নিলয় নীল নামে ব্লগে লেখালেখি করতেন। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে হুমকিও আসে। আতঙ্কে ফেসবুক থেকে নিজের ছবি সরান। ঠিকানাও বদলে লিখেছিলেন কলকাতার নাম। নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে থানায় গেলেও জিডি নেয়নি পুলিশ। হুমকিতে ভীতসন্ত্রস্ত নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়ের সাথেই বাসায় ছিলেন স্ত্রী আশা মনিও। ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট শুক্রবার জুমার নামাজের পর খিলগাঁওয়ের গোড়ানের বাসায় ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় নিলয়কে।
Advertisement
স্ত্রী আশা মনি বলছিলেন, দুপুরে জুমার নামাজের পরই দুই দফায় চারজন লোক বাসা দেখতে আসার কথা বলে ওই বাসায় ঢোকে। তারপরই তিনিসহ দুজনকে জিম্মি করে নিলয়কে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়।
সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় হত্যার দীর্ঘ পাঁচ বছর পেরিয়েছে। কিন্তু পুলিশি তদন্তই শেষ হয়নি। স্বামী হত্যার বিচারের অপেক্ষায় থাকা স্ত্রী বলছেন, ক্লান্ত তিনি।
পুলিশ বলছে, খুনের মোটিভ, খুনের সাথে জড়িত গোষ্ঠীর পরিচয়ও নিশ্চিত হওয়া গেছে। শুধু এক আসামির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যে কারণে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে দেরি হচ্ছে। যদিও আদালত থেকে জামিন পেয়ে মুক্ত হয়েছেন আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার আসামি। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন নিলয়ের স্বজন ও সহযোদ্ধারা।
Advertisement
২০১৫ সালের ৭ আগস্ট শুক্রবার ছুটির দিনে জুমার নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই খিলগাঁওয়ের পূর্ব গোড়ানের ৮ নম্বর রোডের ১৬৭ নম্বরের পাঁচতলা ভবনের পঞ্চমতলায় নিলয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহত নিলয়ের বাড়ি পিরোজপুর জেলার চাল্লিশা গ্রামে। বাবা তারাপদ চট্টোপাধ্যায় নিজের কৃষিজমি দেখাশোনা করেন। নিলয় কাজ করতেন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়। যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তখনকার ২৭ বছর বয়সী নিলয়। যিনি ইস্টিশন ব্লগে লিখতেন নিলয় নীল নামেও।
নিলয় হত্যাকাণ্ডের ঘণ্টা চারেক পর আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা, আনসার আল ইসলামের নামে সংবাদপত্র অফিসে ই-মেইল পাঠিয়ে দায় স্বীকার করা হয়। রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় চারজনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা করেন স্ত্রী আশা মনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই মামলায় ১২ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে শেখ আব্দুল্লাহ, খায়রুল ইসলাম, সাকিব ওরফে সাদ্দাম, আরাফাত হোসেন ও মোজাম্মেল হোসেন কারাগারে।
Advertisement
কাউসার হোসেন, সাদ আল নাহিন, আরিফুল আযম, মাসুদ রানা, মর্তুজা সাব্বির, মাওলানা মুফতি আবদুল গফুর ও কামাল হোসেন উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।
স্বামী হত্যা মামলার তদন্তে হতাশা ব্যক্ত করে আশা মনি বলেন, ‘দিন-দুপুরে একটা মানুষকে খুন করা হলো। ঘটনার পর একটি নয়, দুটি নয় পাঁচটি বছর পেরিয়েছে। সময়টা অনেক বেশি। কিন্তু মামলার তদন্তই শেষ হলো না। বিচারিক প্রক্রিয়ায় আরও অপেক্ষা করতে হবে, ভেবে খুব হতাশ হচ্ছি।
পুলিশ তৎপর হলে এতো দিনে মামলার অগ্রগতি হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মামলা তদন্তে দীর্ঘসূত্রতায় আটকে আছে। আসামিরা জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছে। যে চলে গেছে তাকে তো আর ফিরে পাবো না। কিন্তু বিচার যদি পেতাম…।’
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম জাগো নিউজকে বলেন, নীলাদ্রি মামলা ডিটেক্ট। একজন আসামির সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সেটা করতে না পারাটা মামলার অপূর্ণাঙ্গতা। সেটা শেষ করেই আমরা শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো। এজন্য ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে।
নীলান্দ্রি নিলয় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আনসার আল ইসলাম। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকা সাত আসামিকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু আসামি ছিল সন্দেহভাজন, তাদের বিষয়টি আলাদা। জঙ্গি সংশ্লিষ্ট আসামি প্রত্যেককে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
জেইউ/এসএইচএস/এমএস