দেশের ৩৭ জেলায় বন্যায় প্রায় ১৩ লাখ বিঘা জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে—ধান, আমন বীজতলা, সবজি, ভুট্টা, তিল, মরিচ, চীনা বাদাম, পান, পাট, কলা, লেবু ও আখ। তবে বন্যাকবলিত এই ৩৭ জেলায় অক্ষত আছে এক কোটি ৩১ লাখ ১৫ হাজার ২৮০ বিঘা জমির ফসল।
Advertisement
৩৭ জেলায় বন্যায় প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ১১ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের (অতিবৃষ্টি, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি) কারণে ১২ লাখ ৮১ হাজার ৫১৫ দশমিক ৮৫ বিঘা জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোনা আমন ধান। এ ধানের চার লাখ ৩৯ হাজার ২০৬ দশমিক ১২ বিঘা জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরই রয়েছে আউশ ধান, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৩ দশমিক ১ বিঘা জমি। ক্ষতির দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাট। এ ফসলের জমির পরিমাণ দুই লাখ এক হাজার ৪২৮ দশমিক ৫৫ বিঘা। চতুর্থ স্থানে রয়েছে রোপা আমন ধান। এর পরিমাণ এক লাখ ৩১ হাজার ৪৯৪ দশমিক ৪১ বিঘা। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে সবজি। এক লাখ সাত হাজার ৫৬০ দশমিক ৫০ বিঘা সবজির জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া আমন বীজতলা ৭৭ হাজার ৮৯৭ দশমিক ১৬ বিঘা, ভুট্টা ১১ হাজার ১৮২ দশমিক ৫৯ বিঘা, তিল ১৩ হাজার ৫৫০ দশমিক ৫৮ বিঘা, মরিচ পাঁচ হাজার ৪ দশমিক ৯ বিঘা, চীনা বাদাম ৭৪ দশমিক ৭ বিঘা, পানের বরজ এক হাজার ৪৩১ দশমিক ৯ বিঘা, কলা বাগান দুই হাজার ১৪৩ দশমিক ৪৯ বিঘা, লেবু দুই হাজার ৯৪১ দশমিক ২ বিঘা এবং আখের ১৩ হাজার ৩৭১ দশমিক ৩ বিঘা জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই বন্যায়।
Advertisement
গত ৪ আগস্ট কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এক অনুষ্ঠানে বলেন, চলমান বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা চরম অনিশ্চয়তায় আছেন। বন্যার পানি নেমে গেলে জরুরি ভিত্তিতে কৃষি পুনর্বাসন ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কাজ করতে হবে। সেজন্য বীজ, সারসহ বিভিন্ন প্রণোদনা কার্যক্রম বেগবান, তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য ইতোমধ্যে ১৪টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও নিয়মিত কাজের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের প্রত্যেকটি সংস্থার সাথে সমন্বয় করে মাঠ পর্যায়ের কাজের তদারকি করতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরজ্জামান গত বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জ জেলার সদর, ঘিওর, দৌলতপুর ও টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এ অঞ্চলের বন্যা কবলিত স্থানীয় কৃষক-কৃষাণীদের খোঁজখবর নেন তিনি। পানি নেমে গেলে কোন কোন কৃষক জমিতে কী রোপণ করবেন তা জানান। সেখানে কৃষকদের মাঝে বর্ধনশীল হাইব্রিড সবজির বীজ, শসাসহ অন্যান্য সবজির বীজ বিতরণ করেন সচিব। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র মানিকগঞ্জের সকল কৃষি কর্মকর্তা ও টাঙ্গাইলের নাগরপুরের সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক মতবিনিময় সভা করেন।
উল্লেখ্য, খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে ও চলমান বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৭টি জেলার সবজি ও আমন ধান চাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বীজ, সারসহ বিভিন্ন প্রণোদনা কার্যক্রম বেগবান, তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১৪টি কমিটি কাজ শুরু করেছে। কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের নির্দেশে এসব তদারকি ও সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়েছে। কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান কমিটির সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছেন। সমন্বয়ের দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।
এফএইচএস/এইচএ/পিআর
Advertisement