বিশেষ প্রতিবেদন

নোয়াখালীতে কমিউনিটি ক্লিনিকের সুফল পাচ্ছেন জনগণ

স্নিগ্ধা। বয়স দেড় বছর । আদরের একমাত্র সন্তানের গায়ে গত কয়েকদিন ধরে চুলকানি দেখা দিয়েছে। বাড়ির কাছাকাছি সরকারি ডাক্তার বসে এজন্য নিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি নিজেরও সর্দি-জ্বর। ডাক্তার দেখিয়ে নিজের জন্যও ওষুধ নিবেন। কথাগুলো বলছিলেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুরের গৃহবধূ আঞ্জুমানারা বেগম। তার মতো আরো অনেকের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। সবাই খুশী সহজেই বাড়ির কাছে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া নিয়ে। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের একলাশপুর বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে, যথারীতি সময় সকাল ৯টায় তালা খোলা হয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সহকারীরা ক্লিনিকে প্রবেশ করেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের পূর্ব পাশের একটি কক্ষে তারা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন যার যার রির্পোটগুলো শেষ মূহুর্তে গুছিয়ে নেয়ার জন্য। পাশের আরো একটি কক্ষে দেখা গেলো রোগী দেখছেন ডাক্তার। দূর-দুরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন বয়সী রোগীদের কাছ থেকে রোগের বর্ণনা শুনে ওষুধ দিচ্ছেন ডাক্তার। দেয়ার সময় খাবারের নিয়ম এবং আবার আসায় সময় বলে দিচ্ছেন। এসময় আরো ৫ থেকে ৬ জন রোগী এসে কক্ষের দরজায় ভিড় করছেন। কখন ভিতরে বসা আগের রোগী বের হয়ে যাবে। সিট খালি হলে তারা ভেতরে যেতে পারবেন। এভাবেই নানা বয়সী নারী-পুরুষ আসছেন স্বাস্থ্যসেবা নিতে একলাশপুর বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে। আবার মায়েদের কোলে চড়ে আসছেন নানা বয়সী শিশুরা। কথা হয় এ ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা আরো কয়েকজন রোগীর সঙ্গে। সুমাইয়া আক্তার এসেছেন নিজের শিশুটিকে নিয়ে। তার কয়েকদিন ধরে জ্বর। তিনি জানান, এর আগে তিনি আরো কয়েকবার এ ক্লিনিকে এসেছেন নিজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। এখান থেকে যে ওষুধগুলো দেয়া হয় তা ভালো। খেলে তাড়াতাড়ি অসুখ সেরে যায়। তবে ওষুধ নিতে কোনা টাকা লাগে না। তারপরেও অনুদান বাক্সে ১০ টাকা দিতে হয়। দিলেও হয় আবার না দিলে ও চলে। কোনো জোরাজরি করেনা। একই এলাকার গিয়াস উদ্দিন ((৮৪) আলাপকালে জানান, এ ক্লিনিকে নারীরা বেশি আসে। এর আগেও তিনি এ ক্লিনিকে এসেছেন। এসে দেখেন নারীদের ভিড়। তাই আজ একটু দেরি করে এসেছেন। এরপর আধাঘণ্টা অপেক্ষা করার পর সুযোগ পেয়েছেন। তিনি জানান, এটি হওয়াতে এলাকার মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। না হলে সবাইকে অনেক কষ্ট করে এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় করে জেলা সদর মাইজদী অথবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হতো। নরমাল সব রোগীর ওষুধ ও সেবা এখান থেকে পাওয়া যায়। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক জেসমিন আক্তার জানান, একলাশপুর ইউনিয়নে স্বাস্থ্য বিভাগে যারা কাজ করেন তারা সবাই সপ্তাহের একদিন (বৃহস্পতিবার) এ ক্লিনিকে মিলিত হন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন সভা করেন। প্রতি ৬ হাজার লোকের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক। এ নীতিমালা অনুসারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের আওতায় নোয়াখালীর ৯টি উপজেলায় ২৬৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। এসকল  কমিউনিটি ক্লিনিকে সপ্তাহে দুই দিন করে বসেন একজন মেডিকেল অফিসার, সপ্তাহে ৬ দিন বসেন একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এবং তিনদিন করে বসেন দুইজন স্বাস্থ্য সহকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা ছাড়া ও ইপিআই কর্মসূচির সকল কার্যক্রম এসব কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বাস্তবায়ন করা হয়। একলাশপুর বাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার মকবুল হাসান জাগো নিউজকে জানান, সকাল ৯টা থেকে বিকেলে ৩টা পর্যন্ত তারা সেবা প্রদান করেন। এখানে প্রাথমিক সব রোগের সেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হয়। প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ জন রোগীর তারা সেবা দিয়ে থাকেন এ ক্লিনিক থেকে।২০০০ সালে ৫ শতাংশ জমির উপর এ ক্লিনিক স্থাপিত হয়। ক্লিনিক পরিচালনা করতে বিভিন্ন সমস্যা যেমন বিদ্যুৎ, পিয়ন এবং চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহ না থাকাকে প্রধান সমস্যা বলে মনে করে তিনি জানান, স্থানীয়দের নিয়ে ক্লিনিক পরিচালনা কমিটি থাকায় অনেক সমস্যা তারা সমাধান করে সেবা দিচ্ছেন। সরকারি সিদ্ধান্ত মতে প্রতি রোগীর দেয়া ১০ টাকা অনুদান থেকে তারা ক্লিনিকের ছোটখাটো অনেক সমস্যা সমাধান করেন। তিনি আরো জানান, প্রতিটি ক্লিনিকে ল্যাপটপ প্রদান করা হয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে মাস শেষে মাসিক রির্পোট দিয়ে থাকেন তারা। এ ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় একলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, তার ইউনিয়নে ৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। ক্লিনিক স্থাপনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গ নিজ উদ্যোগে জায়গা দেয়ায় তা সম্ভব হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষে বর্তমান সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন একটি মহতী উদ্যোগ। তার এলাকার মানুষ সহজেই অল্প সময়ে ক্লিনিয়ে গিয়ে সেবা পাচ্ছেন। তবে মাঝে মধ্যে ওষুধের কিছুটা সংকট থাকে। নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে জানান, জেলায় ২৬৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের সবগুলো চালু রয়েছে। তবে দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহ করতে সরকারের কিছুটা সমস্যা হলেও চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের চিঠি দিয়েছে তিনি।  এমএএস/এমএস

Advertisement