দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃত বন্যায় এ পর্যন্ত অর্ধকোটিরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখন বন্যা পরিস্থিতি ক্রম উন্নতির দিকে। এর মধ্যেই ফের ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়তে শুরু করেছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান ও সমন্বয় কেন্দ্র এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
দুর্যোগ সাড়াদান ও সমন্বয় কেন্দ্রের সর্বশেষ সোমবারের (১০ আগস্ট) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্যায় দেশের ৩৩টি জেলার ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৩১৩টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের ৫৪ লাখ ৫১ হাজার ৫৮১ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৩ জন।
১৬৫টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। উপদ্রুত ইউনিয়নের সংখ্যা এক হাজার ৬৬টি।
Advertisement
মারা যাওয়াদের বেশিরভাগই শিশু। তারা পানিতে ডুবে মারা গেছে। জামালপুরে সবচেয়ে বেশি ১৫ জন বন্যায় পানিতে ডুবে মারা গেছেন।
লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, রংপুর, সুনামগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, সিলেট, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, নওগাঁ, শরীয়তপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, নাটোর, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, মৌলভীবাজার, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ ও পাবনা জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
বন্যাদুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত ১৯ হাজার ৫০০ টন ত্রাণের চাল, চার কোটি ২৭ লাখ টাকা, শিশুখাদ্য কেনা বাবদ এক কোটি ৫৪ লাখ টাকা, গো-খাদ্য কেনা বাবদ তিন কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এক লাখ ৬৮ হাজারটি শুকনা খাবারের প্যাকেট, ৪০০ বান্ডিল ঢেউটিন এবং গৃহ নির্মাণের জন্য ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
দুর্যোগ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বন্যাকবলিত ৩৩টি জেলায় এক হাজার ২৯৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৪০ হাজার ৩৬০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে আনা গবাদি পশুর সংখ্যা ৬৭ হাজার ৪০৮টি।
Advertisement
পানি বাড়ছে ব্রহ্মপুত্রে
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার ৬টি নদীর পানি সাতটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গুড় নদীর পানি সিংড়া, ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন ও জাগিরে, তুরাগ নদীর পানি মিরপুর, টঙ্গী খালের পানি টঙ্গী, কালীগঙ্গার পানি তারাঘাট এবং পদ্মার পানি গোয়ালন্দে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানির বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে যমুনা নদীর পানি কমছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, পদ্মা নদীর পানি কমছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে। কুশিয়ারা ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীরগুলোর পানি কমছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় নাটোর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী এবং ফরিদপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। একই সঙ্গে, এ সময়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।
ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। গত ২৬ জুন থেকে বন্যা শুরু হয়। এরপর পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হওয়ার পর ১১ জুলাই থেকে দ্বিতীয় দফায় পানি বাড়ে। সর্বশেষ ২১ জুলাই থেকে তৃতীয় দফায় পানি বাড়তে শুরু করে।
আরএমএম/এসআর/এমকেএইচ