যশোরে গৃহকর্তার লালসায় অন্তঃসত্ত্বা স্কুল ছাত্রীকে সন্তান প্রসবের দু’সপ্তাহ আগে অপহরণ করা হয়েছে। এর আগে মেয়েটিকে ধর্ষণের অভিযোগে গৃহকর্তা যশোরের ঝিকরগাছার বাকুড়া গ্রামের দাউদ সরদারের নামে মামলা করেন মেয়েটির মা। মামলার তিনদিন পরই ৮ম শ্রেণির এই স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে। যদিও প্রায় দু’মাস আগে তারা ঝিকরগাছা থেকে পালিয়ে যশোর শহরে বসবাস করছিলেন।যশোর কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, যশোরের ঝিকরগাছার বাকুড়া গ্রামে প্রতিবেশি হাজি মো. দাউদ সরদারের বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন স্কুল ছাত্রীটির মা। এসময় তার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ১৪ বছর বয়সী মেয়েও দাউদ সরদারের বাড়িতে যাতায়াত করতো। এই সুযোগে গৃহকর্তা দাউদ সরদার মেয়েটিকে কৌশলে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি করলে ভিকটিম ও তার পরিবারের সদস্যদের খুন করে ফেলা হবে বলে ভয় দেখানো হতো। এরপর দাউদ সরদার তার মেয়েকে লোকজন দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে। ভয়ে দুই মাস আগে মেয়েকে নিয়ে যশোর শহরের বারান্দীপাড়ার তরিকুল ইসলামের ভাড়া বাসায় ওঠেন তারা। গত ২৩ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে মেয়েটি পার্শ্ববর্তী আমতলা মোড়ের পুরি (খাবার) কিনতে বাসা থেকে বের হয়। এরপর আর বাসায় ফেরেনি। ওই সময় অজ্ঞাতনামা লোকজন মেয়েটিকে অপহরণ করেছে।ভিকটিমের মা বলেছেন, দাউদ সরদার ও তার লোকজন মেয়েটিকে অপহরণ করে খুন, গুম করেছে। অথবা কোথাও আটকে রেখেছে। অবিলম্বে তার মেয়েকে উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন তিনি।ভিকটিমের আইনি সহায়তার জন্য পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ যশোর জেলা শাখা। সংগঠনটির লিগ্যাল এইড সম্পাদক কামরুন্নাহার কণা জানিয়েছেন, অভিযোগ পাওয়ার পর গত ১৪ অক্টোবর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। ডাক্তারি রিপোর্টে মেয়েটির আগামি ৫ নভেম্বর ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর মেয়েটির মা বাদী হয়ে ২০ অক্টোবর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল যশোরে মামলা করেন। মামলার নম্বর পিং-২২৮/১৫। আদালত ঝিকরগাছা থানা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে। এরপর গত ২৩ অক্টোবর মেয়েটি নিখোঁজের পরদিন কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। যার নম্বর ১৩৯৭। ৬ দিনে মেয়েটির কোনো সন্ধান না পেয়ে ২৯ অক্টোবর মেয়েটির মা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত আসামিদের নামে মামলা করেছেন। তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্ত দাউদ সরদার প্রভাবশালী হওয়ায় ভিকটিমের পরিবারকে হুমকি ধামকি দিয়ে ধামা চাপার চেষ্টা করে। পরে মেয়েটির পরিবার মহিলা পরিষদের সহযোগিতা চেয়েছে। মেয়েটি যাতে ন্যায় বিচার পায় সেজন্য আমরা কাজ করছি।যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আক্কাছ আলী বলেন, ভিকটিমের মায়ের অভিযোগটি বৃহস্পতিবার রাতে মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। মেয়েটিকে উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছে। সারাদেশের থানায় এ সংক্রান্ত ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছে। মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। সন্দেহভাজনদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।মিলন রহমান/এমএএস/এমএম
Advertisement