মানুষের ভ্রমণের পথে বিপ্লব ঘটিয়েছে ট্রেন এবং রেলপথ। ট্রেন আবিষ্কার হওয়ার আগে হয়তো মানুষকে ঘোড়া অথবা গাড়ি খুঁজে ক্লান্তিকর ভ্রমণ করতো হতো। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার জন্য এসব বাহনও পাল্টাতে হতো। তারপর সেখান থেকে সোজা বাড়ি।
Advertisement
কিন্তু মানুষের ভ্রমণের ক্লান্তি ও একঘেয়েমি দূর করেছে ট্রেন। সহজ করেছে চলার পথ। মানুষ এটাতে চেপে বসার কয়েক ঘণ্টা অথবা দিনের মধ্যেই তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে। শুধু কি তাই, ট্রেনে বসে আপনি গেম খেলা, বই পড়া, লেখালেখি, চায়ের কাপে চুমুক কিংবা কোনও খুনের রহস্যের সমাধানও করতে পারেন অনায়াসে। ট্রেন ভ্রমণের পুরোটা সময় হতে পারে উপভোগ্য কিংবা মজার।
স্বাভাবিকভাবে যেখানে ট্রেন রয়েছে, সেখানে স্টেশনও রয়েছে; তবে সেগুলো সমানভাবে তৈরি করা হয়নি। বর্তমানে বিশ্বে অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল অনেক রেলওয়ে স্টেশন আছে। অনেকেই এসব স্টেশনের সৌন্দর্যদর্শনে মুগ্ধ হয়ে যান। চলুন বিশ্বের কয়েকটি নান্দনিক ট্রেন স্টেশন সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
এক. প্যারিসের গারে ডু নর্ড
Advertisement
এই রেল স্টেশনে বেশ কিছু সাধারণ প্রচলিত নিয়ম চালু রয়েছে। শহরটি যেমন সুন্দর, রেল স্টেশনটিও তেমনই অসাধারণ। বিশ্বের চমকপ্রদ শহরগুলোর একটি হলো প্যারিস। গারে ডু নর্ড রেল স্টেশনটি ১৮৬৪ সালে চালু করা হয়। সৌন্দর্যের দিক থেকে এই রেল স্টেশনটিও অত্যন্ত চমকপ্রদ।
দুই. কানাজাওয়া রেল স্টেশন, জাপান
১৮৯৮ সালে সংস্কারের আগে এই রেল স্টেশনটিতে নান্দনিকতার ছোঁয়া তেমন না থাকলেও এর স্থপতিরা সৌন্দর্য বর্ধনের ক্ষেত্রে সত্যিই নিজেদের ছাড়িয়ে গেছেন। সংস্কারের পর প্রথম দর্শনে লোকজনের পিলে চমকে যেত। কারণ এই রেল স্টেশনের অত্যাধুনিক নকশাটি পুরোনো দুর্গের শহরের অবয়বের চেয়ে একেবারে ভিন্ন ধরনের ছিল।
তিন. সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল, লন্ডন
Advertisement
ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের যে অল্প কয়েকটি রেল স্টেশন তৈরি হয়েছিল, লন্ডনের প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল সেসবের একটি। ‘রেলপথের মন্দির’ হিসেবে পরিচিত এই রেল স্টেশন ১৮৬৮ সালে খুলে দেয়া হয়। দু’টি বিশ্বযুদ্ধেও এটি টিকে গেছে এবং একাধিকবার এর সংস্কারও করা হয়েছে। কিন্তু আপনি এখনও এই রেল স্টেশনের পুরোনো হাড় দেখতে পাবেন।
চার. অ্যাটোচা স্টেশন, মাদ্রিদ
জঙ্গলে আপনাকে স্বাগত। এটাই মাদ্রিদের অ্যাটোচা স্টেশন। এই রেল স্টেশনের মাঝপ্রান্তে আছে একটি স্নিগ্ধ-কোমল বাগান। শত শত প্রজাতির গাছপালা এবং বিরল কিছু প্রাণী সেখানে বসবাস করে। মাদ্রিদের এই রেল স্টেশন এক কথায় বেশ দুর্দান্ত।
পাঁচ. গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনাল, নিউইয়র্ক
নিউইয়র্কের সবচেয়ে স্মরণীয় স্মৃতিচিহ্ন গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনাল রেল স্টেশন ১৯১৩ সালে নির্মাণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্র নিউইয়র্কের এই রেলস্টেশন। প্রত্যেক বছর লাখ লাখ পর্যটক এই স্থাপনা পরিদর্শনে আসেন এবং এটিই বিশ্বের সর্ববৃহৎ রেল স্টেশন বলে প্রত্যাশা করা হয়।
ছয়. অ্যান্টওয়ার্প সেন্ট্রাল, বেলজিয়াম
১৯০৫ সালে যখন অ্যান্টওয়ার্প সেন্ট্রাল খুলে দেয়া হয়, তখন কেউ কল্পনা করতে পারেনি যে, একদিন এটিই বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর রেল স্টেশন হতে যাচ্ছে। সেখানে গেলে নান্দনিক এই স্টেশনের স্থাপত্যশৈলীর অনন্য সব বিচ্ছুরণ আপনি দেখতে পাবেন।
পাথর, গ্লাস ও বিভিন্ন ধরনের ধাতবের তৈরি এই স্টেশনে ৭৫ মিটার উঁচু একটি গম্বুজও আছে। অ্যান্টওয়ার্প রেলওয়ে স্টেশন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ২০১১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুরস্কার লাভ করে।
সাত. ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস, মুম্বাই
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। এই সংস্থাটি বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় কোনও স্থাপনাকে যুক্ত করার ক্ষেত্রে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করে। এই স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে একটু বেশিই যোগ্য ছিল ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস। অনবদ্য স্থাপত্যশৈলীর এই শিল্পনিদর্শন ২০০৪ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের মর্যাদা লাভ করে।
ফ্রেডরিক উইলিয়াম স্টিভেন্স নামের এক স্থপতির নকশা অনুযায়ী- ১৮৮৭ থেকে ৮৮ সালের মধ্যে এটি নির্মাণ করা হয়। স্টেশনটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় ১০ বছর। ভারতের সেই সময়ের শাসক ব্রিটিশ রাণী ভিক্টোরিয়ার শাসনের স্বর্ণজয়ন্তী বর্ষে (১৮৮৭ সাল) এটি নির্মাণ হয় বলে স্টেশনটির নামকরণ করা হয়েছিল ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস।
১৯৯৬ সালে মুম্বাই সরকার সপ্তদশ শতাব্দীর মারাঠা সম্রাট ছত্রপতি শিবাজির নামানুসারে স্টেশনটির নাম পরিবর্তন করে।
এসআইএস/পিআর