আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন
Advertisement
আমার পূর্ব পুরুষ ছিলেননেহায়েত এক নিরীহ জীবন্ত রোবটকেবল যন্ত্রের মত পরিশ্রম করতেন।হুকুম পালন করতেন পরাক্রমশালীর।
পশ্চিম থেকে সুঠামদেহী যে কোনো শক্তিশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এসে কখনো যুদ্ধ করে, কখনো বিনা রক্তপাতে,কখনো মনিবকে বধ করেদখল নিত প্রিয় বাংলা ভূমি।
আমার নিরীহ রোবট পূর্ব পুরুষ প্রতিনিয়ত দখলদারকে কুর্নিশ করেছেন,মাথার ঘাম পা’য়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদনের পূর্বেই তাদের পদতলে খাজনা সমর্পণ করেছেন। খাজনা দিতে না পারলে দখলদারের পেয়াদার চাবুকের আঘাতে নতজানু হয়ে রক্তপাত সহ্য করেছেন,দাঁতে দাঁত চেপে নিঃশব্দে কেবল বিধাতার নিকট বিচার চেয়েছেন,কোনো প্রতিবাদী শব্দ উচ্চারণের সাহস পান নি।
Advertisement
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কেবলই শোষিত, কেবলই নির্যাতিত হয়েছেনআমার পূর্ব পুরুষ। কখনো শাসক, কখনো বর্গীকারো চামড়া শাদা, কারো চামড়া আমাদের মতোই। কিন্তু কেউ বন্ধুর বেশে নয়,নিষ্ঠু র অত্যাচারীর বেশে শাসনের নামে কেবলই লুটেছে বাংলা- আমার প্রিয় মাতৃভূমি।
১৯২০ সালের মার্চের সতের তারিখে, টুঙ্গীপাড়ার শ্যামল মাটিতে মা সাহারার কোল আলো করে তুমি জন্মেছিলেমহান সৃষ্টিকর্তার অসীম দান হিসেবে।
সৃষ্টিকর্তা তোমার মাঝে অসীম সাহস দান করেছেন, কষ্টসহিষ্ণু চিত্ত দিয়েছেন,লোভ সম্বরণের অসাধারণ ক্ষমতা দিয়েছেন, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরম বিচক্ষণতা,গরিব-মেহনতী মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ,মাতৃভূমির মাটিকে মা ও সন্তানের চেয়ে অধিক ভালবাসার সক্ষমতা দিয়েছেন।
তোমার প্রতি বিধাতার অসীম দানের দ্যুতিতে আজ আমি দাস নই, আজ আমি পরাধীন নই,আজ সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত আমার কোনো প্রভু নেই, আজ আমার মাথার ওপর কারো পা ঘোরে না,আজ কারো বাড়ির সামনে দিয়ে জামা-জুতা খুলে পথ পাড়ি দিতে হয় না,আজ আমার মায়ের ভাষায় কথা বলতে কেউ আমাকে রুখতে পারে না।
Advertisement
আজ আমি স্বাধীন, আমি সার্বভৌম,আমি মর্যাদাবান, আমার শির উন্নত, আমি মুক্ত বাতাসে মাথা উঁচু করে নিঃশ্বাস নিই, আমার মনের ভাব দ্বিধাহীন চিত্তে প্রকাশ করি, আজ আমার দেশের মালিক আমিই জনগণ।
পিতা, তোমার জন্যই আমার এই অমূল্য প্রাপ্তি।
যতকাল পৃথিবী থাকবে ততকাল বাঙালির হৃদয়ে তুমি জাগরূক থাকবে।তোমার মহাপ্রয়াণ দিবসে হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধাঞ্জলি।
এইচএ/জেআইএম