মতামত

পুলিশ হোক জনতার

বিরাজমান করোনাকালে সম্মুখযোদ্ধার ভূমিকায় পুলিশ সদস্যরা। বাংলাদেশ পুলিশের অনবদ্য ভূমিকায় সারাদেশে এবার বেশ প্রশংসা পেয়েছে। নানা কারণে নেতিবাচক খবরের বিষয়বস্তু হওয়ায় জনমানসে পুলিশ সম্পর্কিত যে ভীতিপপ্রদ ভাবমূর্তি ছিল মাত্র তিন/চার মাসেই এই দুঃসময়ে পুলিশ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে তা বলা যায়। এ দুর্যোগে বাংলাদেশ পুলিশের বহুমুখী মানবিক ভূমিকা মুগ্ধতা জাগানিয়া, বিস্ময়কর এবং অনুপ্রেরণাদায়ীও।

Advertisement

একারণে আন্তর্জাতিকভবেও বাংলাদেশে পুলিশের প্রশংসা করা হচ্ছে। বিদেশি মিডিয়ায় পুলিশের ভালো কাজগুলো স্থান পাচ্ছে। শত বদনাম ঘুচিয়ে জীবন বাজি রেখে, জীবন দিয়ে পুলিশ যে জনগণের বন্ধু তা প্রমাণ করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও পুলিশের প্রশংসা করেছেন। সত্যিই করোনাকালে পুলিশ’এর বিচিত্র ও চমৎকার সব কার্যক্রমে ইতিবাচক ভাবমূর্তি পুলিশের। পুলিশ আরও জনবান্ধব হচ্ছে। আর তা হওয়া খুব জরুরি বটে।

কথা হলো বাংলাদেশ পুলিশের এ সুনাম ধরে রাখা যাবে কিনা? যখন করোনা থাকবে না, তখন কী হবে? পুলিশ কি আগের অবস্থায় ফিরে যাব? পুলিশের নয়া আইজিপি বলেছেন- পুলিশ যেখানে গিয়েছি সেখান থেকে আর ফিরে আসব না। সেখান থেকে আরও এগিয়ে যাব পুলিশ। মানুষের ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধার যে জায়গা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশতা ধরে রাখবেই। আইজিপির কথায় আমরা আশ্বস্ত হতে পারি। পুলিশ জনবান্ধব না হলে জনগণের জন্য তা কষ্টের, দেশের জন্যতো বটেই। করোনাকালে পুলিশ জনগণের যে বন্ধন তৈরি হয়েছে তা যেন অটুট থাকে এই প্রত্যাশা এখন সবার।

একটু পেছনে ফিরে যাই। পুলিশ দুঃসময়ে দেশের জন্য জনগণের জন্য যে কাজ করে তার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধেও পুলিশ তাদের দেশপ্রেমের প্রমাণ দিয়েছে। পাকিস্তাানি বাহিনীকে প্রতিহত করতে প্রথম জীবন দিয়ে ছিল এই পুলিশবাহিনীর সদস্যরা। কতক দুর্নীতিবাজের কারণে ভাল কাজগুলো ম্লান হয় সব সময়। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ পুলিশে সৎ, নিষ্ঠাবান এবং দেশপ্রেমী সদস্য রয়েছেন। পুলিশে এখন পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তারা স্থান পাচ্ছেন। যার সুফল মিলতে শুরু করেছে।

Advertisement

বলছিলাম পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা। হলিআর্টিজানে জঙ্গি হামলাকে পরাস্ত করতে একাধিক পুলিশ অফিসারকে জীবন দিতে হয়েছিল। বাংলাদেশের জঙ্গি দমনে পুলিশের ভূমিকা সারা বিশ্বে নন্দিত। বাংলাভাই থেকে শুরু করে সকল জঙ্গি দমনে সফলতা দেখিয়েছে পুলিশ। ৫ মে হেফাজতের তান্ডবকে প্রতিহত করে ঢাকা মহানগরীর শান্তি বজায় রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে। তারপরও ওসি প্রদীপের মত কিছু অপেশাদার অসৎ পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকায় গৌরব প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে এবার করোনাযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা সারা বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশকে এই জায়গাটা ধরে রাখতেই হবে।

২০২০ এর পুলিশ সপ্তাহের প্রতিপাদ্যটা বেশ পছন্দ হয়েছে। তা ছিল 'মুজিববর্ষে অঙ্গীকার, পুলিশ হবে জনতার'। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আসলে পুলিশকে জনতারই হতে হবে। জনগণ যেন আস্থা পায়, বিশ্বাস পায়, পুলিশের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। সেই কাজটি করতে হবে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংকটকালে বাংলাদেশ পুলিশ এখন জনতার পুলিশের ভূমিকায় কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ বিভাগ যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই পুলিশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম, সরকার ঘোষিত লকডাউন নিশ্চিতকরণ, লাশ দাফনসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা প্রদানে বাংলাদেশ পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। যাই বলিনা কেন, এদেশে চাইলেও সব কিছু পুরোপুরি সঠিকভাবে করা যায় না। লকডাউনের প্রথম দিকে পুলিশ এবং জনপ্রশাসন ছিলো হার্ড লাইনে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পুলিশের হার্ডনেসকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে পুলিশ তথা প্রশাসনের ভাবমূতি নষ্টের পাঁয়তারায় নামে কতক মানুষ।

মানুষকে ঘরে রাখার জোরপূর্বক বা নিবর্তনমূলক পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনার ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সমালোচনা হলে বাংলাদেশ পুলিশ সেই স্ট্র্যাটেজি থেকে সরে আসে। এতে দেশের বেশ ক্ষতিও হয়েছে। ঐ সময় লগডাউনটা সঠিকভাবে পালন করা গেলে করোনা পরিস্থিতি অনেক আগেই হয়তো নিয়ন্ত্রণে চলে আসতো। এটা বলতেই হয় করোনাকালে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সচেষ্ট ছিল। আর তা করে তারা প্রশংসিতও হয়েছে। আগে বলা হতো পুলিশ জনগণের বন্ধু। অনেক ক্ষেত্রেই প্রচলিত কথাটির প্রমাণ মিলতো না। পুলিশ কখনো কখনো জনআতংকের কারণ ছিল। বর্তমান সময়ে তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। পুলিশ জনগণের বন্ধু হতে শুরু করেছে। কেবল এই ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখা গেলেই পুলিশ জনগণের বন্ধু হয়েই থাকবে সব সময়।

করোনাকালের শুরুতে যখন হাসপাতালে ডাক্তার ছিল না; দাফন করার মানুষ পাওয়া যাচ্ছিল না। ছেলে বাবা-মার, বাবা-মা ছেলের কাছে যেতে ভয় পেতো পুলিশ তখন মানুষের পাশে ছিল। তাই এসময় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাই করোনায় বেশি আক্রান্ত হন। বিশেষ করে করোনাকালে আমাদের পুলিশের মানবিক এই ভূমিকায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে পুলিশ বাহিনী বীর সদস্যদের স্যালুট জানাই। এটাও আশা করি তারা যেন তাদের এই সাফল্য, এই সুনাম ধরে রাখে। সত্যিকার অর্থেই যেন তারা জনতার পুলিশ হয়।

Advertisement

লেখক : সাংবাদিক।

এইচআর/জেআইএম