জাল পার্সপোর্ট নিয়ে প্রবেশের অপরাধে দীর্ঘ ৫ মাস ধরে প্যারাগুয়ের জেলে বন্দী সাবেক ব্রাজিল এবং বার্সেলোনা সুপারস্টার রোনালদিনহো। তার সঙ্গে বন্দী ভাই রবার্তো ডি অ্যাসিসও। দীর্ঘ ৫ মাস কারাবাসের যন্ত্রণা থেকে অবশেষে মুক্তি মিলতে যাচ্ছে তাদের। তবে এ জন্য প্যারাগুয়েকে রীতিমত ‘নাকে খত’ দিয়েই যেতে হচ্ছে ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলারকে।
Advertisement
শুক্রবারই রোনালদিনহো এবং তার ভাইয়ের মামলা নিয়ে কাজ করা প্রসিকিউটরের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, সর্বশেষ শুনানির অপেক্ষায় তারা। এরপরই রোনালদোকে মুক্তির আদেশ দেবেন আদালত। মূলতঃ শুক্রবার প্যারাগুয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কঠিন কিছু শর্ত মেনে নেয়ার পরই রোনালদিনহোদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়।
প্যারাগুয়ের পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসকে বলা হয়েছে, রোনালদিনহোর নামে যে তদন্ত চলছে, সেটাকে দ্রুত বন্ধ করে দেয়া হোক। এরপরই আদালত সর্বশেষ শুনানির তারিখ ঘোষণা করবেন।
নাকে খত দেয়ার মত যেসব কঠিন শর্তে মুক্তি পাচ্ছেন রোনালদিনহো এবং তার ভাই রবার্সে ডি অ্যাসিস- সেগুলো হলো, দু’জনকেই তাদের অপরাধ আদালতে দাঁড়িয়ে স্বীকার করতে হবে। বলতে হবে, ‘আমরা অপরাধী।’ শুধু তাই নয়, মুক্তির জন্য রোনালদিনহোকে ৯০ হাজার ডলার এবং তার ভাইকে পরিশোধ করতে হবে ১ লাখ ১০ হাজার ডলার।
Advertisement
রবার্তো ডি অ্যাসিস আজীবনই প্যারাগুয়েতে ক্রিমিনাল (অপরাধী) হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকবেন। তার ভাই রোনালদিনহোকে অবশ্য এ ক্ষেত্রে ক্লিয়ার করে দেয়া হয়েছে। তাকে অপরাধীর তালিকাভুক্ত করা হবে না।
প্যারাগুয়ের কারাগার থেকে মুক্তি পেতে আরও কিছু কঠিন শর্ত দেয়া হয়েছে ব্রাজিলের সাবেক এই ফুটবলারদের। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, আগামী দুই বছর রোনালদিনহো ব্রাজিলের বাইরে যে কোনো দেশে, যে কোন জায়গায় যেতে পারবে। তবে তার আগে অবশ্যই কোথায় যাচ্ছেন, সেটা প্যারাগুয়েকে জানিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আগামী দুই বছর রোনালদিনহোর ভাই ব্রাজিলের বাইরে কোথাও যেতে পারবেন না।
দুই ভাইকে আবার প্রতি তিন মাস পরপর ব্রাজিলের একটি ফেডারেল জজ আদালতে গিয়ে হাজিরা দিতে হবে। এমন অবস্থা চলবে দুই বছর পর্যন্ত। এরপরই ক্লিয়ারেন্স পাবেন তারা দু’জন।
তাদের আইনজীবী সার্জিও কুইরোজ বলেন, ‘পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অর্থনৈতিক কিংবা এ সম্পর্কিত কোনো অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ৫ মাস জেল খাটার পর অবশেষে এটাই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, যা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম।’
Advertisement
গত মার্চেই রোনালদিনহো এবং তার ভাই বরার্তো জাল পাসপোর্ট বহন করে প্যারাগুয়েতে প্রবেশ করার অপরাধে গ্রেফতার হন। প্রাথমিক শুনানির পর তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর একমাস পর ৮ লাখ ডলারের বিনিময়ে কারাগার থেকে ছাড়া পেলেও প্যারাগুয়ের রাজধানী আসুসিওনের একটি লাক্সারি হোটেলে তাদেরকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। সে থেকে ওই হোটেলেই বন্দী রয়েছেন তারা।
শুনানিকালে রোনালদিনহো প্যারাগুয়ের স্থানী কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, ‘ওই জাল পাসপোর্টটি তাকে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের এক ব্যবসায়ী, যার নাম উইলমন্ড সোউসা লিরিয়া। যিনি নিজেও জেল খেটেছিলেন।’
গত বছরই পরিবেশ সংক্রান্ত এক অপরাধের তদন্তে গিয়ে ব্রাজিল কর্তৃপক্ষ রোনালদিনহোর পাসপোর্ট আটক করে। পরে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে রোনালদিনহোর কাছে পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত জানা গেলো না, কেন রোনালদিনহো নিজের অরিজিনাল পাসপোর্ট রেখে জাল পাসপোর্ট নিয়ে প্যারাগুয়েতে প্রবেশ করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, প্রমাণিত হলে, ৫ বছরের কারাদণ্ডের শাস্তিও ভোগ করতে হতে পারে তাদেরকে।
আইএইচএস/এমকেএইচ