সারা হাউজিংয়ের বিরুদ্ধে সৌদি প্রবাসীর প্রতারণার অভিযোগ

২০১১ সালে ভবন নির্মাণের চুক্তিতে সারা হাউজিংকে জমি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সৌদি প্রবাসী মো. আব্দুল হক। আড়াই বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষে তাকে ভাগের অর্ধেক ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ফ্ল্যাট বুঝে পাননি আব্দুল হক। তাকে ভয়ভীতি আর হুমকি-ধমকি দেয়া হয়েছে। এমনকি আব্দুল হকের বিরুদ্ধে সারা হাউজিংয়ের সংশ্লিষ্টরা মিথ্যা মামলাও করেছে।

গত বুধবার (১২ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে মওলানা মো. আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন আব্দুল হক ও তার পরিবারের সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল হক বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর সৌদি আরবের মক্কায় ছিলেন তিনি। প্রবাস জীবনের সবটুকু সঞ্চয় দিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ডি ব্লকে পাঁচ কাঠা জায়গা কেনেন। ওই জায়গায় সাত তলা ভবন নির্মাণের জন্য সারা হাউজিংয়ের স্বত্বাধিকারী মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ২০১১ সালের ৬ জুন চুক্তি করেন আব্দুল হক। চুক্তি অনুযায়ী ৩০ মাসের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ করে আব্দুল হককে দ্বিতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটগুলো বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল সারা হাউজিংয়ের। ফ্ল্যাট বুঝে না পেয়ে ২০১৬ সালে সারা হাউজিংকে নোটিশ দেন, পরে ঢাকার জেলা জজ আদালতে মিস কেস করেন তিনি। এতে সারা হাউজিংয়ের মালিকানাধীন তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম তলায় ‘স্ট্যাটাস কো’ জারি করেন আদালত।

তিনি বলেন, এর মধ্যে ২০১৫ সালে সারা হাউজিংয়ের স্বত্বাধিকারী মুজিবুর রহমানের আশ্বাসের ভিত্তিতে নিজ খরচে চতুর্থ তলার কাজ করেন। ষষ্ঠ তলারও আংশিক কাজ করেন। এতে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ হয়। পুরো টাকা সারা হাউজিংয়ের দিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও এর অর্ধেকও পরিশোধ করেনি তারা। এছাড়া দ্বিতীয় তলার কাজ এখনও শেষ হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আইনের আশ্রয় নেয়ার পর থেকে সারা হাউজিংয়ের মালিকের ভাগনে নুরুল আমিন ও সারা হাউজিংয়ের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হোল্ডার আনিসুল হক খান তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আব্দুল হক ও তার পরিবারের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। মিথ্যা মামলা ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অব্যাহতভাবে অন্যায় ও অপরাধ করে আসছে।

আব্দুল হকের অভিযোগ, তার ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দেয়ায় আইনের আশ্রয় নিয়ে বিভিন্ন সময় আদালত তার পক্ষে রায় দিয়েছেন। তবে সারা হাউজিং কর্তৃপক্ষ আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে তার সঙ্গে প্রতারণা করেই যাচ্ছে। আদালতের স্ট্যাটাস কো থাকলেও তারা পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছে। তাকে মানসিকভাবে হেয় করতে চট্টগ্রাম আদালতে একটি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে আরবিট্রেশন বোর্ড সালিশি কার্যধারা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সারা হাউজিংয়ের কাউকে ভবনে প্রবেশ এবং তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম তলায় কোনো ধরনের না করার জন্য নির্দেশ দেয়। তবে সারা হাউজিং দিব্যি কাজ করে যাচ্ছে। ওই বোর্ড সালিশি রোয়েদাদ ঘোষণা করে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা জমির মালিককে ৪৫ দিনের মধ্যে বুঝিয়ে দিতে বলে। এছাড়া ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রতি ফ্ল্যাটের ভাড়া আরও ২৮ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। সেই টাকা না পেলে মানি জারি মামলা করেন আব্দুল হক। বিপরীতে সারা হাউজিং আদালতে মিস কেস করলে টাকার ১০ শতাংশ জমা করে শুনানি করার আদেশ দেন। ওই আদেশের নকল কপি নিয়ে হাইকোর্টে মানি জারি মামলা ছয় মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সারা হাউজিংয়ের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ের দীর্ঘ বিবরণ তুলে ধরেন আব্দুল হক। সবকিছু তার পক্ষে থাকলেও সারা হাউজিং তাকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে যাচ্ছে, বরং হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, এমনকি মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী, দুদক চেয়ারম্যান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারমান, পুলিশ প্রধান, র্যাব মহাপরিচালক, ডিএমপি পুলিশ কমিশনারসহ বিভিন্ন দফতরে একাধিক অভিযোগ পাঠিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি বলে উল্লেখ করেন আব্দুল হক।

এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, আমি একজন বৃদ্ধ মানুষ, অসুখে ভুগছি। আমি আমার সন্তানদের নিয়ে সার্বক্ষণিক দুশ্চিন্তার মধ্যে বসবাস করছি। আমার জীবনের সঞ্চিত অর্থে কেনা শেষ সম্বলটুকু রক্ষা করার জন্য একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করে বিষয়টি সুরাহা করার জন্য আপনার কাছে বিনীতভাবে আবেদন জানায়।

এমএসএইচ/এমএস