বেতন-বোনাসের দাবিতে দেশের ঐতিহ্যবাহী আঞ্চলিক দৈনিক আজাদীর মালিক-সম্পাদকের বাসা ঘেরাও কর্মসূচির পর থেকে দেড় সপ্তাহ ধরে বন্ধ চট্টগ্রামের পাঁচটি পত্রিকার প্রকাশনা। এগুলো হলো- দৈনিক আজাদী, দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক পূর্বদেশ, সুপ্রভাত বাংলাদেশ ও বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ।
Advertisement
পত্রিকাগুলো ঈদের ছুটির আগে দুদিন ও ঈদের ছুটি শেষে গত ৪ আগস্ট বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের অফিস খুললেও চট্টগ্রামের এই আঞ্চলিক দৈনিকগুলোর কার্যালয় খোলেনি। প্রিন্ট ভার্সনের পাশাপাশি অনলাইন সংস্করণও বন্ধ রেখেছে এ পাঁচ পত্রিকা।
এদিকে দেড় সপ্তাহ পার হলেও এসব পত্রিকা চালুর কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় কর্মরত সাংবাদিক-কর্মচারীরা অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছেন। প্রকাশনা বন্ধ হওয়ায় দৈনিক আজাদী ছাড়া অন্য চারটি পত্রিকার সাংবাদিকরা ঈদুল আজহার কোনো বোনাস পাননি।
পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাসের দাবিতে এর আগে গত ২৯ জুলাই নগরের ঘাট ফরহাদাবাদে দৈনিক আজাদীর মালিক ও সম্পাদক এমএ মালেকের বাসার সামনে কর্মসূচি পালন করে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে দৈনিক আজাদী, দৈনিক পূর্বকোণ, সুপ্রভাত বাংলাদেশ, দৈনিক পূর্বদেশ ও বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় স্থানীয় পত্রিকা-সম্পাদকদের সংগঠন ‘চট্টগ্রাম নিউজ পেপারস অ্যালায়েন্স’।
Advertisement
পত্রিকাগুলোয় কর্মরত সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে লোকসানের অজুহাতে পত্রিকার মালিকরা ঈদুল ফিতরের পূর্ণাঙ্গ বোনাস দেননি। ঈদুল আজহায়ও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। সাংবাদিকদের সংগঠন সিইউজে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। এর জেরেই মালিকপক্ষ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েছে।
সাংবাদিক নেতারা জানান, আন্দোলনের আগে পূর্ণাঙ্গ বোনাসের দাবিতে পত্রিকাগুলোর মালিকদের কাছে বারবার চিঠি দিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেননি।
সিইউজের সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম জানান, ঈদুল ফিতরে এসব পত্রিকার সাংবাদিকদের অর্ধেক বোনাস দেয়া হয়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য সম্পাদকদের সংগঠন- চট্টগ্রাম নিউজ পেপারস অ্যালায়েন্স বরাবর চিঠি দেয়া হয়, কিন্তু তারা আলোচনায় বসেনি।
এ সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের ধারাবাহিকতায় ঈদুল আজহায়ও অর্ধেক বোনাস দেয়া হচ্ছে বলে আমরা জানতে পারি। এরপর আবারও চট্টগ্রাম নিউজ পেপারস অ্যালায়েন্স বরাবর চিঠি দেয়া হয়, এতে কোনো সমাধান মেলেনি। পরে সংগঠনটির আহ্বায়ক দৈনিক আজাদীর মালিক ও সম্পাদক এমএ মালেকের সঙ্গে সিইউজের পক্ষ থেকে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বিষয়টি নিয়ে পরে আলাপ করবেন বলে জানান। কিন্তু তিনি আর কিছু জানাননি। গত ২৬ জুলাই চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এবং ২৯ জুলাই আজাদীর মালিক ও সম্পাদক এমএ মালেকের বাসার সামনে কর্মসূচি পালন করা হয়।’
Advertisement
বন্ধ পাঁচ পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকরা বলেন, তারা মনে করেছিলেন ঈদুল আজহার ছুটির পর পত্রিকাগুলোর প্রকাশনা আবারও চালু হবে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খোলার বিষয়ে তাদের কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।
এদিকে পত্রিকা মালিকদের দাবি, গত মার্চ মাস থেকে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকাগুলোরও বিক্রি কমে আসে ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। এ অবস্থায় দেশের গণমাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞাপনের পরিমাণও কমে গেছে।
লোকসানের ধাক্কা সামাল দিতে প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ রাখে কয়েকটি জাতীয় পত্রিকা। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় দুই ঈদের ৫০ শতাংশ বোনাস কাটাসহ সাংবাদিকদের বেতন কমানোরও সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে বন্ধ পত্রিকাগুলো খুলে দেয়ার দাবিতে সোমবারও (১০ আগস্ট) সমাবেশ করেছে সিইউজে। এর আগে গত ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নিউজ পেপারস অ্যালায়েন্স আহ্বায়ক ও দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এমএ মালেক বলেন, ‘পত্রিকা প্রকাশের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কথাবার্তা চলছে, সিইউজের সঙ্গে বসলে এ বিষয়ে জানানো যাবে।’
আবু আজাদ/বিএ/জেআইএম