মালিকানা বদলের পর দুই বছর কেটে গেলেও পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের শেয়ারহোল্ডারদের ভাগ্যের বদল হচ্ছে না। আগের বছরের ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালেও কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা কোনো লভ্যাংশ পাবেন না।
Advertisement
জীবন বীমা কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সোমবার (৩ আগস্ট) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে জানানো হয়েছে।
পরিচালনা পর্ষদের এই সিদ্ধান্ত শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয়ার জন্য বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হবে ২৬ সেপ্টেম্বর। আর রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৪ আগস্ট।
নানা অনিয়মে জড়িত থাকা অবস্থাতেই ২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় পদ্মা ইসলামী লাইফ। তালিকাভুক্তির বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ হিসেবে ৮ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়। এরপর টানা তিন বছর কোনো লভ্যাংশ না দিয়ে ২০১৬ সালে ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়।
Advertisement
এরপর ২০১৭ সালে আবারও কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। একদিকে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ না দেয়া অন্যদিকে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে ধুকতে থাকা পদ্মা ইসলামী লাইফের মালিকানা ২০১৮ সালে গোপনে পরিবর্তন হয়ে যায়।
গোপনে জীবন বীমা কোম্পানিটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা তাদের সব শেয়ার দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেয়। আইন লঙ্ঘন করেই প্রতিষ্ঠানটির ১৭ উদ্যোক্তা ও পরিচালকের হাতে থাকা প্রায় ৪২ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে ২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ‘গোপনে বিক্রি হচ্ছে পদ্মা লাইফ’ শিরোনামে জাগো নিউজে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। এরপর ৩ অক্টোবর ‘চলছে অবৈধ ব্যয়, ভাঙতে হচ্ছে বিনিয়োগ-সম্পদ’ শিরোনামে পদ্মা ইসলামী লাইফের অনিয়ম নিয়ে আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয় জাগো নিউজে।
গোপনে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম, সাইফুল আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভীন ও ছেলে আহসানুল আলম এবং তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এফিনিটি অ্যাসেটস লিমিটেড, ক্রেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড, প্যাভিলিয়ন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ইউনিটেক্স পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ও ইউনিটেক্স এলপি গ্যাস লিমিটেডের নামে পদ্মা ইসলামী লাইফের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার কিনে নেয়া হয়।
Advertisement
এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের নামে ৯ লাখ ৮০ হাজার ৪০০টি বা ২ দশমিক ৫২ শতাংশ, মোহাম্মদ সাইফুল আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৯৬০টি বা ২ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলমের নামে ১৮ লাখ ৫০ হাজার বা ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ শেয়ার কেনা হয়।
এছাড়া ক্রেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের নামে ২৬ লাখ ৯৮ হাজার ১২০টি বা ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, এফিনিটি অ্যাসেটস লিমিটেডের নামে ২৩ লাখ ৮৮ হাজার ৩২০টি বা ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ, প্যাভিলিয়ন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে ২৮ লাখ ১০ হাজার ৭২০টি বা ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, ইউনিটেক্স এলপি গ্যাসের নামে ৩০ লাখ ৯৩ হাজার ৬০০টি বা ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং ইউনিটেক্স পেট্রোলিয়ামের নামে ২৫ লাখ ৩২ হাজার ৭৮০টি বা ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার কেনা হয়।
শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপের দখলে যাওয়ার পরও লভ্যাংশ না দেয়ার সংস্কৃতিতে রয়েছে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স। ২০১৮ সালে কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেয়া কোম্পানিটি ২০১৯ সালের ব্যবসার ওপরেও কোনো লভ্যাংশ দেবে না।
ডিএসই জানিয়েছে, লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর কারণে আজ কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সার্কিট ব্রেকার থাকবে না। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বেধে দেয়া ফ্লোর প্রাইসের নিচে শেয়ার দাম নামতে পারবে না।
এমএএস/এফআর/এমএস