একেকবার একেকটা ঘটনা সামনে আসে সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সবাই বুক বাঁধে সিনেমার দিন ফিরবে। কিন্তু ঘটনা ঘটে গেলেও তার কোথাও কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। প্রত্যাশা ছিল মিয়াভাই খ্যাত নায়ক ফারুক এমপি হলে সিনেমার পালে বসন্তের হাওয়া লাগবে। উল্লেখ করার মতো ইতিবাচক কিছুই অর্জিত হয়নি সিনেমায়।
Advertisement
সবাই বলছিলেন প্রযোজকরা সিনেমার অভিভাবক। প্রযোজকদের সমিতি দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে আছে। সেই সমিতি চাঙ্গা হলে চেহারা বদলে যাবে ইন্ডাস্ট্রির। এক বছর পেরিয়ে গেল প্রযোজক সমিতি চাঙ্গা হয়েছে, কিন্তু চাঙ্গা হয়নি ইন্ডাস্ট্রি। নানারকম নীতিমালা, সরকারি উচ্চ পর্যায়ে বেশ কিছু মিটিং, ইন্ডাস্ট্রির ইমেজ নষ্ট করা লোকদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে দেখা গেছে সমিতিকে। তাদের হাত ধরে আবারও জোটবদ্ধ হয়েছে সিনেমা সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর চলচ্চিত্র পরিবার। কিন্তু যেটা সবচে বেশি জরুরি, সেই সিনেমা নির্মাণের ঘোষণাই নেই।
শিল্পী সমিতি নিয়ে তো কিছু আশা করাই বোকামি। কারণ, সিনেমা বাঁচানো বা সিনেমা বানানোর দায়িত্ব এই সমিতির নয়। তার ওপর নানা অভিযোগ-অনিয়মে আক্রান্ত এ সমিতি। শিল্পীদের স্বার্থের চেয়ে এখানে নেতাদের ব্যক্তি স্বার্থই মুখ্য হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ অনেক সিনিয়র তারকার।
সিনেমার অনেকেই দাবি করেন শাকিব খান ইন্ডাস্ট্রির জন্য একাই একশো। তিনিই নাকি গেল এক দশক বাঁচিয়ে রেখেছেন ঢালিউড। সেটা যে কেবলই শাকিবের মন রক্ষা করে তাকে বশে রাখার ‘আষাঢ়ে গল্প’ তা বহুবার প্রমাণ হয়েছে। একা একজন ব্যক্তি বা তারকা কী করে ইন্ডাস্ট্রি বাঁচিয়ে রাখতে পারেন সেই হিসেব কিছুতেই বোধগম্য নয়। সারা দুনিয়ায় এর কোনো নজিরও নেই। তার উপর নিজের ব্যক্তি উন্নয়ন ছাড়া ঢালিউডের কিং খানকে খুব একটা সার্বজনীন চিন্তা-ভাবনায় দেখা যায়নি। বরং নিজের ব্যক্তি ভালোর জন্য তিনি নিজের অভিনীত সিনেমারই প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন, এমন নজির আছে। সুতারাং তার একক হাত ধরে এই দেশের সিনেমার সংকট কাটবে সেই ভরসাও বেশ অস্বস্তিকর।
Advertisement
সত্যি কথা বলতে একা একজনের পক্ষে কখনোই একটা বিশাল ইন্ডাস্ট্রি টিকিয়ে রাখা বা একে সচল রাখা সম্ভব নয়। প্রয়োজন একতা, জোটবদ্ধ প্রচেষ্টা; যার অভাব ঢালিউডের প্রতি পদক্ষেপে লক্ষনীয়। যদি শাকিব হৃদয় খুলে দিয়ে নিজেকে বিস্তৃত করতে পারতেন সবার জন্য, যদি অন্যরাও শাকিবকে হৃদয়ে নিয়ে তার পাশে দাঁড়াতে পারতেন; ভালো কিছু হতেও পারতো। সেই ‘ভাবসাব’ দেখা যাচ্ছে না আপাতত।
এদিকে বন্ধ হতে হতে ২শ’র নিচে নামতে চলছে সিনেমা হল। সিনেমার নির্মাণ কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। গেল দুই বছর ধরে দেখা যাচ্ছে বছর শেষে ৫০টি ছবিও মুক্তি পাচ্ছে না। আর করোনাভাইরাসের শিকার ২০২০ সালে তো ১০টি ছবিও হবে না।
তাহলে সিনেমার কী হবে? ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই সিনেমার দিন এখানেই শেষ? কিছুই কী করণীয় নেই কারো? এসব প্রশ্নকে সামনে রেখে উদ্যোগ নিতে চলেছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিনেমা হল স্টার সিনেপ্লেক্স। প্রতিষ্ঠানটি সিনেমা বাঁচাতে, সিনেমার সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
আগামীকাল বুধবার (১২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হওয়া এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল।
Advertisement
তিনি জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চলচ্চিত্র শিল্প। দীর্ঘ পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে সিনেমা হল বন্ধ। এই শিল্পে বিনিয়োগকারী এবং সংশ্লিষ্ট সকলে চরম সংকটপূর্ণ সময়ের মুখোমুখি। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই শিল্প ক্রমশ গভীর অনিশ্চয়তার দিকে পতিত হবে। লোকসানের কবলে পড়ে সিনেমা হল এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। চরম মানবেতর জীবনে পড়া এই শিল্পের সঙ্গে যুক্তরা একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যাবে।
রুহেল বলেন, ‘সিনেমা বাঁচাতে হলে আগে হল বাঁচাতে হবে। সিনেমা বাঁচাতে, সিনেমার সোনালী দিন ফেরাতে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। স্টার সিনেপ্লেক্সের পক্ষ থেকে আমরা চেষ্টার সর্বোচ্চটাই করে যাবো। তাই সিনেমাকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে করণীয় কিছু বিষয় ও দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরতে চাই। সেজন্যই গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছি।’
এলএ/জেআইএম