দেশজুড়ে

আরডিএর ২০ লাখের জমি দু’লাখ টাকায় : তদন্ত ঝুলছে এখনও

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চন্দ্রিমা এলাকার আটটি সরকারি বাণিজ্যিক প্লট জালিয়াতির অনুসন্ধান চলেছে টানা ছয় বছর ধরে। পরে মামলা হলেও সেই মামলার তদন্ত ঝুলে রয়েছে আরও এক বছর ধরে। চাঞ্চল্যকর এই দুর্নীতির মামলাটির তদন্ত শেষ না হওয়ায় হতাশ অভিযোগকারী।

Advertisement

জানা গেছে, চন্দ্রিমা এলাকায় চাঞ্চল্যকর এই প্লট জালিয়াতির ঘটনা ঘটে ২০০৫ সালে। এরপর দীর্ঘ ছয় বছরের অনুসন্ধান শেষে ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আল আমিন বাদী হয়ে ওই মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয় আরডিএর সাবেক চেয়ারম্যানসহ ১০ জনকে। কিন্তু প্রায় এক বছরেও মামলার তদন্ত শেষ হয়নি।

চাঞ্চল্যকর এই দুর্নীতির মামলাটির তদন্ত শেষ না হওয়ায় হতাশ অভিযোগকারী সুমন চৌধুরী। তিনি বলেন, একটা প্রমাণিত দুর্নীতি মামলার তদন্তের নামে এভাবে সময় ক্ষেপণ হতে থাকলে কেউ দায়িত্ব নিয়ে অভিযোগ করতে এগিয়ে আসবে না। দুর্নীতিবাজরা বিচারের মুখোমুখি না হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিও থামবে না।

অভিযোগকারী সুমন চৌধুরী আরও জানান, ২০০৫ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে চন্দ্রিমা এলাকার ৮টি বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। তিনি ২০১৪ সালে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেন। এরপর ৬ জন কর্মকর্তা বদল শেষে ৬ বছর পর ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে সর্বশেষ অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক আব্দুল করিম মামলার অনুমোদন চেয়ে প্রতিবেদন দেন। অনুমোদন শেষে গত বছর ২ অক্টোবর দুদক দুর্নীতির মামলাটি দায়ের করেন।

Advertisement

মামলার অভিযোগে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাজশাহীর চন্দ্রিমা বাণিজ্যিক এলাকার ৫০ দশমিক ৬৭ কাঠা আয়তনের ৮টি বাণিজ্যিক প্লট প্রতিযোগিতামূলক দরে বরাদ্দের জন্য ‘দৈনিক নতুন প্রভাত’ নামের একটি স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হয়। আটটি প্লটের বিপরীতে মাত্র আটটি আবেদন জমা পড়ে।

তড়িঘড়ি করে আবেদনকারীদের প্রত্যেককে সাড়ে ৬ কাঠা করে আয়তনের কোটি টাকা মূল্যের একটি করে বাণিজ্যিক প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। এরই মধ্যে অতি দ্রুততার সঙ্গে মাত্র ৬ দিনের মাথায় ২০০৬ সালের ২ জানুয়ারি সাধারণ সভা ডেকে প্লট বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়।

এদিকে অভিযোগের পর দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে অভিনব উপায়ে সরকারি প্লট জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগকারী সুমন চৌধুরী ও দুদকের অনুসন্ধান তথ্যানুসারে, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত দুর্নীতি। ‘দৈনিক নতুন প্রভাত’ নামের যে পত্রিকাটিতে প্লট বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার দেখানো হয়েছিল সেটি ছিল একটি নকল কপি। একই দিনে প্রকাশিত পত্রিকাটির যেসব কপি বাজারে ছাড়া হয়েছিল সেইসব পত্রিকাতে বিজ্ঞপ্তিটি ছিল না। পূর্বপরিকল্পিতভাবে নকল পত্রিকা ছাপিয়ে বিজ্ঞপ্তিটি গোপন করা হয় যাতে প্লটগুলির জন্য একাধিক আবেদনকারী আবেদন জমা করতে না পারেন। যারা আবেদন করেছিলেন এবং বরাদ্দ পেয়েছেন তারাও এই দুর্নীতির সঙ্গে আগে থেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন। এই দুনীর্তির ক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়।

সূত্র মতে, ওই সময় প্রতি কাঠা জমি মাত্র ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয় গ্রহীতাদের। যদিও ওইসময় চন্দ্রিমা এলাকার জমির প্রতি কাঠার মূল্য ছিল ২০ লাখ টাকা করে। অস্বাভাবিক এই কম দরে গোপনে প্লটগুলি বরাদ্দের ফলে কাঠা প্রতি সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয় ১৮ লাখ টাকা করে। মোট ৫০ কাঠা জমিতে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ কোটি টাকা।

Advertisement

দুদকের অনুসন্ধান ও মামলার অভিযোগ অনুযায়ী এই প্লট জালিয়াতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, আরডিএর সাবেক চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক এস্টেট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক, হিসাবরক্ষক মো. রোস্তুম আলী, আরডিএর উচ্চমান সহকারী পদ থেকে চাকরিচ্যুত ও বর্তমানে অন্য দুর্নীতি মামলায় কারাগারে থাকা মো. মোস্তাক আহমেদ, প্লট গ্রহীতা এনামুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শোয়েব আহমেদ সিদ্দিকী, ডা. এসএম খোদেজা নাজার বেগম, ডা. রবিউল ইসলাম স্বপন, মাহফুজুল হক ও খায়রুল আলম। এই মামলায় তাদেরকে আসামি করা হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদকের সমন্বিত রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, শিগগিরই মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হবে। তবে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হবে নাকি তাদের অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রতিবেদন দেয়া হবে তা স্পষ্টভাবে জানাননি তিনি।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/পিআর