বাংলা রক ব্যান্ডের লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু। আশির দশক থেকে গানে, সুরে ও কথায় তিনি মন জয় করেছেন বাঙালি হৃদয়। সংগীতের আঙিনায় আইয়ুব বাচ্চু একাধারে গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক এবং গায়ক হিসেবে জনপ্রিয়। মূলত রক ঘরানার কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক গান, ক্লাসিকাল সংগীত এবং লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন তিনি।
Advertisement
তবে গিটারিস্ট আইয়ুব বাচ্চু নামটিকে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাকে গিটারের জাদুকরও বলা হয়।
প্রয়াত এই কিংবদন্তির ৫৮তম জন্মদিন আজ। মৃত্যুর পর এটা তার দ্বিতীয় জন্মদিন। তিনি না থাকলেও তার রেখে যাওয়া হাজারো ভক্ত অনুরাগীরা তাঁকে স্মরণ করছেন জন্মদিনের শুভেচ্ছায়। এখনো তিনি শ্রোতাদের অন্তরে ফেলে যাওয়া রুপালি গিটারের কাব্যময়তার প্রতীক হয়ে আছেন।
১৯৬২সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। তার বাবা ইশহাক চৌধুরী এবং মা নুরজাহান বেগম। বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামের ছেলে বাচ্চু পপগুরু আজম খানকে অনুসরন করে হাল ধরেন বাংলা রক মিউজিকের। রক সংগীতকে বাংলার গণমানুষের গানে পরিণত করায় ভক্তদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন ‘বস’ উপাধি।
Advertisement
কলেজে জীবনে বন্ধুদের নিয়ে গোল্ডেন বয়েজ নামে একটা ব্যান্ডদল গড়ে তোলেছিলেন। সেটাই ছিলো আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রথম যাত্রা। পরে দলটির নাম পাল্টে রাখা হয় আগলি বয়েজ। বিয়েবাড়ি, জন্মদিন আর ছোটখাটো নানা অনুষ্ঠানে তাদের এই ব্যান্ডদল গান করতো। আইয়ুব বাচ্চুর বন্ধুরা যে যার মতো একেক দিকে ছড়িয়ে পড়লেও আইয়ুব বাচ্চু ব্যান্ডদল ফিলিংস’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান।
১৯৮০ সালে তিনি যোগ দেন তৎকালীন তুমুল জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলস-এ। এই ব্যান্ডের লিডগিটারিস্ট হিসেবে আলো ছড়িয়েছেন টানা ১০ বছর। ১৯৯১ সালে সোলস ছেড়ে দিয়ে ওই বছরের ৫ এপ্রিল গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড এলআরবি। শুরু হয় স্বপ্নের যাত্রা।
আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠ দেয়া প্রথম গান হারানো বিকেলের গল্প। আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম রক্তগোলাপ। তার সফলতার শুরু দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ময়না’র মধ্য দিয়ে। তিনি বেশ কিছু বাংলা ছবিতে প্লেব্যাকও করেছেন। ‘আম্মাজান’, ‘একঝাঁক পাখি উড়ে আকাশে’, ‘স্বাগরিকা’ ইত্যাদি গানগুলো তাকে সারাদেশের শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিলো।
ব্যান্ডে ফেরারি মন, চলো বদলে যাই, এখন অনেক রাত, হকার, আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি, কষ্ট পেতে ভালোবাসি এবং রূপালী গিটারসহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু।
Advertisement
২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান আইয়ুব বাচ্চু। যে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এদেশের ব্যান্ড সংগীতের নন্দিত এক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হয়েছে।
চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণে রাখতে দারুণ এক আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরশন। আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড়ে বসানো হয়েছে রুপালি গিটার আদলের ভাস্কর্য। প্রবর্তক মোড়ের নামকরণ হয়েছে আইয়ুব বাচ্চু চত্বর। সেখানে রোজ রোজ বসে বাচ্চুভক্তদের মিলনমেলা।
এলএ/এমএস