বিনোদন

সুরকার আলাউদ্দিন আলীর জন্য কবীর সুমনের প্রার্থনা

দীর্ঘদিন ধরেই নানা রোগে আক্রান্ত দেশের বরেণ্য গীতিকার ও সুরকার আলাউদ্দিন আলী। দেশ-বিদেশে কয়েক দফা চিকিৎসার পর খানিকটা সুস্থ হয়ে কয়েক মাস ধরে বাড়িতেই ছিলেন। শনিবার (৮ আগস্ট) ভোর পৌনে ৫টায় হঠাৎ করে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।

Advertisement

পরে তাকে মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখে লাইফ সাপোর্টে রাখার পরামর্শ দেন। এখনো ভেন্টিলেটর দিয়ে রাখা হয়েছে আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই সুরকারকে।

এদিকে আলাউদ্দিন আলীর অসুস্থতার খবরে বিষাদের ছায়া নেমেছে দেশের সংগীতাঙ্গনে। সবাই তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছেন। সেই তালিকায় যোগ দিয়েছেন ওপার বাংলার কিংবদন্তি গীতিকবি, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ও গায়ক কবীর সুমন।

সোশাল মিডিয়ায় তিনি আলাউদ্দিন আলীর অসুস্থতার খবর শেয়ার করে লিখলেন, ‘বাংলাদেশের অসামান্য সুরকার আলাউদ্দিন আলী খুব অসুস্থ, লাইফ সাপোর্টে আছেন। আসুন, তার জন্য প্রার্থনা করি।’

Advertisement

সুমন আরও বলেন, ‘বাংলাভাষী দুনিয়ায় আলাউদ্দিন আলীর মতো সুরকার খুব কম এসেছেন গত তিরিশ-চল্লিশ বছরে।’

প্রসঙ্গত, সংগীত পরিচালনায় সত্তরের দশক থেকে পরিচিত নাম আলাউদ্দিন আলী। বাংলা গান তথা বাংলা চলচ্চিত্রের গানে কিংবদন্তি তিনি। একই সঙ্গে সুরকার, সংগীত পরিচালক, বেহালাবাদক ও গীতিকার। তার লেখা, সুর করা ও সংগীত পরিচালনায় অসংখ্য গান শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে। চলচ্চিত্র, বেতার, টেলিভিশন মিলে প্রায় হাজার পাঁচেক গান তৈরি করেছেন তিনি। সেসব গান আজও মুখে মুখে ফেরে।

১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে বাবার ভাড়া বাসায় জন্মগ্রহণ করেন আলাউদ্দিন আলী। তার পৈতৃক ভিটা মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে। বাবাও ছিলেন গানের মানুষ। নাম ওস্তাদ জাদব আলী। চাকরি করতেন বাংলাদেশ বেতারে। মায়ের নাম জোহরা খাতুন।

দেড় বছর বয়সে পুরান ঢাকা থেকে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে চলে আসেন আলাউদ্দিন আলী। তিন ভাই ও দুই বোনের সঙ্গে সেই কলোনিতেই বড় হন এই গুণী শিল্পী।

Advertisement

সংগীতে তার প্রথম হাতেখড়ি বেহালায়, ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে। ছোটবেলাতেই বেহালা বাজানোর জন্য ‘অল পাকিস্তান চিলড্রেনস প্রতিযোগিতায়’ পুরস্কার পান ঢাকার এ শিল্পী।

১৯৬৮ সালে আলতাফ মাহমুদের সঙ্গে বেহালাবাদক হিসেবে চলচ্চিত্রজগতে পা রাখেন। প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজসহ বিভিন্ন সুরকারের সহযোগী হিসেবেও কাজ করেছেন। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে বেহালা বাজাতে গিয়ে সংগীত পরিচালনার উপর আগ্রহ সৃষ্টি হয় এই সংগীত পরিচালকের। ১৯৭২ সালে দেশাত্মবোধক গান ‘ও আমার বাংলা মা’ গানের মাধ্যমে জীবনে প্রথম সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার।

তারপর বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়মিত কাজ করলে একই বছর ‘সন্ধিক্ষণ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম সিনেমাতে সংগীত পরিচালনা শুরু করেন তিনি। তিনি ১৯৭৫ সালে সংগীত পরিচালনা করে বেশ প্রশংসিত হন। খ্যাতিমান পরিচালক গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেছেন। এছাড়াও তিনি গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৯), সুন্দরী (১৯৮০), কসাই এবং যোগাযোগ চলচ্চিত্রের জন্য সংগীত পরিচালনা করেছেন।

সব মিলিয়ে প্রায় ৩০০টিরও অধিক চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে ৭ বার এবং শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে ১ বারসহ মোট ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন আলাউদ্দিন আলী। এছাড়াও দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ভূষিত হয়েছেন নানান সম্মাননা ও স্বীকৃতিতে।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের বহু নন্দিত কণ্ঠশিল্পী তার সুরে গান করে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন।

আলাউদ্দিন আলীর জনপ্রিয় ও কালজয়ী কিছু গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- একবার যদি কেউ ভালোবাসতো, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ, ভালোবাসা যতো বড়ো জীবন তত বড় নয়, দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়, হয় যদি বদনাম হোক আরো, আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার, সুখে থাকো, ও আমার নন্দিনী হয়ে কারও ঘরনি, সূর্যোদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি ও আমার বাংলাদেশ, বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না, যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে, মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে, এমনও তো প্রেম হয়, চোখের জলে কথা কয়, সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে রে, আমায় গেঁথে দাওনা মাগো, একটা পলাশ ফুলের মালা, শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে, কেউ কোনো দিন আমারে তো কথা দিল না, পারি না ভুলে যেতে, স্মৃতিরা মালা গেঁথে, জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো, আমার মনের ভেতর অনেক জ্বালা আগুন হইয়া জ্বলে, হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ ইত্যাদি।

এলএ/এমকেএইচ