্লার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সেবার নাম নেই

নামেই কমিউনিটি ক্লিনিক। যেখানে সেবা নিয়ে রয়েছে অন্তহীন অভিযোগ। কুমিল্লার অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না প্রত্যন্ত এলাকার জনসাধারণ।স্বাস্থ্য বিভাগের কাগজে-কলমে সপ্তাহের ৬ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এসব ক্লিনিক খোলা রেখে তৃণমূলের মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা, ওষুধ ও পরামর্শ দেয়ার সরকারি বিধান থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। অধিকাংশ ক্লিনিকেই সময় মতো দায়িত্বপ্রাপ্তরা আসেন না। কিংবা আসলেও দুপুর ১২ টার পর সেখানে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। এছাড়াও রয়েছে ওষুধ সংকট। অনেক ক্লিনিকে নেই বিদ্যুৎ সুবিধা। তাই গ্রামীণ পর্যায়ে রোগীরা এসব ক্লিনিক থেকে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না।সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৬টি উপজেলা, ১টি সিটি কর্পোরেশন, ৮টি পৌরসভা, ১৮৫টি ইউনিয়ন ও ৩ হাজার ৬৮৭টি গ্রাম নিয়ে বিস্তৃত কুমিল্লা জেলা। ৩ হাজার ৮৭.৩৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ জেলার প্রায় ৬০ লক্ষাধিক জনসংখ্যার বিপরীতে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে মাত্র ৪৬০টি। এসব কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সরকারিভাবে ৩০ প্রকারের বিভিন্ন ওষুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এসব ক্লিনিকে সপ্তাহের ৬ দিন একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোপাইডার, সপ্তাহের ৩ দিন একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী দায়িত্ব পালন করার কথা। এছাড়াও কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সপ্তাহে একদিন ১ জন মেডিকেল অফিসার এসব কেন্দ্র ভিজিট করার কথা থাকলেও তা শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। সরেজমিনে জানা যায়, অধিকাংশ ক্লিনিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরা স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় অনেকেই ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে বাসা-বাড়িতে ব্যস্ত থাকায় সময় মতো কর্মস্থলে আসেন না। এছাড়াও যারা জেলা কিংবা উপজেলা সদরে অবস্থান করেন তাদের ক্ষেত্রে কর্মস্থলে নিয়মিত না আসার প্রবনতা আরো ভয়াবহ।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোপাইডার জানান, তারা সময় মতো সপ্তাহের ৬ দিনই কর্মস্থলে আসলেও স্বাস্থ্য সহকারী এবং পরিবার কল্যাণ সহকারীরা ৩ দিন কর্মস্থলে আসেন না। বিশেষ করে পরিবার কল্যাণ সহকারীরা নিয়মিত কেন্দ্রে না আসায় নারী রোগীদের নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অনেক মহিলা নারী রোগীকে বাধ্য হয়ে উপজেলা সদরে যেতে হয়। সরকারি নির্দেশনা থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসারদের অনেকেই কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শনে যান না। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় দেবিদ্বার পৌর এলাকার মরিচাকান্দা কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোপাইডার মো. জহিরুল ইসলাম ভূইয়া জানান, এ ক্লিনিক থেকে ৩০ প্রকারের ওষুধ ছাড়াও পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করে এমন নারীদের সুখি ট্যাবলেট ও পুরুষদের কনডম দেয়া হয়ে থাকে। এ কমিউনিটি ক্লিনিকে কোনো মেডিকেল অফিসার ভিজিট করেন না বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সেবার এই চিত্র প্রসঙ্গে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান জানান, বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে যে সেবা দেয়া হচ্ছে তা অন্যান্য জেলার তুলনায় সন্তোষজনক, সেখানে ওষুধের সংকট নেই, যে সব ইউনিয়ন এলাকার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে মেডিকেল অফিসার রয়েছে তারা সময় মতো নিজ নিজ এলাকার এসব কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করে থাকে বলেও তিনি দাবি করেছেন।  এমএএস/এমএম

Advertisement