দেশজুড়ে

শেরপুরে পাহাড়ি ঢলে প্রতি বছর কোটি টাকার ক্ষতি

শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার তিন উপজেলায় প্রতি বছর বর্ষা মওসুমে দফায় দফায় পাহাড়ি ঢলে কোটি টাকার সম্পদ ও জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি হলেও ক্ষতির পরিমান কমাতে স্থায়ী কোন প্রতিকার করা হচ্ছে না বলে সীমান্তবসীর অভিযোগ রয়েছে।জানা গেছে, প্রতি বছর টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার ভোগাই, চেল্লাখালী, মহারশি, সোমেশ্বরী, ঢেউফা ও মালিঝি নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ওইসব এলাকার বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে রাস্তা-ঘাট, ফসলের মাঠ, ঘর-বাড়ি ও মৎস্য খামারসহ বিভিন্ন পুকুরের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ফলে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার সম্পদ হানী হচ্ছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ জুলাই উজানের পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার পৌরসভাসহ বাঘবেড়, নয়াবিল, নালিতাবাড়ী, যোগানিয়া, কলসপাড় ইউনিয়ন আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়। এসময় পানির তোড়ে প্রায় শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ী, পুকুর, পল্ট্রি খামার, ফসলের মাঠ, বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো-ভবন ও নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও ছোট ছোট ব্রীজ কালভার্টের ব্যাপক ক্ষতি  হয়েছে।উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঢলের পানিতে উপজেলার ১৭৭টি পুকুরের প্রায় ৬০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। পানির তোড়ে নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দরের দুই লেন সড়কের ১১টি স্থানে ভেঙে যাওয়ায় নালিতাবাড়ী থেকে নাকুগাঁও স্থলবন্দরের সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ হযে যায়।নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান রিপন জানান, বিভিন্ন পাহাড়ী নদীগুলোর বাঁধ শক্ত করে বিশেষ করে সিসি ব্লক তৈরী করা হলে বাঁধগুলো আরো মজবুত হতো এবং ঢলের পানিতে সে বাঁধ সহজেই ভাঙ্গতো না। বিষয়টি  কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। আশা করছি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এবং সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে। এছাড়া নালিতাবাড়ী উপজেলায় গত ৮ জুলাইয়ের ঢলে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরীর জন্য সংশ্লিষ্ট মহলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।স্থানীয়রা জানায়, জেলার উল্লেখিত উপজেলার নদীগুলোর শক্তিশালী সিসি ব্লক নির্মানের মাধ্যমে বাঁধ নির্মান করা হলে ক্ষতির পরিমান অনেক কম হতো। প্রতি বছর ঢলের তোড়ে বিভিন্ন নদীর বাঁধ ভেঙ্গে গেলেও পরবর্তিতে তা ভালোভাবে মেরামত করা হয় না। ফলে পরবর্তিতে আবারও ঢলের পানিতে ভেসে যায়।  ঢলের পানিতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। ঢলের পানিতে তাদের জমিতে বিপুল পরিমানের বালুর স্তর পড়ার কারণে ওই জমিতে পরবর্তিতে আর কোন ফসল ফলানো যায় না। বালু অপসারনের জন্য সরকারী কোন ব্যবস্থা না থাকায় অনেক দরিদ্র কৃষকের জমি বছরের পর বছর অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকে। এছাড়া সরকার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ী মেরামতেরও তেমন কোন সাহায্য-সহযোগিতা পায়না।হঠাৎ করেই কয়েক ঘন্টার জন্য এ পাহাড়ী ঢল আসার কারণে গ্রামবাসী তাদের সম্পদ রক্ষায় কোন প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে সীমান্তের গারো পাহাড়ের হত দরিদ্র জনগোষ্ঠি প্রতিবছর বর্ষা মওসুমে পাহাড়ি ঢলের আতংক নিয়ে বসবাস করে আসছে। এ আতংক থেকে মুক্তি পেতে ভুক্তভোগী সীমান্তের প্রায় শতাধিক গ্রামের কয়েক লাখ  মানুষ সরকারের কাছে সু-দৃষ্টি কামনা করছেন।

Advertisement