ফিচার

খাদ্য ও পুষ্টি সচেতনতা কমাতে পারে করোনা ঝুঁকি

ডা. রিফাত আল মাজিদ

Advertisement

করোনা প্রতিরোধে দেশে দেশে নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। তবে ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবচেয়ে বেশি দরকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দরকার ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ট্রেস এলিমেন্ট। বিভিন্ন ভিটামিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন ডি।

ভাইরাস প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হলো ব্যক্তিগত সচেতনতা গড়ে তোলা। প্রত্যেকের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে মারাত্মক লক্ষণ অর্থাৎ শ্বাসযন্ত্র এবং পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ- সেগুলো সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব। ভাইরাস হলো প্রোটিনযুক্ত অণুজীব, যার কারণে মানুষ জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট এমনকি মারাত্মক নিউমোনিয়ায় (নতুনভাবে) আক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া এ ভাইরাস ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী রোগ তৈরি করতে পারে খুব সহজে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হলো কিছু ভিটামিন, মিনারেল ও এনজাইম, যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের (দেহের কোষ, প্রোটিন ও ডিএনএ ক্ষতি করে এমন কিছু) বিরুদ্ধে লড়াই করে, শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে শরীরে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। প্রধান অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো হলো বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি, ই, লাইকোপেন, লুটেইন সেলেনিয়াম ইত্যাদি।

Advertisement

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ যে খাবারগুলো বেশি করে গ্রহণ করা উচিত-

বিটা ক্যারোটিন: উজ্জ্বল রঙের ফল ও সবজি। যেমন- গাজর, পালংশাক, আম, ডাল ইত্যাদি। ভিটামিন এ’র জন্য গাজর, পালংশাক, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, জাম্বুরা, ডিম, কলিজা, দুধ জাতীয় খাবার। ভিটামিন ই যেসব খাবারে পাওয়া যায়, যেমন- কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, বাদাম তেল, বিচি জাতীয় ও ভেজিটেবল অয়েল, জলপাইয়ের আচার, সবুজ শাক-সবজি ইত্যাদি। ভিটামিন সি’র ক্ষেত্রে আমলকি, লেবু, কমলা, সবুজ মরিচ, করলা ইত্যাদি। এ জাতীয় খাবার, ফল-মূলগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে তো বাড়িয়ে তুলবেই, সেই সঙ্গে আরও বিভিন্নভাবে শরীরকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে। সামগ্রিকভাবে উদ্ভিজ খাবারই হলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সবচেয়ে ভালো উৎস। বিশেষ করে বেগুনি, নীল, কমলা ও হলুদ রঙের শাক-সবজি ও ফল।

সবজি: করলা (বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ), পারপেল বা লাল পাতাকপি, বিট, ব্রোকলি, গাজর, টমেটো, মিষ্টি আলু, ক্যাপসিকাম ও ফুলকপি।

শাক: যেকোনো ধরনের ও রঙের শাক।

Advertisement

ফল: কমলালেবু, পেঁপে, আঙুর, আম, কিউই, আনার, তরমুজ, বেরি, জলপাই, আনারস ইত্যাদি।

মসলা: আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি, গোলমরিচ।

বিচি: শিমের বিচি, মটরশুঁটি, বিচি জাতীয় খাবার, বার্লি, ওটস, লাল চাল, আটা, বাদাম। শাক-সবজি, ফল, বাদামজাতীয় খাবার শরীরে নিউটোভ্যাক্স ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডি প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, যা স্টেপটোকোক্কাস নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।

চা: গ্রিন টি, সাজনা পাতার চা, লাল চা। এসব চায়ে এল-থেনিন এবং ইজিসিজি নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনেক যৌগ তৈরি করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। এ ছাড়া ভিটামিন বি-৬, জিংক–জাতীয় খাবার (বিচি জাতীয়, বাদাম, সামুদ্রিক খাবার, দুধ ইত্যাদি) শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির কোষ বৃদ্ধি করে। তাই এ ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে।

উচ্চ মানের আমিষ জাতীয় খাবার (ডিম, মুরগি, গরু, খাসি ইত্যাদি) খাওয়া যেতে পারে পরিমাণমত। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের খুব ভালো কাজ পেতে হলে খাবার রান্নার সময় অতিরিক্ত তাপে বা দীর্ঘসময় রান্না না করে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে।

খাবারগুলো ছাড়াও নিউমোনিয়া প্রতিরোধে উচ্চ আমিষযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ ও টিস্যু দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে এবং পাশাপাশি নতুন টিস্যু তৈরি হবে। এর সঙ্গে দরকার পর্যাপ্ত ঘুম। অপর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম শরীরে কর্টিসল হরমোনের চাপ বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তাই পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।

যে খাবার বাদ দিতে হবে: সব ধরনের কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস, বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, তামাক, সাদাপাতা, খয়ের ইত্যাদি। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় বাধা দিয়ে ফুসফুসে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া ঠান্ডা খাবার, আইসক্রিম, চিনি ও চিনির তৈরি খাবার বাদ দিতে হবে। যা ভাইরাসের সংক্রমণে সহায়তা করে।

সঠিক খাবার সঠিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে প্রত্যেকের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করতে সহায়তা করা। যাতে শুধু করোনাভাইরাস নয়, সব ধরনের রোগ সংক্রমণ মোকাবিলায় আপনি শারীরিকভাবে সক্ষম থাকতে পারেন।

লেখক: ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ, মগবাজার, ঢাকা।

এসইউ/এএ/এমএস