কৃষি ও প্রকৃতি

ড্রাগন ফল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা

যান্ত্রিক নগর জীবন থেকে বের হয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে একটু প্রশান্তি পেতে কার না মন চায়। তাই তো সময় পেলেই ছুটে যাই প্রকৃতির মাঝে মন খুলে নিশ্বাস নিতে।

Advertisement

পঞ্চগড়ে ড্রাগন ফলের চাষাবাদ নিয়ে বেশ কিছু পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন পড়ার পর থেকেই ভাবছিলাম বাগান ঘুরে আসার। কিন্তু করোনার কারণে সময় ও সুযোগ হচ্ছিল না। ঈদ উপলক্ষ্যে নিজ বাড়িতে আসা। কিন্তু ঈদে বাড়ি ফিরলেই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে বলে পঞ্চগড় জেলার করোনা প্রতিরোধ কমিটির মতবিনিময় সভায় আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই ইচ্ছে থাকলেও বাড়ির বাইরে তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি। এদিকে ঢাকায় ফেরত যাওয়ারও দিন ঘনিয়ে এসেছে।

পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের নয়াদিঘী এলাকায় রেলপথ মন্ত্রীর এপিএস ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. রাশেদ প্রধানের ড্রাগন ফলের বাগানের কথা অনেক আগে থেকেই অবগত ছিলাম। দেখতে যাব কিন্তু সুযোগ কোথায়? বাড়িতে যেহেতু অবস্থান করছি; তাই ফোন দিলাম সাংবাদিক ও বোদা প্রেসক্লাবের সভাপতি নজরুল ভাইকে। নজরুল ভাই অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে বললেন বোদা প্রেসক্লাবে চলে আসার জন্য। যথা সময়ে ভাগ্নে মোবারককে সাথে নিয়ে চলে গেলাম। সেখানে বিটিভির পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি আমির খসরু লাভলু ভাইও এসে উপস্থিত। লাভলু ভাইকে পেয়ে আরও আনন্দিত হলাম। নজরুল ও লাভলু ভাই আমাদের নিয়ে বাগানের দিকে রওনা দিলেন। বাগানে প্রবেশ করে অবাক হলাম, গ্রামের ভেতর এত সুন্দর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি বাগান।

বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতে চা চাষে সাফল্যের পর এবার পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মারেয়া ও নয়াদিঘী এলাকায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে ড্রাগন ফল চাষ। অনেকে প্রথমে শখের বশে অল্প জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করে সাফল্য পেয়ে শুরু করেছেন বাণিজ্যিক চাষাবাদ।

Advertisement

এ ছাড়া পঞ্চগড়ের জলবায়ু ও মাটি কমলা চাষের উপযোগী হওয়ায় কমলা চাষকেও বাস্তবতায় রূপ দিয়েছে এ জেলার মানুষ। বর্তমানে পঞ্চগড়ে কমলা চাষের ফলে পাল্টে যাচ্ছে এ জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়নের ধারা। পঞ্চগড়ের চা চাষের সমৃদ্ধি যেমন আমাদের অর্থনীতিতে অনুকূল প্রভাব ফেলেছে; তেমনি এ প্রভাবের সাথে যুক্ত হয়েছে আরেকটি মাত্রা। তা হলো রসালো ফল ড্রাগন চাষ।

বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লাভজনক ও উচ্চফলনশীল ড্রাগন ফলের চাষাবাদ বাড়ছে। পুষ্টি ও ওষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় মিষ্টি ও টক-মিষ্টি স্বাদের ক্যাকটাস প্রজাতির ড্রাগন ফলের এ জনপ্রিয়তা। কথা হয় চন্দনের সাথে; যিনি রাশেদ প্রধানের বাগানের দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, ‘৬ বিঘা জমিতে এ ফলের চারা রোপণ করা হয়েছে। বাগানে প্রায় চার হাজার গাছ রয়েছে। ফল বাগান থেকেই ক্রেতা নিয়ে যাচ্ছে। চাহিদা অনেক বেশি থাকায় বাগান থেকেই বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা কেজি দরে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রমতে, আমেরিকা, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে ড্রাগন একটি জনপ্রিয় ফল। পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় লাল, সাদা এবং হলুদ ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় উৎপাদিত ড্রাগন ফল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। অল্প জায়গায় স্বল্প পরিচর্যায়ই চারা রোপণের এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ফল আসা শুরু হয়। প্রথমবারই সফলতা পাওয়ায় চাষিরা এখন বাণিজ্যিকভিত্তিতে এ ফলের চাষাবাদ শুরু করেছেন। সুস্বাদু এ ফল উৎপাদনের শুরুতে খরচ কিছুটা বেশি হলেও অন্যান্য ফসলের চেয়ে এটি লাভজনক। ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ড্রাগন ফলের বাগান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ড্রাগন ফল নিয়মিত খেলে জটিল রোগসহ আরও অনেক রোগের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। এ ছাড়া এ ফল ডায়াবেটিস, কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, কোলেস্টরেল ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। অ্যাজমা ও ঠান্ডা-কাশির রোগীদের জন্যও বিশেষ উপকারী। ড্রাগন ফলে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা পেটের পীড়া নিরাময় ও সুস্থ লিভারের জন্য উপকারী। সালাদ তৈরিতে ও বিউটিফিকেশনের কাজেও ড্রাগন ফল ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ফল রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

Advertisement

পুরো বাগানটি ঘুরে দেখালো নজরুল ভাই আর লাভলু ভাই। শেষে গ্রুপ ছবি তুললাম। ফল খেয়ে দেখলাম, বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু। আসার পথে নজরুল ভাই আপ্যায়ন না করিয়ে ছাড়লেন না। শেষে বিদায় জানিয়ে নিজ গন্তব্যের দিকে ফিরে যাই।

যেভাবে যাবেন: বোদা শহর থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যানে বা নিজ গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। মাত্র ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই নয়াদিঘী এলাকায় রাশেদ প্রধানের ড্রাগন বাগানে সহজেই যেতে পারবেন।

এসইউ/এএ/এমএস