বাংলাদেশের সংগীতে সত্তর দশক থেকেই পরিচিত নাম আলাউদ্দিন আলী। বাংলা গান তথা বাংলা চলচ্চিত্রের গানে কিংবদন্তি তিনি। একই সঙ্গে সুরকার, সংগীত পরিচালক, বেহালাবাদক ও গীতিকার। তার লেখা, সুর করা ও সংগীত পরিচালনায় অসংখ্য গান শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে। চলচ্চিত্র, বেতার, টেলিভিশন মিলে প্রায় হাজার পাঁচেক গান তৈরি করেছেন তিনি। সেসব গান আজও মুখে মুখে ফেরে।
Advertisement
আজ রোববার (৯ আগস্ট) বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি। রাজধানীর মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৮ বছর।
বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক অডিও সাক্ষাতকারে আলাউদ্দিন আলী নিজের সম্পর্কে অনেক কথা বলে গেছেন। সেখানে তিনি জানান, ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে বাবার ভাড়া বাসায় তার জন্ম। পৈতৃক ভিটা মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে। বাবাও ছিলেন গানের মানুষ। নাম ওস্তাদ জাদব আলী। চাকরি করতেন বাংলাদেশ বেতারে। মায়ের নাম জোহরা খাতুন।
দেড় বছর বয়সে পুরান ঢাকা থেকে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে চলে আসেন আলাউদ্দিন আলী। তিন ভাই ও দুই বোনের সঙ্গে সেই কলোনিতেই বড় হন এই গুণী শিল্পী।
Advertisement
সংগীতে তার প্রথম হাতেখড়ি বেহালায়, ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে। ছোটবেলাতেই বেহালা বাজানোর জন্য ‘অল পাকিস্তান চিলড্রেনস প্রতিযোগিতায়’ পুরস্কার পান ঢাকার এ শিল্পী।
১৯৬৮ সালে আলতাফ মাহমুদের সঙ্গে বেহালাবাদক হিসেবে চলচ্চিত্রজগতে পা রাখেন। প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজসহ বিভিন্ন সুরকারের সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছেন। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে বেহালা বাজাতে গিয়ে সংগীত পরিচালনার উপর আগ্রহ সৃষ্টি হয় এই সংগীত পরিচালকের। ১৯৭২ সালে দেশাত্মবোধক গান ‘ও আমার বাংলা মা’ গানের মাধ্যমে জীবনে প্রথম সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার।
তারপর বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়মিত কাজ করলে একই বছর ‘সন্ধিক্ষণ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম সিনেমাতে সংগীত পরিচালনা শুরু করেন তিনি। তিনি ১৯৭৫ সালে সংগীত পরিচালনা করে বেশ প্রশংসিত হন। খ্যাতিমান পরিচালক গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেছেন। এছাড়াও তিনি গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৯), সুন্দরী (১৯৮০), কসাই এবং যোগাযোগ চলচ্চিত্রের জন্য সংগীত পরিচালনা করেছেন।
সব মিলিয়ে প্রায় ৩০০টিরও অধিক চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে পাঁচবার, শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে একবার এবং সেরা সুরকার হিসেবে একবার, মোট ৭টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন আলাউদ্দিন আলী। এছাড়াও দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ভূষিত হয়েছেন নানান সম্মাননা ও স্বীকৃতিতে।
Advertisement
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের বহু নন্দিত কণ্ঠশিল্পী তার সুরে গান করে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন।
এলএ/এমকেএইচ